ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

যাত্রাশিল্পে আমার ৫০ বছর উপলক্ষে বিশেষ আয়োজন করব ॥ মিলন কান্তি দে

প্রকাশিত: ০৪:০৮, ১ সেপ্টেম্বর ২০১৬

যাত্রাশিল্পে আমার ৫০ বছর উপলক্ষে বিশেষ আয়োজন করব ॥ মিলন কান্তি দে

যাত্রানট মিলন কান্তি দে। একাধারে যাত্রাভিনেতা, নির্দেশক-সংগঠক-গবেষক-পালাকার। গত ৫ আগস্ট ছিল যাত্রাশিল্পে তার ৫০ বছর পূর্তি। আজ ১ সেপ্টেম্বর তার ৬৮তম জন্মদিন। জন্মদিন ও যাত্রাশিল্পে ৫০ বছরসহ নানা বিষয় নিয়ে তার সঙ্গে কথা হয়। যাত্রাজীবন শুরু কেমন ছিল? মিলন কান্তি দে : অভিনয় ও আবৃত্তির প্রতি ছোটবেলা থেকেই আমার ঝোঁক ছিল। ছোট বেলায় প্রতিবছর দুর্গাপূজায় যাত্রাগানে মেয়ের চরিত্রে অভিনয় করতাম। অনেকে আমাকে মেয়ে মনে করে হাসাহাসি করত। ১৯৬৬ সালের ৫ আগস্ট ১৮ বছর বয়সে আমি যাত্রায় যোগ দেই। পেশাদার যাত্রায় যুক্ত হলেন কিভাবে? মিলন কান্তি দে : ১৯৬৩ সালে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে চলে যাই। সেখানে প্রাইমারি স্কুলে শিক্ষকতা করার সময় বরিশালের বাবুল যাত্রাপার্টিতে যোগ দেই। সেখানে ‘সোহ্রাব-রুস্তম’ এবং ‘এজিদ বধ’ যাত্রাপালায় অভিনয় করি। তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের নামকরা যাত্রাদল চট্টগ্রামের বাবুল অপেরায় মাসে ৬০ টাকা বেতনে স্মারক হিসেবে (প্রম্পটার) চুক্তিবদ্ধ হই। এর দু’বছর পর ১৯৬৯ সালে ওই দলেই অমলেন্দু বিশ্বাসের সান্নিধ্য পাই। বাংলার ঐতিহ্যবাহী এই শিল্পকে কীভাবে উন্নত করা যায়, সংস্কার করা যায়, নতুন চিন্তা ভাবনায় সুধী সমাজে উপস্থাপন করা যায়- এ চেতনা নিয়ে শুরু থেকে এ পর্যন্ত দিনরাত যাত্রার কাজ করে যাচ্ছি। অমলেন্দু বিশ্বাসের কাছে আমি এই কাজের প্রেরণা ও শক্তি পেয়েছিলাম। আমি তাঁকে ‘কাকাবাবু’ ডাকতাম। এ পর্যন্ত আপনার অভিনীত দল ও যাত্রাপালা কত? মিলন কান্তি দে : ৫০ বছরের অভিনয় জীবনে ২১টি যাত্রাদলে কাজ করেছি, ১২টি দলে নির্দেশনা দিয়েছি অভিনীত পালার সংখ্যা ১৫১, নির্দেশিত পালা ১১৫টি। এদেশে আমিই একমাত্র যাত্রাশিল্পী, আমার জন্যেই যাত্রাদলে নাট্য সম্পাদক পদ সৃষ্টি হয়েছিল। সেটা হয়েছিল ১৯৭৩ সালে চট্টগ্রামের বাবুল অপেরায় এবং ১৯৯৬ সালে মানিকগঞ্জের চারণিক নাট্যগোষ্ঠীতে। এটা আমার অন্যতম ভাল লাগার বিষয়। ৫০ বছরে যাত্রাশিল্প বিকাশে আপনার উল্লেখযোগ্য কাজ ? মিলন কান্তি দে : যাত্রাশিল্পে আমার উদ্যোগের মধ্যে রয়েছে ১৯৬৭ সালে যাত্রাদলে স্কুল খোলা, ১৯৬৯ সালে নতুন আঙ্গিকে যাত্রাপালার সূত্রধারের উপস্থাপন, ১৯৭১ যাত্রাদলে দেয়াল পত্রিকা প্রকাশ, ১৯৭৯ সালে ট্রেড ইউনিয়নভিত্তিক সংগঠন যাত্রাশিল্পী কুশলী ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠা, ১৯৮৮ সালে জাতীয় ক্ষেত্রে যাত্রাশিল্পের একমাত্র প্রতিনিধিত্বকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ যাত্রাশিল্প উন্নয়ন পরিষদের প্রতিষ্ঠা, ২০০৮ সালে যাত্রাশিল্পে একক অভিনয়, ২০০৩ সাল থেকে ‘যাত্রালোক’ পত্রিকা প্রকাশ, ২০০০ সাল থেকে পরিবেশ বিষয়ে এবং ২০১১ সাল থেকে সারাদেশে গণসাক্ষরতা অভিযান সহযোগিতায় আমার দল দেশ অপেরার তত্ত্বাবধানে শিক্ষা সচেতনতামূলক যাত্রাপালার আয়োজন অন্যতম। আপনি তো বেশ কয়েকটি পুরস্কার পেয়েছেন? মিলন কান্তি দে : হ্যা । সিকোয়েন্স এ্যাওয়ার্ড অব অনার, ইবসেন আন্তর্জাতিক সম্মাননা অমলেন্দু বিশ্বাস স্মৃতিপদক, নাট্যচক্র সম্মাননা পদক, ঢাকা মৌলিক নাট্যদল আজীবন সম্মাননা পেয়েছি। প্রাতিষ্ঠানিকভাবে আমি যাত্রাব্যক্তিত্ব হিসেবে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি থেকে স্বীকৃতি পেয়েছি। এই বয়সেও মুখস্থ কবিতা আবৃত্তি করেন কিভাবে? মিলন কান্তি দে : চেষ্টা, একাগ্রতা আর ইচ্ছাশক্তির ওপর সবই সম্ভব। বাক্য ও শব্দের অর্থ বুঝে মুখস্থ রাখার কিছু কণ্ঠশীলন জানতে হবে, প্রশিক্ষণ নিতে হবে। আমি গত বছর মধুসূদন দত্তের ‘মেঘনাদ বধ’ এর প্রথম সর্গের ৭২৫ পঙ্ক্তিসহ বিভিন্ন কবিতার ১৫৭৫ পঙ্ক্তিমালা মুখস্থ আবৃত্তি করেছি। আগামী নবেম্বরে ২২০০ পঙ্ক্তি মুখস্থ আবৃত্তি করব। আপনার বর্তমান ব্যস্ততা কী নিয়ে? মিলন কান্তি দে : প্রতি বছরের মতো এবারেও অক্টোবরে ‘অমলেন্দু স্মৃতিপদক’ প্রদান করব, যাত্রার সমস্যার ওপর একটি সংবাদ সম্মেলন করছি আগামী ৫ সেপ্টেম্বর, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগে যাত্রা বিষয়ে নিয়মিত ক্লাস নিচ্ছি। দুটি নতুন যাত্রাপালা তৈরি করছি। এ ছাড়া লেখালেখি তো আছেই। বর্তমান যাত্রাশিল্প নিয়ে আপনার ভাবনা কী? মিলন কান্তি দে : যাত্রা অনুষ্ঠানের অনুমতি সমস্যা এবং সঙ্কট নিরসনে সংবাদ সম্মেলন করব। পরে জাতীয় কনভেনশনেরও আয়োজন করব। আমাদের দাবি ঢাকায় একটি জাতীয় যাত্রামঞ্চ প্রতিষ্ঠা, প্রতিটি জেলায় যাত্রামঞ্চ, নতুন মৌসুমে যাত্রা অনুষ্ঠানের সহজ অনুমতির জন্যে যাত্রাশিল্প উন্নয়ন পরিষদ থেকে প্রত্যেক ডিসি অফিসে স্মারকলিপি প্রদান প্রভৃতি। ৫০ বছর আগে যাত্রাশিল্প উন্নয়নের লক্ষ্যে যাত্রাদলে এসেছিলাম। নানা প্রতিকূলতার মধ্যে আমাকে সংগ্রাম করতে হয়েছে। জীবনের শেষ দিনগুলোই আমি দেখে যেতে চাই, যাত্রাশিল্পীরা দু’বেলা দু’মুঠো খেতে পারছে। স্ত্রী-পুত্র, পরিবার-পরিজন নিয়ে নিশ্চিন্তে দিন কাটাচ্ছে। আমার স্বপ্ন আর যদি ৫ বছর বেঁচে থাকি, তাহলে এদেশে জাতীয় যাত্রামঞ্চ প্রতিষ্ঠা করে ছাড়ব। মৃত্যুকাল পর্যন্ত আমি যাত্রার জন্য লড়াই করে যাব। আজ আপনার জন্মদিনে বিশেষ কী আয়োজন থাকছে? মিলন কান্তি দে : আনুষ্ঠানিকভাবে জন্মদিন পালন না করলেও পারিবারিকভাবে কেক কাটা হবে। আমাদের যাত্রাশিল্প উন্নয়ন পরিষদের অফিসে আবৃত্তি করব। তবে আগামী নবেম্বরে আমার যাত্রাশিল্পে ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে বড় আয়োজন করব। -সাজু আহমেদ
×