ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সদরঘাটে টিকেটের জন্য ভিড়

ফিটনেসবিহীন লঞ্চে যাত্রী পরিবহন করলে রুট পারমিট বাতিল

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ২ সেপ্টেম্বর ২০১৬

ফিটনেসবিহীন লঞ্চে যাত্রী পরিবহন করলে রুট পারমিট বাতিল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ এবারের ঈদে ফিটনেসবিহীন লঞ্চে যাত্রী পরিবহন করলে সেই লঞ্চের রুট পারমিট বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীন নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। বৃহস্পতিবার লঞ্চের অগ্রিম টিকেট বিক্রির প্রথমদিনে সদরঘাট নদীবন্দরে আয়োজিত নৌরুটে যাত্রী নিরাপত্তা সংক্রান্ত এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়। প্রথমদিনে দেয়া হয়েছে লঞ্চের কেবিনের টিকেট। ভোর থেকেই বিপুলসংখ্যক মানুষ টিকেটের জন্য ভিড় করেন সদরঘাট নদীবন্দরে। প্রথম দিনে অনেকেই টিকেট না পেয়ে খালি হাতে ফিরেছেন। কেউ কেউ বাড়তি দাম রাখারও অভিযোগ করেছেন। আট সেপ্টেম্বর থেকে বিশেষ লঞ্চ সার্ভিস চালু করছে বিআইডব্লিউটিএ। এদিকে আজ শেষ হচ্ছে পাঁচ দিনব্যাপী ট্রেনের অগ্রিম টিকেট বিক্রি। বৃহস্পতিবার অগ্রিম টিকেট বিক্রির চতুর্থ দিনেও কমলাপুর রেল স্টেশনজুড়ে ছিল মানুষের উপচেপড়া ভিড়। অনেকেই কাক্সিক্ষত টিকেট না পেয়ে খালি হাতে বাড়ি ফিরেছেন। কেউবা টিকেট পাওয়ার আনন্দে ছিলেন উচ্ছ্বসিত। বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট কর্পোরেশন (বিআরটিসি) বাসের অগ্রিম টিকেট বিক্রির প্রথম দিনে যাত্রীদের কাছ থেকে খুব একটা সাড়া মেলেনি। দীর্ঘ অপেক্ষার পর টিকেট না পাওয়া। রাতজাগা মানুষের ভিড়। দুর্ভোগ। এসব কিছু মিলিয়ে ঈদ-উল-আযহা সামনে রেখে চতুর্থ দিনের ট্রেনের আগাম টিকেট বিক্রি শেষ হয়েছে। তবে সোনার হরিণ টিকেট হাতে পেয়ে হাসিমুখে বাড়ি ফিরেছেন অনেকেই। বৃহস্পতিবার সকালে কমলাপুর স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, ১০ সেপ্টেম্বরের ঈদযাত্রার টিকেটের জন্য বুধবারের চেয়ে মানুষের ভিড় বেড়েছে। কাউন্টারের সামনে বুধবার দুপুরের পর থেকেই লাইনে দাঁড়ান অনেকে। কিশোরগঞ্জ যাবেন কাটাবনের ব্যবসায়ী আকবর হোসেন। টিকেট পেলেও মনমতো না হওয়ায় তার কণ্ঠে একটু আক্ষেপ। বলেন, রাত জাগলেও টিকেট একটা দিল। তাও বাথরুমের পাশে। পাল্টাইয়া দিতে বললাম, দিল না। ভিড়ের সঙ্গে প্রচ- গরমে ভোগান্তিতে পড়েন টিকেট প্রত্যাশী অনেকে। বুধবার দুপুর থেকে কাউন্টারের সামনে আছেন হারুণ অর রশিদ। গরমে দুবার অজ্ঞান হয়ে পড়েন তিনি। পরে অন্যদের সেবায় সেরে ওঠেন। হারুণ বললেন, এখানে খুব গরম, একটুও বাতাস নেই। রাতে কলাপসিবল গেট বন্ধ করে দেয়ায় স্টেশনের ভেতর থেকে পানি আনতে পারিনি। খুব কষ্ট হয়েছে। এদিকে নারীদের জন্য নির্ধারিত কাউন্টারেও ব্যাপক ভিড় দেখা যায়। টিকেট দেয়ার গতি খুব ধীর বলে বিরক্তি প্রকাশ করেন অনেক নারী টিকেটপ্রত্যাশী। সকাল ৮টায় টিকেট বিক্রি শুরুর পর ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই রাজশাহীর পদ্মা ও ধূমকেতু এক্সপ্রেসের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কামরার টিকেট শেষ হওয়ার কথা জানায় রেলকর্মীরা। এত তাড়াতাড়ি টিকেট শেষ হয়ে যাওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলে অপেক্ষমাণ টিকেট প্রত্যাশীরা হৈ-চৈ শুরু করেন। পরে রেলওয়ের নিরাপত্তাকর্মীরা তাদের শান্ত করে। রেলওয়ের কমলাপুর স্টেশন ব্যবস্থাপক সিতাংশু চক্রবর্ত্তী জানান, সব স্টেশনের জন্য এসি টিকেট বরাদ্দ নেই। যারা আগে আসে তারাই বেশিরভাগ এসি টিকেট কিনে ফেলেন। তিনি বলেন, আমাদের সম্পদ সীমিত। সবাইকে এসি টিকেট দেয়া সম্ভব নয়। এসি ছাড়া অন্য টিকেট এখনও পর্যাপ্ত আছে। আশা করি সবাই পাবেন। তবে প্রতিদিনের মতো ১৯ নম্বরের ই-টিকেট কাউন্টার ছিল ফাঁকা। অথচ মোট টিকেটের ২৫ ভাগ দেয়া হয়েছে অনলাইন ও মোবাইলে। রেলওয়ে জানিয়েছে, ঈদযাত্রায় প্রতিদিন কমলাপুর থেকে ৬৯টা ট্রেন ছেড়ে যাবে। তবে রেলওয়ে ৩১টি ট্রেনের প্রায় ২৩ হাজার ৫০০ অগ্রিম টিকেট বিক্রি হচ্ছে। কমলাপুর ছাড়াও বিমানবন্দর এবং চট্টগ্রাম, সিলেট, খুলনা, যশোর ঈশ্বরদী, রাজশাহী, দিনাজপুর ও লালমনিরহাটসহ বড় স্টেশনগুলো থেকেও অগ্রিম টিকেট বিক্রি করা হচ্ছে। সোমবার সকাল ৮টা থেকে কমলাপুরের ২৩টি কাউন্টার থেকে শুরু হয় অগ্রিম টিকেট বিক্রি। এবার রেলের বহরে থাকা এক হাজার ছয়টি কোচের সঙ্গে আরও ১৪০টি কোচ যোগ করা হয়েছে। নিয়মিতভাবে চলাচলকারী ২০২টি ইঞ্জিনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আরও ১৮টি ইঞ্জিন। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ১২ বা ১৩ সেপ্টেম্বর ঈদ-উল-আযহা হবে। সে অনুযায়ী টিকেট বিক্রির সময়সূচী ঠিক করা হয়েছে। এবার ঈদে ঢাকা থেকে সারা দেশে ২ লাখ ৬০ হাজার যাত্রীর যাতায়াতের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। আগেরবার ২ লাখ ৫০ হাজার যাত্রী টেনেছিল রেলওয়ে। আজ শেষ হবে পাঁচদিনব্যাপী অগ্রিম ট্রেনের টিকেট বিক্রি। টিকেটের জন্য ভিড় সদরঘাটে ॥ কেরানীগঞ্জ সংবাদদাতা জানান, সকাল থেকেই সদরঘাট টার্মিনালে অগ্রিম টিকেট সংগ্রহে মানুষের ভিড় জমে। দেশের দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীদের যাতায়াতের সুবিধার্তে অগ্রিম টিকেট বিক্রি শুরু হয়েছে। অনেকেই প্রথম দিনে টিকেট না পেয়ে বাড়ি ফিরেছেন। টিকেট সংগ্রহে নারীদের লাইনও ছিল দীর্ঘ। এদিকে ঈদ ব্যবস্থাপনা নিয়ে সদরঘাটে বৈঠকের আয়োজন করা হয়। বিআইডব্লিউটিএ ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ভোলানাথ দে’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা অংশ নেন। বৈঠকে যাত্রী নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কয়েকটি সিদ্ধান্ত হয়। এগুলোর মধ্যে রয়েছে, লঞ্চে যেতে ঈদে ঘরমুখো মানুষের যেন কোন সমস্যা না হয় সেদিকে দেখভাল করবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। অতিরিক্ত যাত্রী তোলা বন্ধ, ফিটনেসবিহীন লঞ্চ চলতে না দেয়া, মাঝ নদীতে যাত্রী তোলা রোধ, দালাল বা প্রতারক চক্র নিয়ন্ত্রণসহ সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এজন্য পুলিশের পাশাপাশি র‌্যাব, আনসার, মহিলা পুলিশ, নৌ-পুলিশ থেকে শুরু করে জেলা পুলিশসহ গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা কাজ করবে। লঞ্চে যেন কোনভাবেই অতিরিক্ত যাত্রী বহন করা না হয় এজন্য মোবাইল কোর্টের ব্যবস্থা থাকছে। ফিটনেসবিহী লঞ্চ ও অতিরিক্ত যাত্রী বহনকারী লঞ্চের রুট পারমিট বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বৈঠকে। প্রথম দিনে লঞ্চের কেবিনের টিকেট বিক্রি হয়েছে। সাধারণ আসনের জন্য লঞ্চ ছাড়ার সময় যাত্রী তোলা হবে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ঈদে দক্ষিণাঞ্চলের প্রায় ৩৫জেলার যাত্রীরা নদীপথে যাতায়াত করেন। অনেকটা নিরাপদ যাত্রা হিসেবে তারা নদীপথকে বেছে নেন। প্রতিবছর ঈদ মৌসুমে প্রায় ৪০ লাখ যাত্রী নদীপথে পরিবহন করার কথা জানান তারা। সকাল ৯টা থেকে রাজধানীর চারটি ডিপো থেকে বিআরটিসি বাসের অগ্রিম টিকেট বিক্রি শুরু হয়েছে। বিশেষ করে দূরপাল্লার রুটগুলোতে টিকেট বিক্রি হয়েছে। তবে যাত্রীদের কাছ থেকে প্রথম দিনের টিকেট বিক্রিতে আশানরূপ সাড়া মেলেনি। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন রংপুর, দিনাজপুর, খুলনা, যশোরসহ কয়েকটি জেলার অগ্রিম টিকেট বিক্রি হচ্ছে। কমলাপুর, কল্যাণপুর, জোয়ারসাহারা, গুলিস্তান টার্মিনাল থেকে প্রথম দিনে সর্বোচ্চ ১০ ভাগ টিকেট বিক্রির কথা জানা গেছে। এবার ঈদে বিআরটিসির ৪০০ স্পেশাল বাস থাকছে জানিয়ে সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ঈদের আগে যাত্রীদের সুবিধায় সাভার-চন্দ্রা-আশুলিয়া এলাকায় ৩০টি বিআরটিসি স্ট্যান্ডবাই থাকবে। বাসগুলো যাত্রী হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন গন্তব্যে ছেড়ে যাবে।
×