ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বিসিক কর্মকর্তার জালিয়াতিতে মিল মালিকদের ক্ষোভ

অস্তিত্বহীন লবণ মিলের নামে প্রত্যয়ন বাণিজ্য

প্রকাশিত: ০৪:০৪, ১ সেপ্টেম্বর ২০১৬

অস্তিত্বহীন লবণ মিলের নামে প্রত্যয়ন বাণিজ্য

এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার ॥ অস্তিত্বহীন লবণ মিলের স্থায়িত্ব দেখিয়ে লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ ওঠেছে বিসিকের ইসলামপুর মনিটরিং কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে কিছুই বুঝতে না দিয়ে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে কয়েকজনকে মিলমালিক সাজিয়ে ভুয়া প্রত্যয়নপত্র ইস্যু করা হয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে। প্রতি প্রত্যয়ন বাবদ নেয়া হয়েছে দশ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত উৎকোচ। অস্তিত্বহীন লবণ মিল মালিক দাবিদাররা ইতোমধ্যে অতি কৌশলে লবণ আমদানির অনুমতি চেয়ে আবেদন করেছে সংশ্লিষ্ট দফতরে। বিসিক কর্মকর্তার এমন জালিয়াতি বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছে সংশ্লিষ্টদের। এদিকে ‘ভুয়া’ প্রত্যয়নপত্র দিয়ে কিছু ব্যক্তিকে লবণ আমদানি করতে আবেদনের সুযোগ করে দেয়ায় বিসিককে দুষছেন প্রকৃত লবণ মিল মালিকরা। এহেন জালিয়াতির ঘটনা ফাঁস হলে ইসলামপুর এলাকার লবণ মিল মালিকদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। জানা গেছে, কক্সবাজার সদরের ইসলামপুর গোমাতলী ঠিকানা উল্লেখ করে ‘ন্যাশনাল আয়োডাইজ সল্ট’ নামে প্রত্যয়নপত্র দিয়েছেন বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুঠির শিল্প কর্পোরেশনের (বিসিক) ইসলামপুর মনিটরিং অফিসার সঞ্জয় বাবু। ওই মিলটির মালিক দেখানো হয়েছে আবদুল্লাহ খান নামে এক ব্যক্তিকে। অথচ ওই স্থানে ‘ন্যাশনাল আয়োডাইজ সল্ট’ নামে কোন লবণ মিলের অস্তিত্ব নেই বলে প্রকৃত লবণ মিল মালিকরা জানিয়েছেন। একইভাবে ইসলামপুর লবণ শিল্প এলাকায় রাইসা সল্ট, মাজেদা সল্ট, গোমাতলীতে সাগর সল্ট, মহেশখালীর মাতারবাড়ীতে আলিফ সল্ট, কুতুবজুমে সাগরিকা সল্ট, চকরিয়া ডুলাহাজারায় চৌধুরী সল্ট, বদরখালীতে বিলকিস সল্ট নামে প্রত্যয়ন ইস্যু করা হয়েছে ইতোপূর্বে। এখানে মজার ব্যাপার হচ্ছেÑ যাদের এসব অস্তিত্বহীন লবণ মিলের মালিক দেখানো হয়েছে, তারা সবাই প্রভাবশালী। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওই সব এলাকায় এ জাতীয় লবণ মিলের অস্তিত্ব নেই মোটেও। দুয়েকটি লবণ মিল নামেমাত্র থাকলেও সচল নেই বর্তমানে। অথচ ওসব মিলকে সম্পূর্ণ চালু আছে মর্মে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। মূলত সরকারের লবণ আমদানির অনুমতির খবরে সুবিধাচক্রটি বিসিক কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে প্রত্যয়নপত্র হাতিয়ে নিয়েছে। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প কর্পোরেশনের (বিসিক) উপ-মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ আবসার উদ্দিন জানান, তাকে না জানিয়ে প্রত্যয়ন দেয়া হয়েছে। বিষয়টি তিনি উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে। এ বিষয়ে চৌধুরী সল্টের মালিক দাবিদার ফখরুদ্দিন চৌধুরীকে ফোন করে তার লবণ মিল কোথায় অবস্থিত? জিজ্ঞেস করলে কোন সদুত্তর দিতে পারেননি। টাকা নেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে বিসিক কর্মকর্তা সঞ্জয় বাবু বলেন, এসব মিলের নামে আগে নিবন্ধন ছিল। তারা নতুন করে আবেদন করেছে। ‘আবেদিত’ হিসেবে প্রত্যয়ন দেয়া হয়েছে। সূত্র জানায়, বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন (বিসিক) কক্সবাজার কার্যালয়ের মতে, উৎপাদিত লবণ পরিশোধন ও বাজারজাতকরণের লক্ষ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠেছে ৩৬০টির মতো লবণ মিল-কারখানা। এসব মিলের মধ্যে শুধু কক্সবাজার সদরের বিসিক শিল্পনগরী ইসলামপুরকেন্দ্রিক ৪০ মিলসহ জেলায় ছোট-বড় মিলে গড়ে উঠেছে অন্তত ৫০টি। এসব মিলের মধ্যে লাইসেন্স নবায়ন করেছে ৩৩টি, আবেদিত আছে ৫টি।
×