ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনায় খালেদা জিয়া

আওয়ামী লীগ যেসব চুক্তি করে যাচ্ছে তার সবই দেশবিরোধী

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ২ সেপ্টেম্বর ২০১৬

আওয়ামী লীগ যেসব চুক্তি করে যাচ্ছে তার সবই দেশবিরোধী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আওয়ামী লীগ সরকার যেসব চুক্তি করেছে বা করে যাচ্ছে তার সবই দেশের স্বার্থবিরোধী বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। বৃহস্পতিবার বিকেলে বিএনপির ৩৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, রামপাল বিদ্যুত প্রকল্প দেশের পক্ষে বা জনগণের স্বার্থের জন্য নয়। খালেদা জিয়া বলেন, দেশের উন্নয়নের কথা বলে আওয়ামী লীগ সরকার কোন উন্নয়নই করেনি। ইতোপূর্বে আওয়ামী লীগ ফারাক্কা চুক্তি করেছে। এটির ফল ভাল হয়নি। এরপর একের পর এক চুক্তি এই সরকার করে গেছে যার একটিও জনগণের জন্য নয়। এখন রামপাল করছে এটিও দেশের পক্ষে বা জনগণের স্বার্থের জন্য নয়। সমস্ত কিছু দেশের স্বার্থবিরোধী। এসব চুক্তির বোঝা একদিন বহন করতে হবে যুব সমাজকে। বিএনপি চেয়ারপার্সন বলেন, রামপালে বিদ্যুতকেন্দ্র নির্মাণের প্রতিবাদে যে সংবাদ সম্মেলন করেছিলাম তার অনেক সমালোচনা করেছে সরকার। তবে কোন পয়েন্টের সদুত্তর তারা দিতে পারেনি। তিনি বলেন, দেশের স্বার্থে সুন্দরবনের পাশে কয়লা বিদ্যুতকেন্দ্র হওয়া উচিত নয় এবং তা করা হলে অনেক ক্ষতি হবে। সুন্দরবন শেষ হয়ে যাবে। পৃথিবীর কম দেশে এমন বন রয়েছে। অনেক দেশে এত সুন্দর বন নেইও। খালেদা জিয়া বলেন, আমি কখনও বলিনি বিদ্যুতকেন্দ্র বন্ধ রাখতে হবে। যে জায়গায় ক্ষতি হয় সেখানে না করার কথা বলেছি। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো পরিবেশ নিয়ে অনেক উদ্বিগ্ন, তাই তিনটি সংস্থা বিদ্যুতকেন্দ্র নির্মাণের জন্য টাকা দেয়নি। তিনি বলেন, একই প্রজেক্ট ভারতে হওয়ার কথা ছিল কিন্তু জনগণের প্রতিবাদের মুখে তা বাতিল করতে বাধ্য হয়েছে সে দেশের সরকার। কারণ, তারা জনগণের ভোটে নির্বাচিত। কিন্তু বাংলাদেশে এর চেয়েও খারাপ প্রজেক্ট নিয়ে আসা হচ্ছে। লাভ হলে ভারতের সঙ্গে ভাগ হবে আর লোকসান হলে আমাদের ওপর পড়বে। এটা কেমন করে হয়? বিএনপি চেয়ারপার্সন বলেন, এ সরকার একেকটা উন্নয়ন প্রকল্প নেয়, আর অর্থ বাড়ে। নেতারা কমিশন খায় এবং টাকা চলে যায় দেশের বাইরে। রামপাল বিদ্যুত প্রকল্প হলে সুন্দরবন শেষ হয়ে যাবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, প্রকল্পটি সেখানে না করার জন্য বার বার বলা হচ্ছে। কিন্তু তারা শুনছেন না। তিনি বলেন, পদ্মা সেতুর বাজেট বেড়ে গেছে। এই বাজেট বেড়ে যাওয়ার কারণ কী? আসলে এখানে কমিশনের ব্যাপার আছে। কমিশনের টাকা চলে যায় দেশের বাইরে। খালেদা জিয়া বলেন, মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী আওয়ামী লীগ গণতন্ত্র শেষ করে দিয়েছিল। পরে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনেন। তিনিই দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র চালু করেন।। দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে খালেদা জিয়া বলেন, দেশে ভোটের অধিকার ও গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার আন্দোলনে শরিক হতে হবে। এ জন্য সবাইকে প্রস্তুতি নিতে হবে। তিনি বলেন, স্বাধীন দেশকে যেভাবে গড়ে তোলার কথা, সে সময়কার সরকার তা করতে ব্যর্থ হয়। এতে অল্প সময়ের মধ্যে দেশে নেমে আসে অরাজকতা। সৃষ্টি করতে হয়েছে রক্ষীবাহিনী। তখন দেশ নিয়ে কোন চিন্তা ছিল না। তারা ভেবেছিলেন আমরা ক্ষমতায় আছি, যা ইচ্ছে তাই করতে পারি। খালেদা বলেন, শেখ মুজিব দেশ থেকে গণতন্ত্র দূর করে বাকশাল কায়েম করল। আর জিয়াউর রহমান আসার পর গণতন্ত্র আনলেন। আপনারা যদি সে সময়কার মন্ত্রিসভার ক্যান্ডিডেটদের দেখেন, দেখবেন তারা সবাই সুযোগ্য ও ভাল লোক ছিলেন। যে দেশে গণতন্ত্র হারিয়ে গিয়েছিল সে দেশে তিনি গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনলেন। তিনি সবাইকে রাজনীতি করার সুযোগ দিয়েছিলেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তিনিই নির্বাচন দেয়া শুরু করলেন। জিয়াউর রহমান সবার সঙ্গে কথা বলতেন। কৃষক, শ্রমিক থেকে শুরু করে বুদ্ধিজীবী সবার কথা তিনি শুনতেন এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতেন। আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও ঢাকা মহানগর আহ্বায়ক মির্জা আব্বাস বলেন, এ সরকারের পতন কেউ ঠেকাতে পারবে না। দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, হতাশ হওয়ার কিছু নেই। ভাল সময় সামনে আসছে। আওয়ামী লীগে কিছু হাইব্রিড নেতা রয়েছে উল্লেখ করে মির্জা আব্বাস বলেন, তারা খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে নিয়ে খারাপ ভাষায় কথা বলে। তিনি বলেন, ‘জয়কালে ক্ষয় নাই, মরণকালে ওষুধ নাই’। বিএনপির ওপর জুলুম-নির্যাতন হচ্ছে এটা সত্য তবে নেতাকর্মীদের নিঃশেষ করতে পারবে না সরকার। বিএনপি ধ্বংস হওয়ার জন্য সৃষ্টি হয়নি। যেদিন আওয়ামী লীগ পড়বে সেদিন তারা আর ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব) আ স ম হান্নান শাহ ও আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী। ফেসবুক ও টুইটারে যুক্ত হলেন খালেদা ॥ বিএনপি আয়োজিত আলোচনাসভায় বক্তব্য রাখার আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও টুইটারে যুক্ত হন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে এসব পেজের উদ্বোধন করেন।
×