ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

কমলাপুর স্টেশনে উপচেপড়া ভিড়

প্রকাশিত: ০৬:১২, ১ সেপ্টেম্বর ২০১৬

কমলাপুর স্টেশনে উপচেপড়া ভিড়

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বদলে গেছে কমলাপুর রেল স্টেশনে অগ্রিম টিকেট নেয়ার চিত্র। ভিড় বেড়েছে। এক সঙ্গে এত মানুষের চাপ সামাল দিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে রীতিমতো হিমশিম খেতে হয়েছে। ঈদের আগে সর্বশেষ শুক্রবারের ট্রেনের টিকেট পেতে কমলাপুর স্টেশনের ভিড় আগের দুদিনের মাত্রাকে ছাড়িয়ে গেছে বুধবার। সকাল ৯টায় কমলাপুরে গিয়ে দেখা যায়, টিকেট কাউন্টারের সামনে থেকে টিকেট প্রত্যাশীদের লাইন সামনের রাস্তা পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। দীর্ঘ এই লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা অনেকের চেহারায় ছিল রাত জাগার ক্লান্তি। অনেকেই জানালেন, টিকেট পেতে মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে লাইনে দাঁড়াতে হয়েছে তাদের। সকাল থেকে ভিড় বাড়তে থাকলে টিকেট বিক্রিতে ধীর গতি দেখা দেয়। দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে কাক্সিক্ষত টিকেট না পেয়ে ক্ষুব্ধ হয়েছেন কেউ কেউ। অনেকে এসি টিকেট না পাওয়া এবং টিকেট বিক্রিতে ‘দুর্নীতি’র অভিযোগ তুলেছেন। কেউ কেউ কেবিন বা এসি চেয়ারের টিকেট না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। বুধবার দেয়া হচ্ছে ৯ সেপ্টেম্বরের আগাম রেল টিকেট। এর আগে গত সোম ও মঙ্গলবার দেয়া হয়েছে ৭ ও ৮ সেপ্টেম্বরের টিকেট। বৃহস্পতিবার দেয়া হবে ১০ সেপ্টেম্বরের টিকেট। আর আগাম টিকেট বিক্রির শেষদিন শুক্রবার (২ সেপ্টেম্বর) দেয়া হবে ১১ সেপ্টেম্বরের টিকেট। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে বাংলাদেশে আগামী ১২ বা ১৩ সেপ্টেম্বর কোরবানির ঈদ হতে পারে। তবে ১২ সেপ্টেম্বর ঈদ ধরেই টিকেট বিক্রি কার্যক্রম চলছে। এদিকে আজ বৃহস্পতিবার থেকে লঞ্চের অগ্রিম টিকেট বিক্রি শুরু হবে। দেশের দক্ষিণাঞ্চলের প্রায় ৩৫টি জেলার মানুষ সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে যাতায়াত করেন। এছাড়া আজ থেকে রাষ্ট্রীয় পরিবহন সংস্থা বিআরটিসিও অগ্রিম টিকেট বিক্রি শুরু করছে। রাজধানীর কমলাপুর, জোয়ারসাহারা, কল্যাণপুর, গুলিস্তান বাস ডিপো থেকে একযোগে টিকেট বিক্রি হবে। ঈদ উপলক্ষে আট সেপ্টেম্বর থেকে চালু হচ্ছে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস। তাই টিকেট কাটার ক্ষেত্রে নেত্রকোনা অঞ্চলের মানুষের একটি বাড়তি উৎসাহ লক্ষ্য করা গেছে। নতুন ট্রেনের এসি চেয়ারের টিকেট নিতে এসেছিলেন ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী রব। তিনি জানালেন, চার ঘণ্টার বেশি সময় অপেক্ষা করলাম। কিন্তু এসি টিকেট পেলাম না। কাউন্টার থেকে শোভন চেয়ার নেয়ার কথা বলা হলেও নেইনি। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার টিকেট নিতে ভোর ৩টায় স্টেশনে আসা আইসিএমএবির শিক্ষার্থী মোঃ হুমায়ুন কবির বলেন, এবার সবাই ঈদ করব বাড়িতে, এজন্য টিকেট কিনতে আসা। এসি টিকেট না পাওয়ার অভিযোগ করলেন শান্ত মারিয়াম বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যাশন ডিজাইনের ছাত্র সোহেল রানা। মঙ্গলবার দুপুর ২টায় এসে ২৮ নম্বর সিরিয়াল পেলেও বুধবার সকাল পর্যন্ত টিকেট পাননি তিনি। প্রথম এক ঘণ্টায় ৫০ জনের মতো টিকেট কিনেছেন। এরমধ্যে একটা ট্রেনের সব টিকেট শেষ, এটা কিভাবে বিশ্বাস করি? ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলেন তিনি। নারীদের কাউন্টারে টিকেট প্রত্যাশীদের ভিড় অন্য কাউন্টারের চেয়ে বেশি। তবে এখানে দুটি কাউন্টারের একটি থেকে রেলকর্মীদের টিকেট দেয়া হচ্ছে। টিকেট বিক্রির ধীরগতিতে ভোগান্তিতে পড়েছেন নারীরা। টিকেট প্রত্যাশীদের বিভিন্ন অভিযোগ নিয়ে কথা হয় কমলাপুর স্টেশনের ব্যবস্থাপক সিতাংশু চক্রবর্ত্তীর সঙ্গে। তিনি জানান, সম্প্রতি চাহিদা বাড়ায় রেলের এসি টিকেট দ্রুত শেষ হয়ে যাচ্ছে। আর সকাল ৯টার মধ্যে তিস্তা এক্সপ্রেসের টিকেট শেষ হয়নি বলেও দাবি তার। তিনি বলেন, মানুষের হাতে টাকা আছে, ক্রয় ক্ষমতা বেড়েছে। এজন্য সবাই এসে এসির টিকেট চায়। কিন্তু চাহিদা বেশি থাকায় সবাইকে দেয়া সম্ভব হয় না। তিস্তা এক্সপ্রেসের সব টিকেট শেষ, কথাটা ঠিক না। কিছু কিছু স্টেশনের টিকেট এখনও আছে। তিনি বলেন, যাত্রী চাহিদা বেশি হওয়ার কারণে সবাই টিকেট পাবে এমন নিশ্চয়তা দেয়া যাচ্ছে না। আট, নয় ও ১০ সেপ্টেম্বরের টিকেটের চাহিদা অনেক বেশি। দিন যত যাচ্ছে ততো মানুষের চাপ বাড়ছে কমলাপুরে। তবে এ পর্যন্ত পুলিশ ও র‌্যাবের বুথে টিকেট কালোবাজারির কোন অভিযোগ জমা হয়নি। ঈদের ফিরতি টিকেট বিক্রি করা হবে ৫ সেপ্টেম্বর থেকে। প্রথম পাওয়া যাবে ১৪ সেপ্টেম্বরের টিকেট। এরপর ৬ সেপ্টেম্বর ১৫ সেপ্টেম্বরের, ৭ সেপ্টেম্বর ১৬ সেপ্টেম্বরের, ৮ সেপ্টেম্বর ১৭ সেপ্টেম্বরের এবং ৯ সেপ্টেম্বর ১৮ সেপ্টেম্বরের ফিরতি টিকেট দেয়া হবে।
×