ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ডেঙ্গু ॥ সতর্ক হোন

প্রকাশিত: ০৩:৩৪, ২ সেপ্টেম্বর ২০১৬

ডেঙ্গু ॥ সতর্ক হোন

রাজধানীতে হঠাৎ করেই ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়ে গেছে। অবশ্য এটা ডেঙ্গুর মৌসুমও। গত কয়েক বছর ধরে বর্ষা মৌসুম এলেই এই প্রকোপ বৃদ্ধি পায়। চিকিৎসকরা বলছেন থেমে থেমে বৃষ্টির কারণে এডিস মশার বিস্তার ঘটছে। এই মশার কামড়ে প্রতিদিনই শিশুসহ বিভিন্ন বয়সের মানুষ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে। বুধবার পর্যন্ত এডিস মশার কামড়ে আড়াই হাজারের বেশি ব্যক্তি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে। এই তথ্য সরকারী হলেও বেসরকারী হিসেবে এ সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে। মহাখালী স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য মতে, ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে এ পর্যন্ত ২৪৬৪ জন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে। এর মধ্যে ৬ জন মারা গেছে। নতুন করে আরও বেশ কয়েকজন আক্রান্ত হয়েছে। রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে এখনও ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত শতাধিক ব্যক্তি ভর্তি আছেন। আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলছে। জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত সময়কালকে ডেঙ্গু মৌসুম ধরা হয়। সেই হিসেবে সামনের দিনগুলোতে আক্রান্তের সংখ্যা যে বাড়বে তাতে সন্দেহ নেই। পরিসংখ্যানও বলছে গত এক দশকের মধ্যে এবার ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা তুলনামূলক বেশি। কোন কোন ক্ষেত্রে রোগটিকে শনাক্ত করাও কঠিন হয়ে পড়েছে। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বিশ্ব জনসংখ্যার পাঁচ ভাগের দুই ভাগই অর্থাৎ ২৫০ কোটি লোক ডেঙ্গুর ঝুঁকিতে রয়েছে। ৭০ ভাগই এশীয় ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলোয় বাস করে। এখনই সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিলে ভবিষ্যতে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। বাংলাদেশ এই তালিকার অন্তর্ভুক্ত। সম্প্রতি আমাদের স্বাস্থ্যমন্ত্রী রাজধানীবাসীকে আশ্বস্ত করে বলেছেন, ডেঙ্গু নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। মন্ত্রীর এই অভয় বাণী তাৎপর্যপূর্ণ হলেও কতটা ঝুঁকিমুক্ত তা ভাববার বিষয়। তবে ডেঙ্গু আক্রান্তের ধারাবাহিকতা বলে দিচ্ছে যে কোন মুহূর্তে ভয়ঙ্কর মূর্তিরূপে আত্মপ্রকাশ করতে পারে। এটা প্রতিরোধ কিভাবে সম্ভব তা এখনই ভাবতে হবে। এই ক্ষেত্রে দেশে ডেঙ্গুবিরোধী অভিযান আরও জোরদার করার বিকল্প নেই। ডেঙ্গুর জীবাণু বহনকারী হচ্ছে এডিস মশা। এই মশা সাধারণত দিনের বেলায় কামড়ায়। সাধারণ মশার চেয়ে এই মশা আকারে বড় এবং ডোরা কাটা। এরা পরিষ্কার পানিতে ডিম পাড়ে। তাই কোথাও পানি জমে থাকতে দেয়া উচিত নয়। যেহেতু রোগটি মশাবাহিত তাই মশার বংশ বৃদ্ধি রোধ, নিধন ও প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে সবার আগে। পাশাপাশি সবাইকে সচেতন হতে হবে। বিশেষ করে ঘরের কোণে বারান্দায় যাতে পানি জমে থাকতে না পারে; সেদিকে বিশেষ নজর রাখা প্রয়োজন। ঘরবাড়ি ও এর চারপাশে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকা ক্যান, টিনের কৌটা, মাটির পাত্র, বোতল, নারকেলের মালা বা পানি ধারণ করতে পারে এ জাতীয় এমন পাত্র ফেলে রাখা যাবে না। এগুলোতে পানি জমে এডিস মশার জন্ম হয়। তাছাড়া গোসলখানায় বালতি, ড্রাম, পানির ট্যাঙ্ক কিংবা মাটির গর্তে কোন অবস্থাতেই পানি জমিয়ে রাখা যাবে না। ডেঙ্গুর মৌসুমে মশারি টাঙ্গিয়ে ঘুমানো উচিত। ডেঙ্গু প্রতিরোধে প্রথম প্রয়োজন জনসচেতনতা। আক্রান্তদের ভীত না হয়ে ডেঙ্গু প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার ওপর জোর দিতে হবে। মানুষকে আরও সচেতন হতে হবে। সুতরাং ব্যক্তি সচেতনতাই পারে মশাবাহিত এই রোগ থেকে রক্ষা করতে। ডেঙ্গুর প্রকোপ থেকে বাঁচতে হলে মশক নিধনে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনকে আরও সক্রিয় হতে হবে। এ লক্ষ্যে সরকার, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, গণমাধ্যমসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। সবাই সচেতন হলে ডেঙ্গু প্রতিরোধ কোন কঠিন কাজই নয়।
×