ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

গুজরাট মোদির জন্য দুঃস্বপ্ন হতে পারে

প্রকাশিত: ০৬:৩৫, ৩১ আগস্ট ২০১৬

গুজরাট মোদির জন্য দুঃস্বপ্ন হতে পারে

ভারতের গুজরাট রাজ্য বিজেপির অভ্যন্তরে ঘোর সঙ্কট চলছে। চলতি মাসের শুরুতে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী আনন্দিবেন প্যাটেলের পদত্যাগের মধ্য দিয়ে সেই সঙ্কটের প্রতিফলন ঘটেছে। সেই সঙ্কট চলতে থাকলে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির গুজরাট মডেল বিপদের মুখে পড়তে পারে। আনন্দিবেনের পদত্যাগ কোন আকস্মিক ব্যাপার ছিল না। দুটি সম্প্রদায়ের তীব্র বিক্ষোভ আন্দোলনের মুখে যে সঙ্কট তৈরি হয়েছিল তা ঠিকমতো সামাল দিতে না পারায় দলের অভ্যন্তরে তার পদত্যাগের দাবি উঠেছিল। আনন্দিবেনের ঘোর সমালোচক বিজেপি সভাপতি অমিত শাহও তাকে সরিয়ে দিতে বলেছিলেন। আনন্দিবেনের বিরুদ্ধে সরকার পরিচালনার পাঁচটি বড় ধরনের ভ্রান্তির অভিযোগ আনা হয়। তিনি দলিত সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে সহিংসতার পর ব্যবস্থা নিয়েছিলেন বটে তবে সেটাকে পুঁজি করে রাজনীতি ফায়দা লুটতে পারেননি। যার ফলে বিরোধীদলীয় নেতারা পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। উল্লেখ করা যেত পারে যে, গত জুলাই মাসে উনা দলিতদের বিক্ষোভ ফেটে পড়েছিল। সেখানে কথিত গোহত্যার অভিযোগে শিব সৈনিকরা দলিতদের নগ্ন করে চাবুক মারছিল এমন ভিডিও দৃশ্য ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়লে প্রথমে উনা তারপর গোটা রাজ্য দলিতদের বিক্ষোভে প্রকম্পিত হয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে শেষ পর্যন্ত মোদিকেই এগিয়ে আসতে হয়ছিল। এটাও তার বিদায়ের পথ রচনা করে। এদিকে প্যাটেল সম্প্রদায় তারে জন্য চাকরির কোটা সংরক্ষণের দাবিতে আন্দোলনে নামে। পুলিশ তাদের নিষ্ঠুরভাবে লাঠিপেটা ও ধারপাকড় করে বিক্ষোভ থামিয়ে দেয়। তবে আনন্দিবেনে এই বিক্ষোভের তীব্রতা ও ব্যাপকতা এবং এর তাৎপর্য ঠিকমতো হৃদয়ঙ্গম করতে পারেননি। বিক্ষোভের এই দুটি ঘটনা ত্রুটিপূর্ণভাবে মোকাবেলার ব্যাপারটি ছাড়াও অভিযোগ আছে যে আনন্দিবেনের সিনিয়র মন্ত্রিবর্গ ও দলীয় নেতাদের সঙ্গে সৌহার্দ্য সম্পর্ক রক্ষা করতে পারেননি। তার পরিবারের লোকরা প্রশাসনে নাক গলিয়ে ছিল এবং নিয়ম ভঙ্গ করে ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিল করেছিল। তার চেয়েও বড় কথা তিনি আমলাতন্ত্র ও পুলিশ বাহিনীর ক্রমবর্ধমান দুর্নীতির রাশ টেনে ধরতে পারেননি। আনন্দিবেনের প্রস্থান বিজেপির নানা সমস্যার একটি সমস্যার সমাধান এনে দিয়েছে বটে। কিন্তু বাকি সমস্যাগুলোর কি হবে? অথচ রাজ্যসভার নির্বাচনের আর এক বছরের বেশি সময় বাকি আছে। এ সময়ের মধ্যে কি দলের সমস্যাগুলো কাটিয়ে ওঠা যাবে? মোদির গুজরাট মডেলেরই বা কি হবে? গত বছর পর্যন্ত বিজেপির ২০১৭ মিশন উত্তর প্রদেশে একটা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। এর বিধানসভা নির্বাচন আগামী জানুয়ারিতে। এখন আবার আরেক সমস্যা। মোদির নিজের এ কাজ হুমকির মুখে। অথচ এই গুজরাটই হলো মোদির রাজনৈতিক ক্ষমতার ভিত। এখানেই তিনি অর্থনৈতিক উন্নয়নের নতুন ধারা রচনা করে গুজরাট মডেল তৈরি করেছিলেন। বিজেপি দলীয় মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে সবচেয়ে দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার রেকর্ড করেছিলেন। এখানে যদি বিজেপির পরাজয় ঘটে তাহলে দল ও স্বয়ং মোদির জন্য বিপর্যয়কর হবে। তার যে বিশাল ভাবমূর্তি গড়ে উঠেছে তা দারুণ মার খাবে এবং ২০১৯ সালে নির্বাচনে জয়লাভের সম্ভাবনাও ম্লান হয়ে দাঁড়াবে। বিজেপিকে হটিয়ে রাজ্যে যদি কংগ্রেস ফিরে আসে তার পরিণতি দাঁড়াবে অন্য রকম। তখন মোদি ও অমিত শাহকে টার্গেট করে পুরনো মামলাগুলো পুনরুজ্জীবিত করা হবে। কথিত গোহত্যার অভিযোগে দলিতদের নগ্ন করে চাবুক মারার ঘটনাটি সংঘ পরিবারের চ-নীতির পরিচায়ক। এতে গুজরাটের দলিতরা সামগ্রিকভাবে বিজেপির ওপর ক্ষেপে গেছে। তারা বিজেপি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। তাদের এই বিজেপির বিদ্বেষ গোটা দেশে ছড়িয়ে পড়তে পারে। সারাদেশে নির্বাচনী ফলাফলের ওপর অশুভ ছায়া ফেলতে পারে। বিশেষ করে সেটা হতে পারে উত্তর প্রদেশে যেখানে বিজেপি নিরলসভাবে এই পশ্চাদপদ শ্রেণীটিকে কাছে টানার চেষ্টা করছে। গুজরাটের রাজনীতিতে এই টালমাটাল অবস্থা বিজেপিতে অস্থিরতায় ফেলেছে। দলের এক সিনিয়র নেতা মন্তব্য করেছেন, ২০১৯ সালের নির্বাচনের জন্য দলে অক্সিজেন আসতে হবে গুজরাট ও উত্তর প্রদেশ থেকে। যেমন করেই হোক এই দুই রাজ্যে আমাদের জিততে হবে। কিন্তু এ মুহূর্তে সে এক কষ্টসাধ্য ব্যাপার হয়ে দাঁড়াচ্ছে। গুজরাটের সবচেয়ে শক্তিশালী সম্প্রদায় প্যাটেলের ভোটারদের ১৫ শতাংশ। গত এক বছর ধরে বিজেপির সঙ্গে তাদের বৈরিতা চলছে। সেই সুযোগ নিচ্ছে বিরোধী দলগুলো। গুজরাটের সরকারের পরিচালনার অবস্থা মোটেও ভাল নয়। মোদির অনুসৃত মডেল এখানে তেমন কাজ করেনি। এর প্রতিফলন বিভিন্ন খাতে দৃশ্যমান। আমলা ও পুলিশের দুর্নীতি যেভাবে ডালপালা মেলেছে সেটাকে বাগে আনা কঠিন। রাজ্যের জিডিপি ২০১৫-১৬ সালে হ্রাস পেয়ে ৬.৭ শতাংশে নেমে এসেছে। ১০ বছরের মধ্যে এটা সর্বনিম্ন। খাদ্য উৎপাদনে কমেছে, দলিতদের বিরুদ্ধে অপরাধ বেড়েছে। উচ্চবর্ণের সঙ্গে দলিতদের সংঘাত তীব্র থেকে তীব্রতর রূপ নিচ্ছে। সঙ্গে নেতৃত্বের অভাবে দলের জনপ্রিয়তা অনেক নিচের দিকে নেমে গেছে। সর্বস্তরে যে নিদারুণ ক্ষতি হয়ে গেছে তাতে নরেন্দ্র মোদির পক্ষে আগামী এক বছরের মধ্যে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনা অত্যন্ত কঠিন হবে। আনন্দিবেনের পদত্যাগ গুজরাটের আর্থ-রাজনীতির এক লেজে গোবরে অবস্থার পরিচায়ক। এ অবস্থায় ২০১৭-এর বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির পরাজয় ঘটা অসম্ভব কিছু নয়। চলমান ডেস্ক সূত্র : ইন্ডিয়া টুডে
×