ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সবার জন্য কাজ

প্রকাশিত: ০৩:৩৫, ২ সেপ্টেম্বর ২০১৬

সবার জন্য কাজ

২০৩০ সালের মধ্যে সবার কর্মসংস্থানের উদ্যোগ গ্রহণ সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। এই উদ্যোগ গ্রহণের জন্য সরকারপ্রধানসহ সংশ্লিষ্টরা দেশের মানুষের সাধুবাদ পাবেন। প্রথম ধাপে এক কোটি নতুন চাকরি সৃষ্টির পরিকল্পনার বিষয়টি সম্প্রতি জনকণ্ঠের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। এটি বিরাট আশার খবর। তবে আমরা স্মরণ করতে পারি গত বছর নতুন অর্থবছর শুরু হওয়ার পরপর ‘রূপকল্প-’২১’ সামনে রেখে একই ধরনের পরিকল্পনা ও উদ্যোগ গ্রহণের কথা আমরা শুনেছিলাম। তখন এই লক্ষ্য অর্জনে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছিল- মানবসম্পদ উন্নয়নের জন্য বৃত্তিমূলক ও কারিগরি শিক্ষাব্যবস্থা ঢেলে সাজানো, গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি, মাঝারি ও ক্ষুদ্র শিল্প খাত উৎসাহিত, প্রশিক্ষিত যুবক, যুবতীদের সহজ শর্তে ঋণ দিয়ে আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা, কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে প্রচলিত ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচীকে সকল জেলায় সম্প্রসারণ, বিদেশে জনশক্তি রফতানি বৃদ্ধি এবং কৃষি ও সেবা খাতে কর্মসংস্থানের বিদ্যমান সুযোগ-সুবিধা আরও সম্প্রসারিত করা। লক্ষ্য অর্জনের সময়সীমা পাঁচ বছর থেকে বাড়িয়ে এখন ১৪ বছর করার (২০৩০ সাল পর্যন্ত) কথা বলা হচ্ছে। তাতে অসুবিধে নেই। দেশের অগণিত কর্মহীন মানুষ কাজ চায়, সোজা কথায় কর্মসংস্থানের মাধ্যমে উপার্জন করে জীবনধারায় ইতিবাচক পরিবর্তন নিয়ে আসতে চায়। বর্তমান সময়ে যারা বয়ঃসন্ধিকালে অবস্থান করছে সেইসব ছেলেমেয়ে কথিত চৌদ্দ বছর পর হবেন পূর্ণ বয়সী নারী-পুরুষ। তখন তাদের কর্মসংস্থানের বিষয়টি নিশ্চিত হলে সেটি যে পুরো জাতির জন্য বিশাল একটি কাজ হবে সন্দেহ নেই। তাই সময়সীমা বড় কথা নয়, পরিকল্পনা বাস্তবায়নে শতভাগ নিশ্চয়তার বিষয়টিই অধিক গুরুত্বপূর্ণ। বহুমুখী বাধা ও বিপুল বিঘœতা সত্ত্বেও এগিয়ে চলেছে বাংলাদেশ। মানুষ আত্মশক্তি অর্জনের পথে এগিয়ে বিশ্বমানচিত্রে মর্যাদার আসনে দেশকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। আন্তর্জাতিক পরিসংখ্যানে বাংলাদেশের ক্রমোন্নতির বিষয়টির স্বীকৃতি মিলেছে। মানবসম্পদ উন্নয়নে ১৮ দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান শীর্ষে। তবে দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আমাদের সীমিত আয়তনের দেশটির বিশাল জনগোষ্ঠীর সাপেক্ষে সৃষ্টি করা যায়নি পর্যাপ্ত কর্মসংস্থানের সুযোগ। তবু মানবগোষ্ঠীকে দক্ষ মানবসম্পদ হিসেবে গড়ে তোলার কাজটিতে গতি এসেছে। সুদক্ষ মানবসম্পদ তৈরিতে শিক্ষার কোন বিকল্প নেই। দেশে পেশাভিত্তিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তথা প্রকৌশল, কৃষি, চিকিৎসা, কারিগরি ইত্যাদি জনসংখ্যা অনুপাতে বেশ কম। ফলে বেকারত্বের হার কমানোর ক্ষেত্রে কাক্সিক্ষত সাফল্য আসেনি। স্মরণযোগ্য দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জাপান তার কারিগরি জ্ঞান কাজে লাগিয়ে বিশ্ব-অর্থনীতির সর্বোচ্চ স্থান দখল করে আছে। এখন চীন বিশ্বের শীর্ষ অর্থনৈতিক পরাশক্তি। তাদের এই অভূতপূর্ব সাফল্যের মূল কারণ হচ্ছে সময়োপযোগী প্রযুক্তিকে বাহন করে নিজেদের শ্রম ও মেধাকে কাজে লাগানো। বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির ২০১২ সালের এক গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রতিবছর ২২ লাখ মানুষ শ্রমবাজারে প্রবেশ করে। কিন্তু কাজ পায় মাত্র ৭ লাখ। এর মধ্যে উচ্চশিক্ষিত অর্থাৎ স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে যাঁরা শিক্ষাজীবন শেষ করেছেন, তাঁরাও আছেন। সামগ্রিকভাবে পরিসংখ্যানগুলো বলছে, এদের মধ্যে কেউ কেউ নিজ উদ্যোগে কিছু করার চেষ্টা করেন। আবার অনেকে নিজের যোগ্যতার চেয়ে কম মানের কাজ করতে বাধ্য হন। এমন বিরাজমান পরিস্থিতিতে ২০৩০ সালের মধ্যে সবার জন্য কাজের ব্যবস্থা করার মহাউদ্যোগে সরকার শক্তি নিয়োগ করে সাফল্য অর্জন করুক- এটাই দেশবাসীর প্রত্যাশা। তাহলে সমতাভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যও অনেকটা পূরণ হবে।
×