ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

গ্রুপ চ্যাম্পিয়নে দৃষ্টি কৃষ্ণা-সানজিদাদের

প্রকাশিত: ০৪:০৫, ২ সেপ্টেম্বর ২০১৬

গ্রুপ চ্যাম্পিয়নে দৃষ্টি কৃষ্ণা-সানজিদাদের

রুমেল খান ॥ সাফল্যের জন্য প্রয়োজন পরিকল্পনা, সদিচ্ছা, পরিশ্রম এবং ভাগ্য। শেষেরটি সহায় হয়নি বলেই ২০১৪ সালে সফলতা আসেনি বাংলাদেশ অনুর্ধ ১৬ জাতীয় মহিলা ফুটবল দলের। এবার অবশ্য সব বিষয়ই এখন পর্যন্ত একসঙ্গে অনুকূলে আছে। ‘এএফসি অনুর্ধ ১৬ মহিলা চ্যাম্পিয়নশিপ বাছাইপর্ব’ আসরের কথা বলা হচ্ছে। ২০১৪ সালের অক্টোবরে আসরের বাছাইপর্ব অনুষ্ঠিত হয়েছিল এই বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামেই। সেবার ‘বি’ গ্রুপে ছিল বাংলাদেশ দল। ছয় দলের মধ্যে স্বাগতিকরা হয়েছিল তৃতীয়। ৪ খেলায় ২ জয় ও ২ হারে তাদের সংগ্রহ ছিল ৬ পয়েন্ট। বাংলাদেশের ওপরে ছিল ভারত (৯ পয়েন্ট) এবং ইরান (১২ পয়েন্ট)। শেষের দলটি কোয়ালিফাই করে উন্নীত হয়েছিল মূলপর্বে। ভারত-ইরান দুই দলের কাছেই হেরেছিল বাংলাদেশ, ১-২ ব্যবধানে। ওই দুটি ম্যাচেরই খলনায়িকা ছিলেন অস্ট্রেলিয়ান মহিলা রেফারি ক্যাথারিন মারগারিটা জ্যাকুইস। তার ত্রুটিপূর্ণ রেফারিংয়ের কারণেই বার বার কাঁদতে হয়েছিল বাংলাদেশের মেয়েদের। এবারও এই আসরের বাছাইপর্বের একটি গ্রুপের (গ্রুপ ‘সি’) খেলা হচ্ছে বাংলাদেশে। ভেন্যু একই। সেবার মূলপর্বে যেতে না পারলেও এবার কিন্তু মূলপর্বে নাম লেখানোর উজ্জ্বল সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে স্বাগতিক দলের ক্ষেত্রে। কেননা এখন পর্যন্ত খেলা ৩ ম্যাচের প্রতিটিতেই দাপটের সঙ্গে খেলে জয় কুড়িয়ে নিয়েছে বাংলাদেশ অনুর্ধ ১৬ দল। তাদের সংগ্রহ ৯ পয়েন্ট। তবে সব খেলায় জিতেও এখনও এককভাবে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে উঠতে পারেনি তারা। অবস্থান আগের মতোই দ্বিতীয়। বাংলাদেশের প্রবল প্রতিপক্ষ চাইনজ তাইপেরও সমান ম্যাচে সমান পয়েন্ট। তবে বাংলাদেশের চেয়ে ৩ গোল বেশি করে এবং গোল তফাতে এগিয়ে থাকায় তারাই এখনও রয়ে গেছে এক নম্বরে। তাইপের গোল ২১, বাংলাদেশের গোল ১৮। বাংলাদেশই এই গ্রুপের একমাত্র দল, যারা এখনও কোন গোল হজম করেনি! সেক্ষেত্রে চাইনিজ তাইপে ১ গোল খেয়েছে। তাই তাদের গোল পার্থক্য +২০, আর বাংলাদেশের +১৮। উভয় দলেরই বাকি আছে ২টি করে ম্যাচ। বাংলাদেশের চতুর্থ ও পরের ম্যাচটিই হচ্ছে এই চাইনিজ তাইপের সঙ্গে ৩ সেপ্টেম্বর। এই ম্যাচের আগে দু’দিন বিশ্রাম পাচ্ছে উভয় দল। তবে তাই বলে বসে থাকার কোন উপায় নেই গোলাম রব্বানী ছোটনের শিষ্যাদের। জয় পেতে মরিয়া দলটি চালিয়ে যাচ্ছে কঠোর অনুশীলন। অনেকের মতেই চাইনিজ তাইপের সঙ্গেই হবে বাংলাদেশ দলের জন্য ‘আসল’ ম্যাচ। কেননা শেষ ম্যাচের প্রতিপক্ষ সংযুক্ত আরব আমিরাত বেশ দুর্বল দল। তাছাড়া ২০১৪ আসরেও তাদের ৬-০ গোলে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। যেহেতু এই গ্রুপ থেকে মাত্র একটি দল যাবে মূলপর্বে এবং সে লক্ষে অনেকটাই এগিয়ে চাইনিজ তাইপে, কাজেই তাদের না হারাতে পারলে লক্ষ্যপূরণ সম্ভব হবে না স্বাগতিক দলের জন্য। যদি বাংলাদেশ চাইনিজ তাইপের সঙ্গে ড্র করে এবং শেষ ম্যাচে আমিরাতকে হারায়, এদিকে নিজেদের শেষ ম্যাচে যদি তাইপে ইরানকে হারায়, তাহলে বাংলাদেশ-তাইপে উভয় দলের পয়েন্ট সমান হলেও গোল তফাতে এগিয়ে থাকার সুবাদে তাইপে দলেরই মূলপর্বে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকবে। তবে এখানে কিছু সমীকরণও আছে বাংলাদেশের পক্ষে। যেমন তারা যদি তাইপের সঙ্গে ড্র করে এবং আমিরাতকে হারায় ও তাইপে যদি তাদের শেষ ম্যাচে ইরানের সঙ্গে ড্র করে বা হারে, তাহলে কপাল খুলতে পারে বাংলাদেশের। তবে এ বিষয়টি যেহেতু বাংলাদেশের হাতে নেই, তাই তারা এখন সরাসরিই চাইনিজ তাইপেকে হারাতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। এ আসরে বাংলাদেশ দলের এত ভাল খেলার রহস্য কী? উত্তর হচ্ছে- দলটা গত দুই বছর ধরে একসঙ্গে খেলছে (অনুর্ধ ১৪ লেভেল থেকে)। সেই সঙ্গে করছে প্রচুর পরিশ্রম। চলমান আসরে বাংলাদেশ তাদের প্রথম ম্যাচে ইরানকে ৩-০ গোলে হারিয়ে শুভসূচনা করে। দ্বিতীয় ম্যাচে ৫-০ গোলে পরাভূত করে সিঙ্গাপুরকে। তৃতীয় ম্যাচে কিরগিস্তানকে ১০-০ গোলে তুলোধুনো করে। কিরগিজদের হারানোর স্কোর লাইনটা হচ্ছে এই আসরে যেকোন দলের এক ম্যাচে সবচেয়ে বেশি গোল করার কৃতিত্ব। বাংলাদেশ দলের অধিকাংশ খেলোয়াড়ই ২০১৪ আসরেও খেলেছে। ২০১৪ আসরে তারা ৪ ম্যাচে করেছিল ৯, হজম করেছিল ৪। অথচ চলমান আসরে তারা মাত্র ৩ খেলাতেই গোল করেছে ১৮ এবং হজম করেনি একটি গোলও! দলের এই ১৮ গোল করেছে মোট আট ফুটবলার। এ পরিসংখ্যান এটাই প্রমাণ করে যে, দলটি কোন নির্দিষ্ট গোলদাতার ওপর নির্ভরশীল নয়। দলের হয়ে সবচেয়ে বেশি গোল অধিনায়ক কৃষ্ণা রানী সরকারের। সে করেছে ৫ গোল। দলের একমাত্র হ্যাটট্রিকটিও তারই। এছাড়া অনুচিং মগিনি ৪ গোল করেছে। ২টি করে গোল করেছে সিরাত জাহান মৌসুমী, মারজিয়া আক্তার এবং শামসুন্নাহার। এছাড়া ১টি করে গোল করে মারিয়া মান্দা, নার্গিস খাতুন এবং তহুরা খাতুন। দলের অন্যতম সেরা পারফর্মার সানজিদা আক্তার এখনও গোল পায়নি। হয় তো চাইনিজ তাইপের সঙ্গেই একাধিক গোল করে বসতে পারে সে, এমনটাই প্রত্যাশা ফুটবলপ্রেমীদের। এখন দেখার বিষয়, চাইনিজ তাইপেকে হারিয়ে মূলপর্বে যোগ্যতা অর্জনের পথে এক ধাপ এগিয়ে যেতে পারে কিনা ছোটনের দল।
×