ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

গুজবের ডালপালা;###;মোঃ রফিকুল ইসলাম

সমাজ ভাবনা ॥ এবারের বিষয় ॥ গুজব ও অপপ্রচার

প্রকাশিত: ০৩:৫৫, ১ সেপ্টেম্বর ২০১৬

সমাজ ভাবনা ॥ এবারের বিষয় ॥ গুজব ও অপপ্রচার

যে সমাজে যথেষ্ট সংখ্যক মানুষের অজ্ঞতা, অশিক্ষা, অদৃষ্টবাদিতা, কুসংস্কার, ধর্মান্ধতা, অনৈতিকতা ও অপরাজনৈতিক সংস্কৃতি রয়েছে, সেখানে গুজব ও অপপ্রচার বাসা বাঁধে অনায়াসে। আমাদের সমাজে “চিলে কান নিয়েছে”, “তিলকে তাল করা”, “ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করা”, “হাওয়া থেকে পাওয়া” ইত্যাদি বাগধারাগুলো মূলতঃ গুজব ও অপপ্রচারকে কেন্দ্র করেই উদ্ভূত। বাঙালী সমাজে সবচেয়ে বেশী গুজব ও অপপ্রচার ছড়ানো হয়েছে মনে হয় রাজনৈতিক ক্ষেত্রে। বাংলার শেষ নবাব সিরাজুদ্দৌলার জনপ্রিয়তা কমানোর জন্যেও ইংরেজরা মোক্ষম অস্ত্র হিসেবে গুজব ও অপপ্রচারকে ব্যবহার করেছিলো। মহান মুক্তিযুদ্ধের দিনগুলোতেও পাকিস্তানী ঘাতক বাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসরেরা গুজব ও অপপ্রচারের আশ্রয় নিয়েছিলো। যেমন, দেশ স্বাধীন হলে তা ভারতের অংশ হয়ে যাবে, দেশের মসজিদগুলো সব মন্দিরে পরিণত করা হবে এবং মাদ্রাসা শিক্ষা বন্ধ করে দেয়া হবে, কেউ মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিলে কাফের হবে- ইত্যাদি। স্বাধীনতার পরেও বঙ্গবন্ধু পরিবারের জনপ্রিয়তা কমানোর জন্যে বিভিন্ন কুৎসা, গুজব ও অপপ্রচার চালানো হয়। এদেশে নির্বাচনী মৌসুমে প্রতিপক্ষ দল ও প্রতিদ্বন্দ্বীকে ঘায়েল করতে এর ব্যবহার হয় বিনাশী অস্ত্র হিসেবে। গুজব ও অপপ্রচারের শিকার বেশি হয় নারী। প্রেমে ব্যর্থ হয়ে প্রেমিককুল, এক নারী অন্য নারীর বিরুদ্ধে, কোন পরিবারের ইমেজের ক্ষতি করতে বা মিডিয়ার কাটতি বাড়াতে সেলিব্রিটি মহিলাদের বিরুদ্ধে গুজব বা অপপ্রচার হয় হর-হামেশাই। হীন ব্যবসায়িক স্বার্থেও ছড়ানো হয় গুজব ও অপপ্রচার। ধর্মান্ধ ও উগ্র সাম্প্রদায়িক ব্যক্তিগণও অন্য ধর্ম ও সম্প্রদায়ের ক্ষতিসাধনের জন্য বিভিন্ন গুজব রটিয়ে থাকেন। গুজব রটে মন্ত্রীত্বের ও পদত্যাগের, গুজব রটে প্রশ্ন ফাঁসের, জঙ্গী ও বোমা হামলার। এখানে গুজবে নিঃশেষ হয় বৃটিশ আমলের সীমানা পিলার, তামা-রূপার টাকা, তক্ষকসহ বিভিন্ন বিরল প্রাণী। উদ্দ্যেশ্য যাই হোক, গুজব ও অপপ্রচার অত্যন্ত গর্হিত ও সমাজবিরোধী কাজ। এ থেকে সমাজ ও রাষ্ট্রকে রক্ষা করতে হবে। বিজ্ঞান-প্রযুক্তি ও মিডিয়ার এ যুগে খুব সহজেই তা করা যায়। যে কোন আজব সংবাদকে- হুজুগে নয়, যুক্তি দিয়ে বিচার করা; নির্ভরযোগ্য ব্যক্তি দ্বারা তা পরীক্ষা করা সমীচীন। দুর্গাপুর, নেত্রকোনা থেকে
×