ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সম্ভাব্য ফলাফল মূল্যায়ন করে দেখা হচ্ছে

ভারত-মার্কিন চুক্তি ॥ পাকিস্তানের আশঙ্কা

প্রকাশিত: ০৪:৩৪, ১ সেপ্টেম্বর ২০১৬

ভারত-মার্কিন চুক্তি ॥ পাকিস্তানের আশঙ্কা

পাকিস্তান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের মধ্যে সদ্য স্বাক্ষরিত সামরিক চুক্তির সম্ভাব্য ফলাফল মূল্যায়ন করে দেখছে। এ চুক্তিতে দুটি দেশকে একে অপরের স্থল, বিমান ও নৌঘাঁটি ব্যবহার করার সুযোগ দেয়া হয়েছে। সামরিক রসদ সরবরাহ সম্পর্কিত ঐ চুক্তিটি পাকিস্তানের সামরিক স্বার্থ ব্যাহত করবে না বলে আশ্বাস দেয়া সত্ত্বেও পাকিস্তান একে আশঙ্কার চোখে দেখছে। খবর এক্সপ্রেস ট্রিবিউনের। মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী এ্যাস্টন কার্টার ও তার ভারতীয় প্রতিপক্ষ মনোহর পারিকরের সোমবার স্বাক্ষরিত চুক্তিটিকে চীনের ক্রমবর্ধমান নৌশক্তি বিশেষত দক্ষিণ চীন সাগরে এর শক্তিমত্তা প্রদর্শন মোকাবিলা করতে দুটি দেশের চেষ্টার অংশ হিসাবে দেখা হচ্ছে। পাকিস্তান চুক্তিটির বিষয়ে এখনও সরকারীভাবে কোন প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত না করলেও ভারত যুক্তরাষ্ট্র চুক্তিটি এরই মধ্যে উত্তেজনার কবলে পড়া অঞ্চলটিতে সামরিক শক্তির ভারসাম্য বদলে দিতে পারে। কর্মকর্তারা জানান, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ চুক্তিটির বিস্তারিত দিক এবং জাতীয় নিরাপত্তার ওপর এর সম্ভাব্য নেতিবাচক প্রভাব পরীক্ষা করে দেখছে। যখন ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের চলমান সহিংসতার কারণে পাকিস্তান ও ভারতের সম্পর্কে চিড় ধরেছে, তখন ঐ চুক্তিটি সই হলো। একই সময়ে সামরিক সহায়তা ও এফ-১৬ জঙ্গী বিমান কেনার তহবিল আটকে দিতে ওয়াশিংটনের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তগুলো নিয়ে ইসলামাবাদ ক্রমশ উদ্বিগ্ন হচ্ছে। গত সপ্তাহে মার্কিন কর্মকর্তারা ঐ প্রতিরক্ষা চুক্তি নিয়ে পাকিস্তানের উদ্বেগ দূর করতে ইসলামাবাদ সফর করেন। কূটনৈতিক সূত্রে একথা বলা হয়। বিভিন্ন সূত্রে আরও বলা হয়, মার্কিন প্রেসিডেন্টের বিশেষ সহকারী এবং দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক সিনিয়র ডিরেক্টর ড. পিটার লেভয় এবং পাকিস্তান ও আফগানিস্তানে নিযুক্ত বিশেষ মার্কিন প্রতিনিধি রিচার্ড অলসন ভারত-যুক্তরাষ্ট্র চুক্তিটি ইসলামাবাদের স্বার্থের ক্ষতি করবে না বলে পাকিস্তানী কর্তৃপক্ষকে আশ্বাস দেন। কিন্তু ইসলামাবাদের কর্মকর্তাদের সঙ্গে ঘরোয়া কথাবার্তায় বোঝা যায় যে, পাকিস্তান তাদের আশ্বাসে নিশ্চিত হতে পারেনি এবং চুক্তিটিকে উদ্বেগ ও সন্দেহের চোখে দেখছেন। স্বতন্ত্র পর্যবেক্ষকরাও মনে করেন, চুক্তিটি চীন ও পাকিস্তানের জন্য বিরক্তির কারণ হবে। দুটি দেশ বর্তমানে ৪ হাজার ৬শ’ কোটি ডলার ব্যয়সাপেক্ষ চায়না-পাকিস্তান ইকোনমিক করিডর (সিপিইসি) প্রকল্প নিয়ে কাজ করছে। এ প্রকল্প নিয়ে ওয়াশিংটন ও নয়াদিল্লী উভয়ই বিচলিত। সরকারীভাবে চীন মঙ্গলবার ঐ চুক্তির প্রতি সতর্ক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে। চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হুয়া চুনইং ভারত-যুক্তরাষ্ট্র লজিস্টিকস এক্সচেঞ্জ মেমোরেন্ডাম অব এ্যাগ্রিমেন্ট (লেমোয়া) সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাব দেন। তিনি বলেন, আমরা সংশ্লিষ্ট খবরটি দেখেছি। আশা করছি, ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের এ সহযোগিতা অঞ্চলে স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের প্রসারে সহায়ক হবে। তিনি আরও বলেন, আমরা দু’পক্ষের এরূপ স্বাভাবিক সহযোগিতা দেখতে পেলে খুশি হব। কিন্তু চীনের রাষ্ট্রীয় গ্লোবাল টাইমস পত্রিকার এক সম্পাদকীয়তে ভারতের প্রতি এর নিরপেক্ষতা ত্যাগ না করার আহ্বান জানানো হয়। “ভারত কি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে জোট বাঁধতে চাচ্ছে?” শিরনামে সম্পাদকীয়টি প্রকাশিত হয়। এতে বলা হয়, ভারতের জোটনিরপেক্ষ নীতির কারণে দেশটি সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, চীন ও রাশিয়ার মতো বড় বড় শক্তির মনোযোগ আকর্ষণ করে। এখন দৃশ্যত ভারতের সামরিক শক্তি দেখানোর সবচেয়ে বেশি সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তড়িঘড়ি জোট গঠন ভারতের নিরপেক্ষতা জোরদার করার বদলে তা ক্ষুণ্ণ করতে পারে। এতে বলা হয়, যদি ভারত যুক্তরাষ্ট্রের জোটে চট করে যোগ দেয়, তাহলে চীন, পাকিস্তান বা এমন কি রাশিয়া রাগ করতে পারে। এতে ভারত নিজেকে আরও নিরাপদ বোধ নাও করতে পারে, বরং এতে নিজের ওপর সামরিক বিপদই ডেকে আনতে পারে এবং নিজেকে এশিয়ায় ভূ-রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের এক কেন্দ্রে পরিণত করতে পারে।
×