ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

জিকা ভাইরাস শনাক্তে বিমানবন্দরে তদারকি জোরদার

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ২ সেপ্টেম্বর ২০১৬

জিকা ভাইরাস শনাক্তে বিমানবন্দরে তদারকি জোরদার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ জিকা ভাইরাস শনাক্ত করতে বিমানবন্দরে তদারকি জোরদার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশীদের জিকা ভাইরাসে সংক্রমণের প্রেক্ষিতে তিনি এ কথা বলেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, জিকা ভাইরাস শনাক্ত করতে বিমানবন্দরে স্ক্রিনিং জোরদার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার থেকে স্ক্রিনিং ছাড়া কেউ দেশে ঢুকতে পারছেন না। এদিন সকালে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পরিদর্শন করেছেন বলেও জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী। এক বিবৃতিতে সিঙ্গাপুরের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, সিঙ্গাপুরে অন্তত ১০ বাংলাদেশী মশাবাহিত রোগে জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। এ পর্যন্ত তারা ১১৫ জনের শরীরে জিকা ভাইরাসের উপস্থিতি পেয়েছে, যাদের বেশিরভাগই বিদেশ থেকে যাওয়া নির্মাণ শ্রমিক। আক্রান্ত সবাই সিঙ্গাপুরের একই অঞ্চলের বাসিন্দা বা একই এলাকায় কাজ করেন বলে জানায় সিঙ্গাপুরের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। গত বছর ব্রাজিল ও আশপাশের দেশগুলোতে জিকার প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়ার পর এ বছর ফেব্রুয়ারিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জিকার কারণে বিশ্বজুড়ে জরুরী অবস্থা ঘোষণা করে। এর পর জিকা ভাইরাস শনাক্ত করতে ও সংক্রমণ ঠেকাতে দেশের সব আন্তর্জাতিক প্রবেশদ্বারে চিকিৎসক দল নিয়োগ করা হয়। বিশেষ করে জিকা ভাইরাস স্ক্রিনিং মনিটর করতে শাহজালাল বিমানবন্দরে ওয়েব ক্যামেরা স্থাপন করার কথা জানায় সরকার। এছাড়া দেশে কেউ মশাবাহিত জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত হলে সরকার তার চিকিৎসার ভার নেবে বলেও তখন স্বাস্থ্যমন্ত্রী নিশ্চিত করেন। এর তিন মাসের মাথায় সিঙ্গাপুরে প্রথম জিকা ভাইরাস আক্রান্ত রোগী করা শনাক্ত হয়। ৪৮ বছর বয়সী ওই ব্যক্তি ব্রাজিল ভ্রমণে গিয়ে ভাইরাসে আক্রান্ত হন। গত শনিবার দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এক মালয়েশীয় নারীর সিঙ্গাপুরে এসে জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর প্রকাশ করলে বিষয়টি নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়। যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজেস কন্ট্রোল বলছে, সিঙ্গাপুরের জিকা পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি ঘটায় শহরটিকে তারা গর্ভবতী নারীদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ শহরের তালিকায় যুক্ত করেছে। স্বাস্থ্য অধিদফতর জানায়, ‘জিকা’ নামটি নেয়া হয়েছে উগান্ডার জিকা বন থেকে। ১৯৪৭ সালে বানরের দেহে এই সংক্রামক এজেন্টের উপস্থিতি শনাক্ত করা হয়। ১৯৫২ সালে এর নাম দেয়া হয় জিকা ভাইরাস। জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত হলে সাধারণত জ্বর, চামড়ায় লাল ফুসকুড়ি, গোড়ালিতে ব্যথা, চোখ লাল হয়ে যাওয়াÑ এসব লক্ষণ দেখা দেয়। এছাড়া পেশি, মাথায়ও ব্যথা হতে পারে। জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত প্রতি পাঁচজনের মধ্যে একজনের অসুস্থ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। শিশুদের ‘মাইক্রোসেফালি’ রোগ হওয়ার কারণ জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত গর্ভবতী মা। কিন্তু তার কোন উপসর্গ আগে থেকে দেখা যাবে না। গর্ভবতী মা মশাবাহিত এ রোগে আক্রান্ত হলে তার অনাগত শিশুর মাথা স্বাভাবিকের চেয়ে ছোট হতে পারে, মস্তিষ্কের গঠন থাকতে পারে অপূর্ণ। এ রোগকে বলে মাইক্রোসেফালি। এই রোগ হলে শিশুদের মস্তিষ্কের গঠন ঠিকমতো হয় না। ফলে শিশুর বুদ্ধি প্রতিবন্ধী হওয়া, শারীরিক বৃদ্ধি অস্বাভাবিক বা বিলম্বিত হওয়া থেকে শুরু করে অকালে মারা যাওয়ার আশঙ্কাও বেড়ে যায়। এই রোগের চিকিৎসায় এখনও কোন প্রতিষেধক আবিষ্কৃত হয়নি। ফলে সতর্ক থাকাটাই হবে সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ। অবশ্য এ রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার ঘটনা বিরল। প্রতিরোধের মূলমন্ত্রই হলো এডিস মশার বিস্তার রোধ। এই মশা যেন কামড়াতে না পারে তার ব্যবস্থা করা। স্বচ্ছ-পরিষ্কার পানিতে এরা ডিম পাড়ে। ময়লা-দুর্গন্ধযুক্ত ড্রেনের পানি এদের পছন্দসই নয়। তাই এডিস মশার ডিম পাড়ার উপযোগী স্থানগুলোকে পরিষ্কার রাখতে হবে। একই সঙ্গে মশা নিধনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। একমাত্র সচেতনতা ও প্রতিরোধের মাধ্যমেই এর হাত থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। গত মার্চে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, চট্টগ্রামের এক ব্যক্তির রক্তের পুরনো নমুনায় জিকা ভাইরাসের অস্তিত্ব পেয়েছে জাতীয় রোগ পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা আইইডিসিআর। সঠিক সময়ে দুধপানে ৩১ শতাংশ নবজাতকের মৃত্যুরোধ হয় ্॥ জন্মের ১ ঘণ্টার মধ্যে শিশুকে মায়ের বুকের শাল দুধ পান করালে শতকরা ৩১ ভাগ নবজাতকের মৃত্যুরোধ হতে পারে। পূর্ণ ৬ মাস বয়স পর্যন্ত মায়ের দুধ পান করালে ১৩ শতাংশ শিশুমৃত্যু এবং ৬ মাস বয়সের পর মায়ের দুধের পাশাপাশি ঘরে তৈরি বাড়তি খাবার খাওয়ানোর অভ্যাস করলে শতকরা ৬ ভাগ শিশুমৃত্যু হ্রাস করা সম্ভব। বৃহস্পতিবার রাজধানীর একটি হোটেলে মাতৃদুগ্ধ পানের প্রচার ও প্রসারে সংসদ সদস্যদের অংশগ্রহণে আয়োজিত আলোচরা সভায় এক গবেষণাপত্রে এসব কথা বলা হয়। বাংলাদেশ ব্রেস্ট ফিডিং ফাউন্ডেশনের চেয়ারপার্সন ড. এস কে রায় এ গবেষণাপত্র উপস্থাপন করেন। এতে দেখা যায়, যেসব শিশু মায়ের দুধ পান করেনি তাদের তুলনায় যারা নির্ধারিত সময় পর্যন্ত মাতৃদুগ্ধ পান করেছে তাদের বুদ্ধিমত্তা গড়ে ২ দশমিক ৬ গুণ বেশি। এতে আরও বলা হয়, দেশে প্রতিদিন পাঁচ বছরের কম বয়সী ২৫০ জন শিশু অপুষ্টিতে প্রাণ হারাচ্ছে। শিশু পুষ্টি পরিস্থিতি বিবেচনায় বিশ্বের সবচেয়ে খারাপ অবস্থার ৪টি দেশের মধ্যে অন্যতম বাংলাদেশ। জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পীকার এ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বী মিয়ার সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ডাঃ আ ফ ম রুহুল হক এমপি, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী মশিউর রহমান রাঙ্গা, সাবেক প্রতিমন্ত্রী আ খ ম জাহাঙ্গীর হোসাইন, সংসদ সদস্য ওয়ারেসাত হোসেন বেলাল প্রমুখ। মোহাম্মদ নাসিম বলেন, বাংলাদেশে মাতৃমৃত্যুর হার কমেছে। মাতৃদুগ্ধ পানেও আমরা এগিয়ে রয়েছি। আসছে অক্টোবর বা নবেম্বর মাসে জেলা ও গ্রাম পর্যায়ে মাতৃদুগ্ধ পানের ব্যাপকতর প্রচার ও প্রসারে জেলা ও গ্রাম পর্যায়ে সেমিনারের উদ্যোগ নেবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। স্বাস্থ্যক্ষেত্রে বাংলাদেশ এগিয়ে রয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী সংসদ সদস্যদের নিজ নিজ এলাকায় গিয়ে মায়েদের সঙ্গে কথা বলার ও স্বাস্থ্য বিষয়ক পরামর্শ দেয়ার আহ্বান জানান।
×