ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

জন কেরির সফর

প্রকাশিত: ০৪:০০, ১ সেপ্টেম্বর ২০১৬

জন কেরির সফর

সোমবার সংক্ষিপ্ত এক সফরে ঢাকায় এসে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি যে বার্তা দিয়ে গেছেন তা বাংলাদেশ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উভয় দেশের জন্য নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ। সন্ত্রাস দমনে দু’দেশের যৌথভাবে কাজ করা, মার্কিন বাজারে বাংলাদেশের শুল্কমুক্ত পণ্য প্রবেশ নিশ্চিত করা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে লুকিয়ে থাকা বঙ্গবন্ধুর খুনীদের বাংলাদেশের হাতে প্রত্যর্পণ ইত্যাদি বিষয়ে তিনি ইতিবাচক বক্তব্য রেখেছেন। আজকের দিনের বড় এক সমস্যা জঙ্গীবাদ। জঙ্গীবাদ নির্মূল করার প্রশ্নে তিনি দু’দেশের সহযোগিতার ব্যাপারে বক্তব্য রেখেছেন। সন্ত্রাস দমনে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তার ব্যাপারে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠককালে গুরুত্বপূর্ণ অভিমত প্রকাশ করেছেন। তিনি সন্ত্রাস বিষয়ক তথ্য আদান-প্রদানে বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে নিবিড় সহযোগিতার কথা বলেছেন। তাঁর সঙ্গে বৈঠককালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র প্রযুক্তিতে উন্নত বলে অনেক তথ্য তাদের হাতে আসে। সে তথ্য পাওয়া গেলে জঙ্গী সন্ত্রাসীদের নির্মূলের কাজ সহজতর হবে। জন কেরি ধানম-ির ৩২ নম্বরে গিয়ে জাতির পিতার প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেছেন। ১৯৭১ সালে মার্কিন সরকার মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করলেও মার্কিন জনগণ ছিল মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে। তিনি বলেছেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে সমৃদ্ধির পথে। জন কেরির এ সফর সংক্ষিপ্ত হলেও ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর আগে ২০১২ সালে তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন এ দেশে এসেছিলেন। এর আগেও এসেছিলেন তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন। হাসিনা সরকারের আমলেই এই দুই মার্কিন উচ্চপর্যায়ের ব্যক্তিত্ব এসেছিলেন এ দেশে। তবে এবারই প্রথম জন কেরি বাংলাদেশের স্থপতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করলেন ঐতিহাসিক ৩২ নম্বর বাড়িতে গিয়ে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক বহুমুখী। জন কেরির সফরে এই বহুমুখী সম্পর্ক আরও দৃঢ়তর হবে এ প্রত্যাশা বাংলাদেশের জনগণের। জঙ্গীবাদ নির্মূলে তিনি যে সহযোগিতার কথা বলেছেন তা বাংলাদেশের জন্য সবিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। তার সঙ্গে বৈঠককালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অস্ত্র ছাড়া বাংলাদেশের পণ্যের শুল্ক ও কোটামুক্ত প্রবেশাধিকার প্রত্যাশা করেছেন এবং একই সঙ্গে বাংলাদেশের বাজারে আরও মার্কিন বিনিয়োগের যে আশা ব্যক্ত করেছেন তা কার্যকর হবে বলে প্রত্যাশা করা যায়। বঙ্গবন্ধুর পলাতক খুনীদের বাংলাদেশে ফিরিয়ে দেয়ার ব্যাপারেও মার্কিন সরকার কার্যকর ব্যবস্থা নেবে সে প্রত্যাশা এখন দৃঢ় হলো। এখনও যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের রফতানির বড় বাজার রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর রফতানি পণ্যে জিএসপি সুবিধা প্রত্যাহার করা হয় এবং এই সুবিধা ফেরত পাবার জন্য বেশ কিছু শর্ত দেয় তারা। সেগুলোর প্রায় সবই পূরণ করা হলেও আজও সে সুবিধা পাওয়া যায়নি। আশা করা যায় এবার সেই প্রত্যাশা পূরণ হবে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এই স্বল্পকালীন সফর দু’দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদী ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে এত সন্দেহ নেই। বাস্তবতার আলোকে দু’দেশের সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় উন্নীত হবে সেটাই প্রত্যাশা।
×