ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

অযত্ন অবহেলায় বেড়ার দৃষ্টিনন্দন ‘বীরবাঙালি’ ভাস্কর্য

প্রকাশিত: ১৮:১৬, ৩১ আগস্ট ২০১৬

অযত্ন অবহেলায় বেড়ার দৃষ্টিনন্দন ‘বীরবাঙালি’ ভাস্কর্য

সংবাদদাতা, বেড়া, পাবনা ॥ মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস যেমন বাঙালি জাতির ইতিহাস, পাবনার বেড়া-সাঁথিয়া উপজেলার সংযোগস্থল ডাববাগানের ঐতিহাসিক সম্মুখযুদ্ধও তেমনি মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে একটি মাইলফলক। একাত্তরের ১৯ এপ্রিল দুপুরে বেড়ার নগরবাড়ি ঘাট হয়ে পাকিস্তানি সেনারা বগুড়ায় যাওয়ার চেষ্টা করলে মুক্তিসেনারা ডাববাগানে অবস্থান নেন। পাকিস্তানি সেনারা সম্মুখযুদ্ধে টিকতে না পেরে আবার নগরবাড়িতে ফিরে যায়। এ সময় যুদ্ধে প্রায় অর্ধশত পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়। অন্যদিকে, ইপিআর হাবিলদার মমতাজ আলী, হাবিলদার আব্দুর রাজ্জাক, নায়েক হাবিবুর রহমান, সিপাহি এমদাদুল হক, সিপাহি ঈমান আলী এবং সিপাহি রমজান আলীসহ আরো অনেক ইপিআর সদস্য শহীদ হন। পরবর্তীতে সম্মুখযুদ্ধে পিছু হটে যাওয়া পাক বাহিনী নতুন করে আক্রমণের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করতে থাকে। তারা শক্তি বৃদ্ধি করে রাতে আবার আক্রমণ চালায়। এবার মুক্তিসেনারা পিছু হটলে পাক সেনারা গ্রামবাসীর ওপর অত্যাচার-নির্যাতন চালায়। একে একে ডাববাগানের পার্শ্ববর্তী রামভদ্রবাটি, কোরিয়াল, বড়গ্রাম ও সাটিয়াকোলা গ্রাম পুড়িয়ে দেয়। তারা নির্বিচারে নিরীহ গ্রামবাসীর ওপর গুলি চালায়। এদিন পাকিস্তানীরা সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে গুলি করে শত শত স্বাধীনতাকামী গ্রামবাসীকে হত্যা করে। পরবর্তীতে এলাকাবাসী শহীদদের স্মৃতির প্রতি সম্মান জানিয়ে জায়গাটির (ডাববাগান) নতুন নামকরণ করেন ‘শহীদনগর’। শহীদনগরে ইপিআরদের ‘গণকবর’ রয়েছে। এখানে আরো ঘুমিয়ে আছে শত শত মুক্তিপাগল গ্রামবাসী। শহীদ এই মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতিকে স্মরণীয় করে রাখতে ও নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে বেড়া ও সাঁথিয়া উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২০০১ সালে এখানে ‘বীরবাঙালি’ নামে একটি দৃষ্টিনন্দন স্মৃতি ভাস্কর্য নির্মাণ করা হয়। তবে সম্প্রতি অযতœ আর অবহেলায় ভালো নেই ভাস্কর্যটি। এটা নির্মাণ করেই যেন কর্তৃপক্ষ তাদের দায়িত্ব শেষ করেছে, পরিচর্যার কোনো লোক নেই। সরেজমিনে দেখা যায়, ভাস্কর্যটির পাশে এলাকার অনেকেই গরু-ছাগল বেধে রাখে। ফলে গরু-ছাগলের পায়খানা প্রশ্বাবে দূর্গন্ধে দর্শনার্থীরা সেখানে যেতে পারে না। ময়লা আবর্জনায় পূর্ণ থাকলেও তা পরিস্কার করার উদ্যোগ নেয়া হয়নি। এমনকি রাতে এখানে আলোর ব্যবস্থাও রাখা হয়নি। পার্শ্ববর্তী শহীদনগর উচ্চ বিদ্যালয়ের কয়েক শিক্ষার্থী জানায়, এলাকার বখাটেরা এখানে বসে তাস খেলে ও সন্ধ্যার পরে নেশা করে। কেউ কেউ দিনে-রাতে প্রায় সব সময় এখানে বসে বখাটেপনা করে থাকে। স্থানীয়দের সাথে কথা বললে তারা বলেন, এ ভাস্কর্য সত্যিকার অর্থে রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব কার তা তাদের জানা নেই। বছরে একবার বেড়া ও সাঁথিয়া থেকে মুক্তিযোদ্ধারা আসেন পুষ্পার্পন করতে। তারপরে আবার যা, তাই। বেড়া উপজেলা চেয়ারম্যান বীরমুক্তিযোদ্ধা আব্দুল কাদের এ প্রসঙ্গে বলেন, ভাস্কর্যটি দেখাশোনার জন্য আমাদের পৃথক কোনো উদ্যোগ বা জনবল নেই। আমাদের পক্ষে সার্বক্ষণিক পাহারার ব্যবস্থা করাও সম্ভব নয়। তিনি বলেন, ভাস্কর্যটি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য স্থানীয় জনগণকে সচেতন হতে হবে।
×