ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

মীর কাশেমের ফাঁসিই বহাল

প্রকাশিত: ০৩:৫৯, ১ সেপ্টেম্বর ২০১৬

মীর কাশেমের ফাঁসিই বহাল

নানা শঙ্কা ও গুজব উড়িয়ে দিয়ে মঙ্গলবার মীর কাশেমের ফাঁসি বহাল রেখে রিভিউ আবেদন খারিজ করে দিয়েছে সর্বোচ্চ আদালত। তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে এখন আর কোন আইনগত বাধা থাকল না। পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর সহায়ক হিসেবে হত্যা, লুটপাটসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকা-ে জড়িত ছিল এই আলবদর নেতা। একাত্তরে মুক্তিযোদ্ধা ও স্বাধীনতাকামী বাঙালীর মূর্তিমান আতঙ্ক হিসেবে আবির্ভূত হতো মীর কাশেম। এই নরহত্যাকারী ছিল হানাদার সহযোগী জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘের পূর্ব পাকিস্তান শাখার সাধারণ সম্পাদক। একই সঙ্গে আলবদরের চট্টগ্রাম শাখার প্রধান। সে কেবল অপরাধমূলক কর্মকা-ে অংশই নিত না, একই সঙ্গে তার সশস্ত্র সহযোগীদেরও অপরাধ সংঘটনের নির্দেশদাতা ছিল। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ফাঁসিতে ঝুলিয়ে তার মৃত্যুদ- কার্যকর করার যে নির্দেশ দিয়েছিল আপীল বিভাগ সেটাই বহাল রাখে। মামলা চলাকালে প্রসিকিউশন ৬৪ বছর বয়সী মীর কাশেমকে আখ্যায়িত করে পাকিস্তানী খান সেনাদের সঙ্গে মানবতাবিরোধী অপরাধে লিপ্ত হওয়া ‘বাঙালী খান’ হিসেবে। ট্রাইব্যুনালের রায়ে দুই অভিযোগে তার মৃত্যুদ- এবং ৮ অভিযোগ মিলিয়ে ৭২ বছরের কারাদ- হয়। সেই রায়ের বিরুদ্ধে আপীলেও মৃত্যুদ- বহাল থাকে। পরে রিভিউ আবেদন করে তার আইনজীবীরা। এতে সময় বাড়ানোসহ নানা কৌশল অবলম্বনের চেষ্টা চালায় আইনজীবীরা। গত রবিবার সেই আবেদনের শুনানি শেষ হয়। উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালে চট্টগ্রামে অপহরণ করে হত্যার দুটি অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল তাকে এই মৃত্যুদ- দেয়। তার বিরুদ্ধে আনা ১৪টি অভিযোগের ১০টি প্রমাণিত হয়েছে। মীর কাশেমের নির্দেশে একাত্তর সালে চট্টগ্রামের মহামায়া হোটেলকে ডালিম হোটেলে রূপান্তরিত করে টর্চার সেলে পরিণত করা হয়েছিল। চট্টগ্রামে হেন অপরাধ নেই যা মীর কাশেমের নির্দেশে তার বাহিনী করেনি। স্বাধীনতার পর আত্মগোপনে থাকা মীর কাশেম ’৭৫-এর পর জিয়াউর রহমানের পৃষ্ঠপোষকতায় প্রকাশ্যে আসে এবং ইসলামী ছাত্রসংঘকে ইসলামী ছাত্রশিবিরে রূপান্তরিত করে তার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হয়। ১৯৮৫ সাল থেকে জামায়াতের শীর্ষ নেতার আসন নেয় সে। আলবদর থেকে পরিণত হয় ধনকুবেরে, জামায়াতের আর্থিক ভিত্তি মজবুত করার কাজে সে ছিল সক্রিয়। মানবতার বিরুদ্ধে যারা মুক্তিযুদ্ধকালে গণহত্যা, নারী ধর্ষণ, খুন-নির্যাতন, অগ্নিসংযোগের মতো জঘন্য মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে, তাদের যে বাংলাদেশ ক্ষমা করেনি, সে সত্যই বাক্সময় করে তুলেছে এ দেশের মানুষ। ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মহাজোটের প্রতি সংখ্যাগরিষ্ঠ সমর্থন দিয়ে জনগণ প্রমাণ করেছে তারা ঘাতকদের বিচার চায়। মহাজোটের নির্বাচনী মেনিফেস্টোতে সুস্পষ্ট অঙ্গীকার ছিল একাত্তরের মানবতাবিরোধীদের বিচার করার বিষয়টি। দেশের তরুণ প্রজš§, বিশেষ করে নতুন ভোটারদের কাছে এ অঙ্গীকার বিপুল গ্রহণযোগ্যতা যে পেয়েছিল, তা তাদের সমর্থনেই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনেও এই অঙ্গীকার বজায় রাখার কথা উল্লেখ করা হয়। বর্তমান সরকার তাদের সব অঙ্গীকার পূরণ করতে পেরেছে এমন বলা যাবে না, তবে লাখো শহীদের রক্ত ফসল এই দেশে যারা খুন-ধর্ষণ, গণহত্যার মতো অপরাধ করেছে, তাদের বিচারের মুখোমুখি করতে পেরেছে। ইতোমধ্যে দোষী প্রমাণিত বেশ কয়েকজন যুদ্ধাপরাধীর অপরাধের আপীল-রিভিউ সম্পন্নের পর বিচারের রায় কার্যকর করেছে সরকার। এই বিচার প্রক্রিয়ার ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার সর্বশেষ রায় হলো মীর কাশেম আলীর। কাশেম আলীর মৃত্যুদ- বহাল- এ খবর মুহূর্তের মধ্যে ছড়িয়ে গেছে গণমাধ্যমের কল্যাণে বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বে। মানবতাবিরোধী অপরাধে মীর কাশেম আলীর মৃত্যুদ- এ সত্যই জানিয়ে গেল যে, অপরাধ যত আগেই সংঘটিত হোক না কেন তা কখনও তামাদি হয় না। আন্তর্জাতিক বিশ্বও যুদ্ধাপরাধের বিচারে বয়স এবং সময় মানেনি। ঘটনার ৬০ বছর পরও বিচারের নজির রয়েছে। এই রায়কে দ্রুত কার্যকর করতে হবে- এটা জাতির প্রত্যাশা।
×