ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

ওয়াশিংটন পোস্টের বিশ্লেষণ

কুর্দী ইস্যুতে দোটানায় যুক্তরাষ্ট্র

প্রকাশিত: ০৬:০২, ২ সেপ্টেম্বর ২০১৬

কুর্দী ইস্যুতে দোটানায় যুক্তরাষ্ট্র

সিরিয়ার কুর্দী বাহিনীকে অস্ত্রসজ্জিত করতে পেন্টাগনের সিদ্ধান্ত দেশটির উত্তরাঞ্চলে বড় ধরনের সুফল বয়ে এনেছে। সেখানে ইসলামিক স্টেট সাম্প্রতিক মাসগুলোতে পিছু হটে চলেছে। মার্কিন বিমানবাহিনীর সমর্থনপুষ্ট কুর্দী বাহিনী অভিযান চালিয়ে চলতি মাসে মানবিজ শহরসহ চরমপন্থী দলটির ‘খিলাফতের’ গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলো দখল করতে সমর্থ হয়। এরপর গত সপ্তাহে তুর্কীদের ট্যাঙ্ক ও যুদ্ধবিমান সিরিয়ায় প্রবেশ করে তাদের দীর্ঘদিনের শত্রু কুর্দীদের আক্রমণ শুরু করে। কিন্তু এরপর যা ঘটেছিল, তাতে কুর্দী নেতারা স্তম্ভিত হয়ে পড়েন। তাদের আমেরিকান মিত্ররা তুর্কীদের পক্ষ নেয় এবং কুর্দী বাহিনীকে কষ্টার্জিত ভূখ- তুর্কীদের হাতে ছেড়ে দেয়ার নির্দেশ দেয়। সিরিয়ায় কুর্দীদের স্বঘোষিত সরকারের এক সাবেক কর্মকর্তা ইদ্রিস নাগান বলেন, দুর্ভাগ্যের কথা, কুর্দী মিত্ররা সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করে অনেক বিজয় অর্জন করায় আমরা যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে আরও কিছু প্রত্যাশা করেছিলাম। তিনি বলেন, আমরা প্রত্যাশা করেছিলাম, তারা আমাদের সমর্থন করবে এবং তারা তুরস্ককে আমাদের আক্রমণ করতে দেবে না। তিনি উত্তরাঞ্চলীয় কোবানি শহরে বাস করছেন। ওয়াশিংটন বিশ্বাসঘাতকতা করছে- এমন অনুভূতি সিরীয় কুর্দী অঞ্চলগুলোতে দানা বেঁধে উঠছে। এতে ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে লড়াই দুর্বল হয়ে পড়তে পারে। তুর্কী বাহিনী উত্তর সিরিয়ায় কুর্দীদের বিরুদ্ধে লড়াই বন্ধ করুক বলে ওবামা প্রশাসন দাবি জানানোতে তুরস্কেও ব্যাপক ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। চলতি সপ্তাহে সরকারপন্থী এক পত্রিকায় কড়া ভাষায় লেখা এক সম্পাদকীয়ের শিরোনামে কুর্দী মিলিশিয়া ও ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে তুরস্কের আত্মরক্ষার অধিকার রয়েছে বলে ঘোষণা করা হয়। শিরোনামে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র এটি পছন্দ করতে বা সঙ্গে নিতে পারে। দীর্ঘদিনের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় তীব্র ও জটিল হয়ে পড়া এক লড়াইয়ে যুক্তরাষ্ট্র এখন দুই গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার কুর্দী বাহিনী ও এর ন্যাটো মিত্র তুরস্কের মধ্যে কোন একপক্ষকে বেছে নেয়ার কঠিন পরিস্থিতিতে পড়েছে। দুইপক্ষের লড়াই বন্ধ করতে মার্কিন আহ্বান সত্ত্বেও উভয়ই সিরিয়ায় নিজ নিজ স্বার্থ রক্ষা করার সঙ্কল্প ব্যক্ত করেছে। এতে মার্কিন প্রভাবের সীমাবদ্ধতা ও সিরীয় যুদ্ধ যে কতখানি পরস্পরবিরোধী আকাক্সক্ষার প্রতিদ্বন্দ্বিতা, তা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক এ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক বিশেষজ্ঞ এ্যান্টনি কোর্ডসম্যান বলেন, আমরা যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে ইসলামিক স্টেটকে প্রধান হুমকি হিসেবে দেখি। কিন্তু অন্য প্রত্যেকের জন্য এটি জাতিগত বা সম্প্রদায়গত শক্তি ও পরিচয়ের লড়াই। তিনি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এ পরিস্থিতিতে কেবল এতটুকুই করতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র তুরস্ককে এর জাতীয় স্বার্থ পরিত্যাগে রাজি করাতে যাচ্ছে না, আর সে কোন কুর্দী উপদলকে এর স্বার্থে কাজ না করতে রাজি করানোর চেষ্টাও করবে না। মঙ্গলবার মার্কিন কর্মকর্তারা বলেন, উভয়পক্ষ কোন সামরিক অস্ত্রবিরতিতে সম্মত হয়েছে। কিন্তু বুধবার সিনিয়র তুর্কী কর্মকর্তারা কুর্দী বাহিনীর ওপর আক্রমণ চালিয়ে যাওয়ার সঙ্কল্প ব্যক্ত করেন। তারা কখনও কুর্দীদের সঙ্গে কথা বলবেন না বলে জানান। কুর্দী বাহিনীকে সিরিয়ায় জঙ্গীদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সবচেয়ে কার্যকর অংশীদার হিসেবে দেখা হয়। পেন্টাগন এর মিত্রদের অস্ত্রসজ্জিত ও প্রশিক্ষণ দান করতে কোটি কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছে। কুর্দীরা ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে, বিশেষত রাকা শহরকে মুক্ত করার প্রত্যাশিত অভিযানে একই তাগিদ ও উৎসাহ নিয়ে লড়াই চালিয়ে যাবে কিনা, সেটিই এখন প্রশ্ন। রাকা জঙ্গীদের স্বঘোষিত খিলাফতের রাজধানী। -ওয়াশিংটন পোস্ট
×