ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

যশোরে নদী ও খালে দুই শতাধিক পাটা

প্রকাশিত: ০৩:৫১, ২ সেপ্টেম্বর ২০১৬

যশোরে নদী ও খালে দুই শতাধিক পাটা

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস ॥ যশোরে নাব্য থাকা অধিকাংশ নদী ও খালে পেশী শক্তিবলে দু’শতাধিক পাটা দেয়া হয়েছে। এ পাটা চলে আসছে বছরের পর বছর। এতে রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থাকা স্বার্থান্বেষী মহল মাছ থেকে লাভবান হলেও দুর্যোগে পড়ছে মানুষ। অল্প দূরত্বের ব্যবধানে নদী-খালগুলোতে তিন স্তরের পাটা দেয়ার কারণে স্রোতধারা চরমভাবে বিঘিœত হচ্ছে। শহর, পাড়ামহল্লা, লোকালয়ে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। যশোর অঞ্চলে জলাবদ্ধতার বর্তমান প্রধান কারণ অপরিকল্পিত নদী শাসন ও নদী কাঠামোর ওপর অন্যায় হস্তক্ষেপ। পাটার কারণে এবারের অতি বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে বলে প্রশাসনের দাবি। এগুলো উচ্ছেদে উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে উচ্ছেদ নোটিস দেয়া হয়েছে। একাধিক সূত্র জানিয়েছে, অনিয়মতান্ত্রিকভাবে নদী ও খালে পাটা দিয়ে মাছ আটকে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি করা হয়েছে। আর বর্ষা মৌসুম এলে বৃষ্টির পানি নিষ্কাশন হয় না। পানির স্বাভাবিক গতিধারা রোধ, স্রোতধারা বিঘিœত হওয়ায় অনাকাক্সিক্ষত দুর্যোগের মোকাবেলা করতে হচ্ছে এ এলাকার মানুষকে। যশোরের ভৈরব, বেত্রাবত্রী, মুক্তেশ্বরী, চিত্রা, কপোতাক্ষ নদের গোপীনাথপুর, গোবিন্দপুর হাজরাতলা, ঝিকরগাছা খালসহ আরও কয়েকটি নদী ও খালে একের পর এক পাটা দেয়া হয়েছে, যা সংখ্যায় দু’শতাধিক বলে সূত্রের দাবি। এর মধ্যে যশোর সদর উপজেলা প্রশাসনের দাবিমতে, যশোর সদর উপজেলার বিভিন্ন নদীতে রয়েছে ৪০টি। এর মধ্যে অনেকগুলো রয়েছে তিন স্তরের। সূত্রের দাবি, সংশ্লিষ্ট এলাকার বিশাল জনপদের মানুষ জলাবদ্ধতায় পড়ছেন এ পাটার কারণে। অবস্থা এতটাই বেগতিক যে, সরকারীভাবে নিয়ন্ত্রণে থাকা বিল-বাঁওড় ও ব্রিজের মুখেও কয়েক ডজন পাটা রয়েছে, যা বিশাল জনগোষ্ঠীকে জলাবদ্ধতায় ফেলছে। সচেতন মহলের দাবি, অপরিকল্পিত নদী শাসন, প্রভাবশালী ও ভূমিদস্যু চক্রের দখলবাজিতে নদী রূপ নিয়েছে সরু খালে। এরপর আবার পাটার পর পাটা। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে জলাবদ্ধতার বর্তমান প্রধান কারণ নদী কাঠামোর ওপর এ অন্যায় হস্তক্ষেপ। যশোর শহরের বুক চিরে প্রবাহিত ভৈরব। মেহেরপুর জেলার সুবলপুরে মাথাভাঙ্গা নদী থেকে বের হয়ে দক্ষিণাভিমুখী ভৈরব, যার প্রবাহ পথ মেহেরপুর, দামুড়হুদা, চুয়াডাঙ্গা, কোটচাঁদপুর, চৌগাছা, যশোর, বসুন্দিয়া, ফুলতলা, দৌলতপুর হয়ে মিশেছে খুলনার রূপসায়। কিন্তু ২শ’ ৪৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে ভৈরব নদের যশোর অংশেই বর্ষা মৌসুমে থাকে অনেকগুলো পাটা। ভৈরব বাঁচাও আন্দোলনের নেতারা মাঝে মাঝে উচ্চবাচ্য করলেও পেশী শক্তিবলে মহল বিশেষ প্রশাসনের সামনেই এ নদীতে অর্ধশত স্থানে এগুলো দিয়েছে। যশোর শহরের বেজপাড়া, শংকরপুর, ঝুমঝুমপুরে পানি জমে আছে চলতি বর্ষা মৌসুমে। এ মৌসুমে দু’দফার অতি বৃষ্টিতে যে জলাবদ্ধতা হয়েছে তার জন্য নদী-খালের পাটা অন্যতম কারণ। যে কারণে যশোর জেলা মাসিক উন্নয়ন ও সমন্বয় সভায় জোরেশোরে উচ্চারিত হয়েছে এ পাটা উচ্ছেদ বিষয়টি। জেলা প্রশাসক ড. হুমায়ুন কবীর পাটা উচ্ছেদের ব্যাপারে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়ে উচ্ছেদের জন্য আট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশনা দিয়েছেন। প্রাথমিক নোটিস দেয়ার পর অভিযান পরিচালনার নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে। এদিকে নদীতে পাটা ও প্রশাসনের সীমাবদ্ধতার ব্যাপারে খোঁজখবর নেয়া হয়। যশোরের সারথী মিলের পেছনে ভৈরব নদীতে, পালবাড়ি, গাজীর দরগা, খয়েরতলা এলাকায় রয়েছে কয়েকটি পাটা। যশোরের আরিচপুরের একটি সংঘবদ্ধ চক্র পাটা দিয়ে জনতার বিশাল ক্ষতি করছে। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ করেছে এলাকার লোকজন। চৌগাছার গোপীনাথপুর খাল হাজরাতলা খাল, সদর উপজেলার বড় গোবিন্দপুর ও ছোট গোবিন্দপুর খালে পাটা দেয়াসহ এ এলাকার বিভিন্ন ব্রিজ লোহার নেট, লাইলোনের নেট দিয়ে বন্ধ করা হয়েছে। এদিকে যশোর সদর উপজেলার ভৈরব নদ মুক্তেশ্বরীতে চিহ্নিত ৪০টি চক্র ৪০ পাটা দিয়ে মাছ চাষ করে চলেছে। তারা লাভবান হলেও সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। জলাবদ্ধতায় ফসল নষ্ট, পুকুর-বাঁওড় ও ঘেরের মাছ ভেসে যাওয়ার জন্য এ পাটাকেই দায়ী করছে সচেতন মহল। এ ব্যাপারে যশোর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কামরুল আরিফ জানিয়েছেন, অতি বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতার জন্য নদীতে পাটা দায়ী অনেকাংশে। তিনি বলেন, শক্তিশালী মহল এর সঙ্গে জড়িত। এর আগেও অনেককে নোটিস দিয়েও ফল হয়নি। আর নদী-খালের এসব পাটা সম্পূর্ণ অবৈধ এবং অনিয়মতান্ত্রিক। সদর উপজেলায় ইতোমধ্যে চূড়ান্ত নোটিস করা হয়েছে। তবে উচ্ছেদে কতটুকু কার্যকরী ভূমিকা রাখা সম্ভব হবে তা পরিষ্কার নয়।
×