ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বন্যায় ৪০ লাখ মানুষ ও ১০ হাজার বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত

প্রকাশিত: ০৬:০১, ১ সেপ্টেম্বর ২০১৬

বন্যায় ৪০ লাখ মানুষ ও ১০ হাজার বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ সাম্প্রতিক বন্যায় দেশের ২০ জেলায় ৪০ লাখেরও বেশি মানুষ ও প্রায় ১০ হাজার বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সরকারী তথ্যে, বন্যায় সারাদেশে মারা গেছেন ৭৬ জন। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের বুধবারের বন্যার ক্ষয়ক্ষতির তথ্য থেকে এসব বিষয় জানা গেছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের জাতীয় দুর্যোগ সাড়াদান ও সমন্বয় কেন্দ্র (এনডিআরসিসি) বন্যাদুর্গত ২০ জেলা থেকে ক্ষয়ক্ষতির এসব তথ্য সংগ্রহ করেছে। জেলা প্রশাসক, জেলার প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও), জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তার (ডিআরও) মাধ্যমে এসব তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। অতিবৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পানিতে গত মাসের (জুলাই) শেষের দিকে দেশের উত্তর ও মধ্যাঞ্চলে বন্যা দেখা দেয়। চলতি মাসের (আগস্ট) মাঝামাঝি পর্যন্ত স্থায়ী হয় এ বন্যা। প্রতিবেদন অনুযায়ী, বন্যার কারণে ২০ জেলার ৯৫ উপজেলা, ৫২৯ ইউনিয়ন ও ১৩টি পৌরসভায় ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ৪০ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ জন মানুষ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ি ৯ লাখ ৯ হাজার ৬৯০টি। মোট পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৯ লাখ ১৩ হাজার ৩২৮টি। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের হিসেব অনুযায়ী, এক লাখ ৬৯ হাজার ৩৬৫ একর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গবাদিপশু মারা গেছে ১৭টি। ২ হাজার ৩১২টি ধর্মীয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ৩ হাজার ৪৪৪ কিলোমিটার কাঁচা ও পাকা সড়ক, ৪৮টি ব্রিজ-কালভার্ট এবং ১২০ কিলোমিটার বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তবে কৃষি মন্ত্রণালয়ের হিসেব অনুযায়ী, বন্যায় ১৬ জেলায় আমন বীজতলা, শাকসবজি ও অন্যান্য ফসলসহ প্রায় সাড়ে ৭ লাখ হেক্টর ফসলি জমি পানিতে তলিয়ে যায় এবং এক লাখ ৫৮ হাজার একর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব সত্যব্রত সাহা জনকণ্ঠকে বলেন, যে কোন দুর্যোগের পর আমরা ক্ষয়ক্ষতি নির্ধারণ করে থাকি। ইতিমধ্যে এনডিআরসিসি বন্যার ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করে একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে। বন্যার শুরু থেকেই আমরা সহায়তা দিয়ে আসছি। বন্যাদুর্গতদের পুনর্বাসনে যা যা করা দরকার আমরা করছি। গত বুধবার কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী সংবাদ সম্মেলনে জানান, অতিবৃষ্টিজনিত বন্যার কারণে দেশের অধিক ক্ষতিগ্রস্ত ১৬ জেলায় পুনর্বাসন কর্মসূচীতে ১৭ হাজার ২১১ জন ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষককে ৫৩ লাখ ৭৪ হাজার টাকার আমন ধানের চারা ও বীজ দেয়া হবে। এ ছাড়া চলতি অর্থবছরে ৬৪ জেলায় মাসকলাই, গম, ভুট্টা, সরিষা, চিনাবাদাম, ফেলন, খেসারি, বোরো ধান, মুগ, তিল উৎপাদন বৃদ্ধিতে ৪ লাখ এক হাজার ৩০০ ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষককে প্রণোদনা হিসেবে ৪১ কোটি ৫৬ লাখ ৮ হাজার ৮০০ টাকার ধানের চারা, বীজ ও সার দেয়া হবে বলেও জানান মন্ত্রী। বন্যা হওয়া জেলাগুলোর মধ্যে কুড়িগ্রাম অন্যতম। কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক খান মোঃ নুরুল আমিন বলেন, বন্যার পর আমরা পুনর্বাসনে জোর দিয়েছি। কৃষকদের আমরা ধানের চারা ও সবজি বীজ দেব। ক্ষতিগ্রস্তদের স্বল্প সুদে ঋণ দেয়ার জন্য ব্যাংকগুলোর সঙ্গে মিটিং করেছি। কুড়িগ্রামের ওপর দিয়ে ১৬টি নদী বয়ে গেছে জানিয়ে ডিসি বলেন, ‘বন্যার পর নদী ভাঙ্গন বেড়ে গেছে। নদীভাঙ্গনে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের তালিকা তৈরি করছি। নদীভাঙ্গনে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তার জন্য সমাজকল্যাণ আমাদের ৩৭ লাখ টাকা দিয়েছে। ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, নীলফামারীতে ২৭ হাজার ৭৫০, লালমনিরহাটে ২ লাখ ৪৯ হাজার ৩০০, কুড়িগ্রামে ৭ লাখ ২২ হাজার ২৩৯, রংপুরে ৩৪ হাজার ৮৩৬, গাইবান্ধায় ২ লাখ ৭৬ হাজার ৩০৫, বগুড়ায় এক লাখ ২১ হাজার, সিরাজগঞ্জে ৫ লাখ ৫৩ হাজার ৯৮১, জামালপুরে ৮ লাখ ৪৯ হাজার ৪৫১, টাঙ্গাইলে ৪ লাখ ৬১ হাজার ৩৯৩, কুষ্টিয়ায় ১৪ হাজার ৪২৫, রাজবাড়ীতে এক লাখ ২২ হাজার ২৮০, ফরিদপুরে ৯৭ হাজার ৭৩০, মাদারীপুরে ৪৬ হাজার ৩৬০, শরীয়তপুরে ৪৫ হাজার ৪৭৫, মানিকগঞ্জে ২ লাখ ৩৮ হাজার ৭৮০, ঢাকায় ২৮ হাজার ৫৯০, মুন্সীগঞ্জে ২৮ হাজার ৭৭৫, চাঁদপুরে ৯২০, সুনামগঞ্জে এক লাখ ৩ হাজার ৬০০ ও রাজশাহীতে ৭৫০ জন মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িঘরের মধ্যে নীলফামারীতে ৫ হাজার ৯১৩, লালমনিরহাটে ৫০ হাজার ৬৫০, কুড়িগ্রামে এক লাখ ৭৬ হাজার ৫২১, রংপুরে ৬ হাজার ৯৭৬, গাইবান্ধায় ৫৫ হাজার ২৬১, বগুড়ায় ২৪ হাজার ২০০, সিরাজগঞ্জে এক লাখ ৩২ হাজার ৯০৭, জামালপুরে এক লাখ ৭৮ হাজার ৬৯৭, টাঙ্গাইলে এক লাখ ৩৭ হাজার ৫৪৯, কুষ্টিয়া ২ হাজার ৮৮৫, রাজবাড়ীতে ২৪ হাজার ৪৫৬, ফরিদপুরে ১৯ হাজার ৪৫৬, শরীয়তপুরে ৯ হাজার ৯৫, মানিকগঞ্জে ৪৮ হাজার ৭০৬, ঢাকায় ৫ হাজার ৭১৮, মুন্সীগঞ্জে ৯ হাজার ৫৬৫, চাঁদপুরে ১৮৪, সুনামগঞ্জে ২০ হাজার ৭২০ ও রাজশাহীতে ১৫০টি রয়েছে। আর বন্যায় কুড়িগ্রামে ৭, রংপুরে ৮, গাইবান্ধায় ৯, সিরাজগঞ্জ ও টাঙ্গাইলে ৩ জন করে, জামালপুরে ৩০, রাজবাড়ীতে ৬, ফরিদপুরে ও ঢাকায় ২ জন করে, মানিকগঞ্জে ৫ ও সুনামগঞ্জে একজন মারা গেছেন।
×