ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

প্রধানমন্ত্রীকে জুলিয়া নিবলেট

অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও নারীর ক্ষমতায়নে চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৬:০৪, ১ সেপ্টেম্বর ২০১৬

অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও নারীর ক্ষমতায়নে চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ

বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের ভূয়সী প্রশংসা করে ঢাকায় নবনিযুক্ত অস্ট্রেলিয়ার হাইকমিশনার জুলিয়া নিবলেট বাংলাদেশকে অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং নারীর ক্ষমতায়নে চ্যাম্পিয়ন হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশে বলেন, ‘আপনি অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং নারীর ক্ষমতায়নে একজন চ্যাম্পিয়ন।’ বাংলাদেশে নবনিযুক্ত অস্ট্রেলিয়ার হাইকমিশনার জুলিয়া নিবলেট বুধবার সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কার্যালয়ে সাক্ষাতকালে এ কথা বলেন। বৈঠকের পর প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম এ ব্যাপারে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। খবর বাসসর। অস্ট্রেলিয়ার হাইকমিশনার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের প্রশংসা করে বলেন, ‘অস্ট্রেলিয়াও বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদারকরণে আগ্রহী। আমরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের সহযোগিতা বৃদ্ধি করতে চাই, বিশেষ করে জ্বালানি খাত এবং শিক্ষা খাতে।’ বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাফল্যের কথা উল্লেখ করে হাইকমিশনার বলেন, বাংলাদেশের ক্রীড়াক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির জন্য শীঘ্রই অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের কথা রয়েছে। সন্ত্রাসকে বৈশ্বিক সমস্যা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বৈঠকে বলেন, তার সরকার এ সমস্যা দূরীকরণে দেশব্যাপী গণসচেতনতা সৃষ্টির পদক্ষেপ নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ শিক্ষকসহ সারাদেশের সকল শ্রেণী-পেশার মানুষের মধ্যে সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদবিরোধী গণসচেতনতা সৃষ্টির পদক্ষেপ নিয়েছি, এক্ষেত্রে জনগণের ব্যাপক সাড়া পাওয়া গেছে।’ তিনি এ প্রসঙ্গে দেশের ৬৪টি জেলায় সকল শ্রেণী-পেশার মানুষের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মতবিনিময় করে তার সরকারের জনমত সৃষ্টির উদ্যোগের কথাও উল্লেখ করেন। প্রধানমন্ত্রী এ সময় অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগ, শিক্ষা, ক্রীড়া, সংস্কৃতি প্রভৃতি বিষয়ে আরও বৃহৎ পরিসরে সহযোগিতার ক্ষেত্র তৈরিতে বাংলাদেশের আগ্রহের কথা জানান। নারীর উন্নয়নে তার সরকার গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের তথ্য তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, কোন দেশই তাদের অর্ধেক জনগোষ্ঠী নারীকে উন্নয়নের মূলধারায় সম্পৃক্ত করা ব্যতীত এগোতে পারে না। বাংলাদেশের প্রতিটি ক্ষেত্রেই নারীরা এগিয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, তারা এখন প্রায় প্রতিটি পর্যায়েই পুরুষের কাছাকাছি অবস্থানে চলে এসেছে। শিক্ষা, ক্রীড়া এবং সৃজনশীল কর্মকা-Ñ কোন কিছুতেই তারা আর পিছিয়ে নেই। মেয়েরা শিক্ষাক্ষেত্রে বরং ছেলেদের থেকে এগিয়ে গেছে বলেও এ সময় তিনি উল্লেখ করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্থানীয় সরকারে বিশেষ করে ইউনিয়ন, উপজেলা, পৌরসভা এবং সিটি কর্পোরেশনে শতকরা ৩০ ভাগ আসন নারীদের দিয়ে পূরণের বিধান রাখা হয়েছে। তিনি এ প্রসঙ্গে প্রশাসন, বিচার বিভাগ, সশস্ত্রবাহিনী এবং আইনশৃঙ্খলা রাক্ষাকারী বাহিনীতে নারীরা কর্মরত রয়েছে উল্লেখ করে দেশের সকল শ্রেণী-পেশার ক্ষেত্রেই উচ্চপদে নারীরা আসীন হয়েছেন বলেও জানান। প্রধানমন্ত্রী বৈঠকে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের চমৎকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক বিদ্যমান থাকার কথা উল্লেখ করে এ সম্পর্ক সেই ১৯৭২ সালে প্রথম অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কো-অপারেশন এ্যান্ড ডেভেলপমেন্টভুক্ত (ওইসিডি) দেশ হিসেবে অস্ট্রেলিয়ার বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদানের সময় থেকেই বলেও জানান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ সময় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অস্ট্রেলিয়া সরকার ও জনগণের মূল্যবান অবদানের কথাও স্মরণ করেন। কৃষি ও শিপবিল্ডিংয়ে নরওয়ের সহায়তা চাইলেন প্রধানমন্ত্রী ॥ এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পারস্পরিক স্বার্থে আরও উন্নয়ন এবং বাংলাদেশের কৃষি ও শিপবিল্ডিং সেক্টরের বিকাশে নরওয়ের সহায়তা কামনা করেছেন। প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের ফিসারিজ সেক্টরের উন্নয়ন, ব্রিডিং ফিঙ্গারলিং, ফিশারিজ ম্যানেজমেন্টে এবং বাংলাদেশের উপকূল অঞ্চলে মেরিন মৎস্য প্রকল্পে যৌথ উদ্যোগে প্রকল্প গ্রহণে নরওয়ের সহায়তা চেয়েছেন। ঢাকায় নরওয়ের বিদায়ী রাষ্ট্রদূত মেরেটে লুনডেমো বুধবার সকালে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার কার্যালয়ে সাক্ষাতকালে তিনি এ আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। বৈঠকে বাংলাদেশের শিপবিল্ডিং এবং শিপ রিসাইক্লিংয়ের অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা হয়। শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার দেশের দক্ষিণ অঞ্চলে একটি নতুন শিপইয়ার্ড স্থাপন করেছে। নরওয়ে সেখানে তাদের একটি নিজস্ব শিপইয়ার্ড নির্মাণ করতে পারে। তারা চাইলে এর জন্য আমরা তাদের জমি দেব। বৈঠকে নরওয়ের রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশে শিপইয়ার্ড শিল্পের অগ্রগতির প্রশংসা করে বলেন, চট্টগ্রামে তাদের দুটি জাহাজ নির্মাণ করা হয়েছে। আরও চারটি জাহাজ নির্মাণের ব্যাপারে মধ্যস্থতা চলছে। নরওয়ের রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশে আরও বিনিয়োগের ব্যাপারে বিশেষ করে স্বাস্থ্য, টেলিকম এবং শিপবিল্ডিং সেক্টরে তার দেশের আগ্রহের কথা জানান। নরওয়ের দূত বলেন, বাংলাদেশে তার অবস্থানকালে এ দক্ষিণ এশীয় দেশটিতে উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন বিশেষ করে দারিদ্র্য বিমোচনে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের জনগণের অবস্থার উন্নয়ন হয়েছে। তিনি বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সন্ত্রাসী হামলার পর কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানান। মেরেট বলেন, তার দেশে পাঁচ বছর আগে অনুরূপ এক সন্ত্রাসী হামলায় প্রায় ৭৭ জন লোক প্রাণ হারায়। এদের মধ্যে অধিকাংশই ছিল শিশু। দূত বলেন, নরওয়ে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সব সময় বাংলাদেশের পাশে থাকবে।
×