ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

জনপ্রতিনিধি ও শিক্ষক নেতাদের ক্ষোভ

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা পরিষদের সভাপতির দায়িত্ব পাচ্ছেন আমলারা

প্রকাশিত: ০৬:০১, ১ সেপ্টেম্বর ২০১৬

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা পরিষদের সভাপতির দায়িত্ব পাচ্ছেন আমলারা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সংসদ সদস্যদের সরিয়ে এবার রাজধানীর তিন শীর্ষস্থানীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ চারটি প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পরিষদের সভাপতির দায়িত্ব দেয়া হয়েছে আমলাদের হাতে। আরও শতাধিক প্রতিষ্ঠানেও আমলাদের বসানোর প্রক্রিয়াও চূড়ান্ত। কমিটিতে স্থান পাচ্ছেন না, শিক্ষক ও শিক্ষানুরাগীরা। এতে শিক্ষা প্রশাসনে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, শিক্ষক ও শিক্ষক নেতারা আমলাদের কমিটিতে বসানোর প্রতিবাদে আন্দোলনের হুমকি দিয়েছেন। রাজধানীর নামীদামী প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষ থেকে আমলাদের ঢুকতে দেয়া হবে না বলেও হুমকি দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মাহবুবুর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, ‘আন্দোলন করে কোন লাভ হবে না; আমরা আইন অনুযায়ীই এডহক কমিটি গঠন করেছি।’ তিনি জানান, ‘এডহক কমিটির দায়িত্ব যাদের দেয়া হয়েছে, তাদের বেশিরভাগই প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা।’ তবে স্থানীয় গণ্যমান্য ও শিক্ষাবিদদের কেন কমিটিতে রাখা হয়নি এ বিষয়ে কোন উত্তর দিতে পারেননি চেয়ারম্যান। এ বিষয়টিতে কোন কথা বলতে রাজি নয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ও। ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের অধীনন্থ সাতটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিশেষ কমিটি বাতিল করে এডহক কমিটি গঠন করা হয়েছে। এর মধ্যে ভিকারুন নিসা নূন স্কুল এ্যান্ড কলেজের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি পদে শিক্ষামন্ত্রীর একান্ত সচিব (পিএস) নাজমুল হক খান, মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল এ্যান্ড কলেজের সভাপতি মন্ত্রীর সাবেক পিএস ও মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. মোল্লা জালাল এবং উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল এ্যান্ড কলেজের সভাপতির দায়িত্ব দেয়া হয়েছে ঢাকা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিনকে। তিন প্রতিষ্ঠানে সভাপতিসহ চারজনের সমন্বয়ে গঠিত হয়েছে এডহক কমিটি। এই তিনটি প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পরিষদের সভাপতি ছিলেন স্থানীয় এমপি রাশেদ খান মেনন। এছাড়াও ঢাকা প্রেসিডেন্সি কলেজের এডহক কমিটির দায়িত্ব স্থানীয় এক ব্যক্তি, ঢাকা জেলার দোহারের বেগম আনোয়ারা গার্লস পাইলট স্কুল এ্যান্ড কলেজের দায়িত্ব স্থানীয় এক ব্যক্তি, মিরপুর বাঙলা উচ্চ বিদ্যালয়ের দায়িত্ব স্থানীয় এক ব্যক্তি এবং নেত্রকোনার শহীদ স্মৃতি মহাবিদ্যালয়ের এডহক কমিটির দায়িত্ব দেয়া হয়েছে স্থানীয় জেলা প্রশাসককে। এ বিষয়ে শিক্ষক-কর্মচারী সংগ্রামী ঐক্যজোটের প্রধান সমন্বয়কারী নজরুল ইসলাম রনি জনকণ্ঠকে বলেন, ‘আমলা ছাড়া দেশে কী গ্রহণযোগ্য ও শিক্ষিত লোকের অভাব ছিল? এটা খুবই দুঃখজনক। আমরা কোনক্রমেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আমলাদের মেনে নেব না। কারণ এমনিতেই আমলাদের কাছে ঘুরতে ঘুরতে আমরা কাহিল। টাকা-পয়সা ছাড়া আমলাদের কাছে কোন সেবা মিলে না।’ এ সিদ্ধান্তের বিষয়ে আন্দোলনে যাওয়ার হুমকিও দেন এই শিক্ষক নেতা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল এ্যান্ড কলেজের পরিচালনা পরিষদের সর্বশেষ কমিটির সদস্য ও মতিঝিল এলাকার কাউন্সিলর মনসুর আহমেদ বলেন, ‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে জঙ্গীবাদ মুক্ত করার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে আমাদের। আর প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করবেন আমলারা, তা মেনে নেয়া হবে না। এই প্রতিষ্ঠানে কোন আমলাকে ঢুকতে দেয়া হবে না।’ তিনি আরও বলেন, আমলাদের ভেতরে থাকা বিএনপি জামায়াতের লোকজন এসে এখানে বৈঠক করবে আর সিদ্ধান্ত নেবে এটা হতে দেয়া হবে না। সরকার সমর্থক মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি মোঃ আজিজুল ইসলাম পরিচালনা পর্ষদে আমলাদের বসানোর প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, এমপিদের সরিয়ে এখন যদি আমলাদের হাতে ছেড়ে দেয়া হয় তাহলে সঙ্কট আরও বাড়বে। আমাদের দাবি স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি ও শিক্ষাবিদদের কমিটির নেতৃত্ব দিতে হবে। অন্যথায় কেউ এটা গ্রহণ করবে না। ৩১ আগস্টের মধ্যে বিশেষ কমিটি পরিচালিত বা যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পরিষদের সভাপতি এমপিরা রয়েছেন, সেসব প্রতিষ্ঠানে এডহক কমিটি করার বাধ্যবাধকতা ছিল। কমিটি দেয়ার দায়িত্ব ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের। সে ক্ষেত্রে আমলাদের এডহক কমিটিতে রাখতে হবে এমন কোন বাধ্যবাধকতা নেই। স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি ও শিক্ষাবিদদের এডহক কমিটিতে রাখার বিধান আছে। কিন্তু শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও শিক্ষা বোর্ড স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি, শিক্ষাবিদ ও শিক্ষক সকলকে বাদ দিয়ে কেবল আমলাদের হাতে কমিটির দায়িত্ব ছেড়ে দিচ্ছে। বিষয়টি শিক্ষাঙ্গনকে অস্থির করে তুলবে বলে বলছেন শিক্ষক-শিক্ষাবিদরা।
×