ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

রাইস ভ্যালু চেনের ওপর গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ

ধানের উৎপাদন খরচ কমাতে কৃষির যান্ত্রিকীকরণ করতে হবে

প্রকাশিত: ০৪:১৮, ২ সেপ্টেম্বর ২০১৬

ধানের উৎপাদন খরচ কমাতে কৃষির যান্ত্রিকীকরণ করতে হবে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ধানের উৎপাদন খরচ কমাতে হলে কৃষির যান্ত্রিকীকরণ করতে হবে। জমি চাষ থেকে শুরু করে ধানের চারা রোপণ, ধানগাছ কাটা এবং মাড়াই সবই যন্ত্রের মাধ্যমে করতে হবে। তা না হলে ধানের উৎপাদন খরচ কমানো যাবে না। রাইস ভ্যালু চেনের ওপর এক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশকালে গবেষক বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রফেসর ড. মনজুরুল আলম এ কথা বলেছেন। তিনি বলেন, এখন প্রায় ৯০ শতাংশ ফসলের জমি পাওয়ার টিলার ও ট্রাক্টরের মাধ্যমে চাষ করা হচ্ছে। ধান মাড়াইয়ের ক্ষেত্রেও এখন যন্ত্রের ব্যবহার অনেক বেড়েছে। বর্তমানে ৭০ শতাংশ ধান মাড়াই হচ্ছে যন্ত্র দিয়ে। তবে ধানগাছের চারা রোপণ এবং ধান কাটার ক্ষেত্রে যন্ত্রের ব্যবহার এখনও অনেক পিছিয়ে আছে। অথচ এ দুটি কাজেই এখন ধান উৎপাদন খরচের একটি বড় অংশ ব্যয় হচ্ছে। চারা রোপণ এবং ধান কাটা পুরোপুরি যান্ত্রিকীকরণ করতে পারলে ধান উৎপাদনের খরচ অনেকটা কমে আসবে। বিদ্যমান গ্রামীণ অবকাঠামোকে কৃষি যান্ত্রিকীকরণের পথে অন্যতম প্রধান বাধা বলে তিনি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, কৃষির যন্ত্রপাতি মাঠে নেয়ার জন্য গ্রামীণ রাস্তাঘাটের উন্নয়ন করতে হবে। রাস্তা না থাকলে জমিতে যন্ত্র নেয়া যাবে না। ফলে যন্ত্রের ব্যবহার সম্ভব হবে না। তবে কৃষি শ্রমিকের সঙ্কটের কারণে দেশে ধান কাটার যন্ত্রের চাহিদা ক্রমেই বাড়ছে বলে তিনি জানান। সেচ প্রসঙ্গে ড. আলম বলেন, সেচ খরচের কারণেও ধানের উৎপাদন খরচ অনেক বাড়ছে। বিশেষ করে, বোরো ধান উৎপাদনের সেচের প্রয়োজন হয়। এ কারণে আমন ধানের চেয়ে বোরো ধান উৎপাদনের খরচ বেশি পড়ে। এ ব্যয় কমাতে তিনি ‘কনজারভেটিক এ্যাগ্রিকালচার’ চালুর পরামর্শ দেন। এতে ধানের জমিতে পানির পরিমাণ অনেক কমে যাবে। উল্লেখ্য, এক কেজি ধান উৎপাদনে তিন হাজার লিটার পানির প্রয়োজন হয়। গবেষণা প্রতিবেদন বলা হয়, ধান কাটার পরপরই ৫০ শতাংশ ধান কৃষক বিক্রি করে দেয়। তাৎক্ষণিক উৎপাদন খরচ মেটাতে কৃষককে এ কাঁচা ধান বিক্রি করতে হয়। বোরো ধান আবাদ বর্ষাকালে হওয়ায় শুকানোর ব্যবস্থা না থাকায় কৃষককে ভেজা অবস্থায় ধান বিক্রি করতে হয়। এতে কৃষক ধানের দাম পায় না। অথচ কৃষক যদি শুকিয়ে ওই ধান বিক্রি করতে পারত তাহলে ভাল দাম পেত। এ প্রসঙ্গে ড. মনজুরুল আলম বলেন, কৃষকের এ সমস্যা সমাধানে ধান শুকানোর ‘ড্রায়ার’ তৈরির গবেষণা চলছে। ইতোমধ্যে একটি ড্রায়ার আবিষ্কার করা হয়েছে। এ যন্ত্র দিয়ে তিন-চার ঘণ্টায় ৫০০ কেজি ধান শুকানো সম্ভব। অর্থাৎ কৃষক দিনে অন্তত এক টন ধান শুকাতে পারবে। ভিয়েতনাম থেকে প্রযুক্তি এনে বাংলাদেশের উপযোগী করে এ ড্রায়ার তৈরি করা হয়েছে। এখন এ যন্ত্র কৃষকদের কাছে পৌঁছে দেয়া দরকার। রাইস ভ্যালু চেন স্টাডি রিপোর্টের তথ্যউপাত্ত তুলে ধরার জন্য বৃহস্পতিবার সকালে কাওরানবাজারের ডেইলি স্টার সেন্টারের কনফারেন্স রুমে এক কর্মশালার আয়োজন করা হয়। ট্রেইডক্রাফট এক্সচেঞ্জ এ কর্মশালার আয়োজন করে। এতে সভাপতিত্ব করেন ট্রেইডক্রাফট এক্সচেঞ্জের কান্ট্রি ডিরেক্টর শাহেদ ফেরদৌস। কর্মশালায় ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন প্রতিষ্ঠানের সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার এবিএম ফিরোজ আহমেদ।
×