ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

নিখোঁজদের মধ্যে অন্তত ৪০ জন জঙ্গীবাদে জড়িয়ে পড়েছে ॥ আইজিপি

প্রকাশিত: ০৬:০২, ১ সেপ্টেম্বর ২০১৬

নিখোঁজদের মধ্যে অন্তত ৪০ জন জঙ্গীবাদে জড়িয়ে পড়েছে ॥ আইজিপি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নিখোঁজদের মধ্যে অন্তত ৪০ জন জঙ্গীবাদে জড়িয়ে পড়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে আপাতত তাদের পরিচয় প্রকাশ না করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। জঙ্গীবাদে জড়িতরা যদি স্বাভাবিক জীবনে ফিরে, তাহলে তাদের সহযোগিতা করা হবে। তবে যেসব জঙ্গী কোন সুনির্দিষ্ট মামলার আসামি বা অপরাধে জড়িত তাদের কোন প্রকার সহায়তা করা হবে না। তাদের বিরুদ্ধে আইন মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে। বুধবার পুলিশ সদর দফতরে এক সংবাদ সম্মেলনে এমনটাই জানালেন পুলিশ মহাপরিদর্শক একেএম শহীদুল হক। তিনি বলছিলেন, নিখোঁজদের মধ্যে অন্তত ৪০ জন জঙ্গীবাদে জড়িয়ে পড়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। নিখোঁজদের পরিবারের দেয়া ভাষ্য, গোয়েন্দা তথ্য এবং সার্বিক বিষয় পর্যালোচনা করে এমনটাই ধারণা করা হচ্ছে। ওই চল্লিশ জনের পরিবারের সঙ্গে বিভিন্ন সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যোগাযোগও হয়েছে। নিখোঁজদের অনেকেই পরিবারের সঙ্গে মোবাইল ফোনে বা এসএমএসের মাধ্যমে যোগাযোগ করে ভাল আছে বলে পরিবারকে জানিয়েছে। তবে তারা দেশে না বিদেশে রয়েছে, সে সম্পর্কিত কোন তথ্য প্রকাশ করেননি পুলিশ প্রধান। আইজিপি বলেন, নিখোঁজ এবং তাদের পরিবার সম্পর্কিত কোন তথ্য আপাতত প্রকাশ না করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। প্রয়োজন হলে তাদের পরিচয় প্রকাশ করা হবে। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, জঙ্গীবাদে জড়িতদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার সুযোগ দেয়া হয়েছে। যারা জঙ্গীবাদ থেকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরবে, তাদের সহযোগিতা করা হবে। তবে যেসব জঙ্গী মামলার আসামি বা কোন না কোন অপরাধে জড়িত তাদের কোন প্রকার সহায়তা করা হবে না। উল্টো তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। জঙ্গীবাদে জড়িতদের কেউ কেউ স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারে। এজন্য আপাতত জঙ্গীবাদে জড়িত কারও পরিচয় প্রকাশ করা হচ্ছে না। তবে ভবিষ্যতে প্রয়োজন হলে পরিচয় প্রকাশ করা হবে। আইজিপি বলেন, ২০১৩ সালে রাজনৈতিক অস্থিরতার সুযোগে জঙ্গীবাদের বিস্তার ঘটেছিল। এছাড়া ফেসবুক, ইন্টারনেট ও বিভিন্ন এ্যাপের মাধ্যমে জঙ্গীরা অন্যদের জঙ্গীবাদে উদ্বুদ্ধ করে। বর্তমানে জঙ্গীরা যাতে এ ধরনের যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের তৎপরতা বৃদ্ধি করতে না পারে, এজন্য মনিটরিং চলছে। নারায়ণগঞ্জে নিহত তিন জঙ্গীর আইজিপি বলেন, তামিম আহমেদ চৌধুরী গুলশান হামলার মাস্টারমাইন্ড ছিল। নিহত কাজী ফজলে রাব্বি (২২) ও তাওসীফ হোসেন (২৫) তামিম চৌধুরীর সহযোগী ছিল। গুলশান হামলার পর যশোর পুলিশের তরফ থেকে নিখোঁজ পাঁচজনের ছবি পোস্টার আকারে ছাপিয়ে প্রকাশ করা হয়েছিল। তার মধ্যে দুই নম্বরেই ছিল নিহত রাব্বির ছবি। নিহত অপর জঙ্গী ধানম-ির ৪৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ডাঃ মোঃ আজমলের ছেলে তাওসীফ গত মার্চে ঘর ছাড়ে। গুলশান হামলার পর সেনাবাহিনীর কমান্ডো অভিযানে নিহত নিবরাজ ইসলাম, শোলাকিয়ায় হামলার পর পুলিশের সঙ্গে গোলাগুলিতে নিহত আবীর রহমান এবং কল্যাণপুরে পুলিশি অভিযানে নিহত শেহজাদ রউফ অর্কও একই সময়ে বাড়ি ছেড়েছিল বলে নিহতদের পরিবারের দাবি। সূত্র বলছে, গত ১ জুলাই গুলশানে হামলার আগে ঢাকার এই চার জঙ্গী ঝিনাইদহের একটি মেসে ছিল। জুলাইয়ের শেষদিকে তারা ঝিনাইদহ থেকে ঢাকায় আসে। ঢাকার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় বেসরকারী নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রোভিসি গিয়াস উদ্দিন আহমেদের বাড়িতে উঠেছিল। ওই বাসা থেকেই তারা সরাসরি হলি আর্টিজানে গিয়ে জঙ্গী হামলা চালায়। ঝিনাইদহের ওই মেসে ঢাকার চারজনসহ মোট আটজন ছিল। তারা সবাই গুলশান ও শোলাকিয়ার হামলার সঙ্গে জড়িত। প্রসঙ্গত, গত ১ জুলাই রাজধানীর অভিজাত এলাকা গুলশানের কূটনৈতিকপাড়ায় হলি আর্টিজান রেস্তরাঁ ও বেকারিতে জঙ্গীরা ১৭ জন বিদেশী, দুই জন পুলিশ কর্মকর্তাসহ ২২ জনকে হত্যা করে। এমন ঘটনার এক সপ্তাহের মাথায় গত ৭ জুলাই কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় দেশের সর্ববৃহৎ ঈদ জামাতে হামলার চেষ্টা করে জঙ্গীরা। কিন্তু পুলিশের বাধার মুখে সে হামলা প- হয়ে যায়। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে জঙ্গীরা পুলিশের ওপর হামলা চালায়। গ্রেনেড হামলা ও গুলিতে পুলিশের দুই সদস্যের মৃত্যু হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, এমন ঘটনার পর সারাদেশে ১৩ থেকে ৩৫ বছর বয়সী নিখোঁজদের বিষয়ে খোঁজখবর নেয়া শুরু হয়। নিখোঁজদের মধ্যে উচ্চ শিক্ষিত ও উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তানদের সন্ধান পাওয়ার ক্ষেত্রে প্রাধান্য দেয়া হয়। এরপর কয়েক দফায় নিখোঁজদের তালিকা প্রকাশিত হয়। এক প্রশ্নের জবাবে পুলিশ প্রধান বলেন, পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার চাকরি করতে চায় না। সে চাকরি না করার বিষয়ে একমত। তারপরও তার পদত্যাগপত্রটি প্রায় দেড় মাস পুলিশ সদর দফতরে রাখা হয়েছে। এরপর পদত্যাগপত্রটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। বিষয়টি বর্তমানে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে রয়েছে। এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিবে। প্রসঙ্গত, গত ৫ জুন বন্দরনগরী চট্টগ্রামের জিইসি মোড়ে বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু ছেলেকে স্কুলের বাসে তুলে দেয়ার সময় সন্ত্রাসী হামলায় নিহত হন। হত্যাকারীরা মিতুকে চাপাতি দিয়ে কোপানোর পর গুলি চালিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে মোটরসাইকেলযোগে পালিয়ে যায়। এমন ঘটনার পর গত ২৪ জুন বাবুল আক্তারকে গভীররাতে বনশ্রীর শ্বশুরের বাসা থেকে নিয়ে প্রায় সাড়ে চৌদ্দ ঘণ্টা মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এতে করে রীতিমতো চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। এরপর থেকেই বাবুল আক্তারের পদত্যাগ, স্ত্রী হত্যাকা-ের সঙ্গে বাবুল আক্তারের সম্পৃক্ততাসহ নানা প্রশ্নের জন্ম হয়েছে।
×