ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ২ সেপ্টেম্বর ২০১৬

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

মোরসালিন মিজান ॥ ‘ব্ল্যাক আউট অমান্য করে তুমি দিগন্তে জ্বেলে দিলে/বিদ্রোহী পূর্ণিমা। আমি সেই পূর্ণিমার আলোয় দেখেছি:/আমরা সবাই ফিরছি আবার নিজস্ব উঠোন পার হ’য়ে/ নিজেদের ঘরে।’ নিজের ঘরে ফিরেছেন শহীদ কাদরী। প্রিয় কবি শেষশয্যা নিয়েছেন বাংলার মাটিতে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে মৃত্যু সংবাদ আগেই এসেছিল। বুধবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তত্ত্বাবধানে সরকারী ব্যবস্থাপনায় মরদেহ ঢাকায় পৌঁছে। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এদিন কবিকে শেষ শ্রদ্ধা জানায় সর্বস্তরের জনগণ। কত কত কাল তিনি সুদূরে কাটিয়েছেন। এর পরও তাঁকে ভুলে যাননি কবিতাপ্রেমী মানুষ। বিভিন্ন বয়সী ভক্ত, অনুরাগীরা এসেছিলেন ফুল হাতে। অভিবাদন জানিয়েছেন কবিকে। বিপুল ভালবাসায় সিক্ত হয়ে মিরপুরের শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে চিরশয্যা নিয়েছেন শহীদ কাদরী। কবি লিখেছিলেন- ভূগর্ভে, শিলার স্তরে, ধ্বংশস্তূপের তলায়/মানুষের মহৎ মৃত্যুর পর/মহত্তর অস্ত্রগুলো থেকে যায়...। কবি নেই। অস্ত্র হয়ে আছে কবিতা। মৃত্যুর পর সেসব কবিতা যেন ফিরে ফিরে আসছে। বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলির শহর ঢাকায় নতুন প্রাণ পেয়েছে কবিতা। চার কাব্যগ্রন্থ ‘উত্তরাধিকার’, ‘তোমাকে অভিবাদন প্রিয়তমা’, ‘কোথাও কোন ক্রন্দন নেই’ ও ‘আমার চুম্বনগুলো পৌঁছে দাও’ থেকে চলছে পুনর্পাঠ। কানে আসছে- ভয় নেই/আমি এমন ব্যবস্থা করবো যাতে সেনাবাহিনী/ গোলাপের গুচ্ছ কাঁধে নিয়ে/মার্চপাস্ট ক’রে চলে যাবে/এবং স্যালুট করবে/ কেবল তোমাকে প্রিয়তমা...। স্বাপ্নিক কবি ভালবাসার পৃথিবী চেয়েছিলেন। কবিতায় বার বার এসেছে তার কল্পনার রাষ্ট্র। লিখেছেন- রাষ্ট্রপ্রধান কি মেনে নেবেন আমার প্রস্তাবগুলো/পররাষ্ট্রনীতির বদলে প্রেম, মন্ত্রীর বদলে কবি/মাইক্রোফোনের বদলে বিহ্বল বকুলের ঘ্রাণ...। সরল উচ্চারণ ছুঁয়ে যাচ্ছে সাধারণ মানুষকেও। যে কবিতার নয়, সেও আলোড়িত হচ্ছে। শহর ঢাকা ঘুরে বোঝা যায়, শহীদ কাদরী শহরে ফিরেছেন। তাঁর অস্তিত্ব আগের তুলনায় আরও উজ্জ্বল! জন কেরির সফরটির কথা একটু স্মরণ করা যেতে পারে। আমেরিকার মতো মোড়ল দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলে কথা, সফর ঘিরে অনেক আগেই শুরু হয়ে গিয়েছিল আলোচনা। যে যার মতো করে বলছিলেন। অন্যতম আলোচনাটি ছিল, জন কেরি শীর্ষ যুদ্ধাপরাধী মীর কাশেমকে বাঁচানোর ফন্দি করছেন। আগে আমেরিকা থেকে যুদ্ধাপরাধী ইস্যুতে ফোন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। তখন ব্যর্থ হয়ে সশরীরে আসছেন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার মানুষ কিছুটা শঙ্কা বোধ করছিলেন বৈকি। এরই মাঝে সোমবার সকাল ১০টার কিছু পরে শহর ঢাকায় পা রাখেন তিনি। অনেকেই মজা করে বলছিলেন, গরিবের বাড়িতে হাতির পা। জায়গাও তাই বেশি লেগেছে! যেদিকে কেরি গিয়েছেন সেদিকের রাস্তাঘাট শতভাগ ফাঁকা করে ফেলতে হয়েছে। সে কী তোড়জোড় ট্রাফিক পুলিশের! একদিকে তারা ভিভিআইপির জন্য রাস্তা ফাঁকা করেছেন। অন্যদিকে দেখা দিয়েছে অসহনীয় যানজট। কেরির অন্য সব আলোচনা ভুলে সাধারণ মানুষ যানজটের আলোচনায় লম্বা সময় দিয়েছেন। দিতে হয়েছে বলতে হবে। অবশ্য, দিন শেষে জন কেরিতে মুগ্ধ হয়েছেন অনেকেই। পৃথিবীর মহাশক্তিধর রাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বিনয়, ভদ্রতাজ্ঞান নানাভাবে প্রকাশিত হয়েছে। বিশেষ করে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শন ও সেখানে তার লিখিত মন্তব্য ছানাবড়া চোখে পাঠ করেছে ঢাকাবাসী। সুন্দর মন্তব্য যেমন তেমনি হাতের লেখা। এত সুন্দর হাতের লেখা জন কেরির! এখনও বিস্ময় কাটছে না। কোরবানির ঈদ আসন্ন প্রায়। যে ক’দিন বাকি, দেখতে দেখতে চলে যাবে। এরই মাঝে শুরু হয়ে গেছে প্রস্তুতি। শুরু যে হয়ে গেছে, নানাভাবে বোঝা যায়। বৃহস্পতিবার সকালে মনিপুরীপাড়ার একটি রাস্তা ধরে হেঁটে যাওয়ার সময় দেখা গেল, দা-বঁটি ধার দেয়ার কাজ চলছে। বাইসাইকেলের মতো দেখতে যন্ত্রটি নিয়ে খোলা আকাশের নিচে বসেছেন এক যুবক। দুই প্যাডেলে পা দিয়ে চাকা ঘুরাচ্ছেন। দ্রুতগতিতে ঘূর্ণায়মান চাকার গায়ে চেপে ধরছেন দা-বঁটি, ছুরি-চাকু। তাতেই চকচক করে উঠছে জং ধরা অংশ। নতুনের মতো দেখাচ্ছে। একই ব্যক্তি শিলপাটার গায়ে খোঁড়াখুঁড়ির কাজ করছিলেন। দেখে মনে পড়ে যায়, কোরবানির ঈদের কয়েকদিন মাত্র বাকি। ধার দেয়ার কাজে ব্যস্ত যুবকের নাম মুকিত। জানাল, রাজধানী শহরে দা-বঁটি ধার করার কাজ তেমন পাওয়া যায় না। পাটা, শীল তো এক রকম উঠেই গেছে। তবু কোরবানি ঈদ সামনে রেখে হবিগঞ্জ থেকে এসেছেন। এখন অল্পস্বল্প কাজ পাওয়া যাচ্ছে। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে পুরোদমে কাজ করতে পারবে বলে আশা তার।
×