ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

তাজকিয়া নুর মুন

দিলশান কি এমন অবসর চেয়েছিলেন?

প্রকাশিত: ০৬:২২, ৩১ আগস্ট ২০১৬

দিলশান কি এমন অবসর চেয়েছিলেন?

বয়স চল্লিশ ছুঁই ছুঁই (২৯ আগস্ট, ৩৯ বছর ৩২০ দিন)। শ্রীলঙ্কার হয়ে খেলেছেন সতেরো বছর। তিলকারতœ দিলশানের অবসর ঘিরে তাই কোনরকম নেতিবাচক আলোচনার সুযোগ ছিল না। কিন্তু তবু সেটি হচ্ছে। দুটি কারণে। প্রথমত অস্ট্রেলিয়া সিরিজের আগে এতটুকু ইঙ্গিত ছিল না, এমন কি ডাম্বুলায় শেষ ওয়ানডের পর দিলশন নিজে থেকে জানিয়েছেন, আরও অন্তত দুই বছর খেলতে পারতেন ! অবসর সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে কী, আমি খুব সহজেই আরও দুই-এক বছর খেলতে পারতাম। কিন্তু আমাদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করতে হবে। যদি আমি আগামী দুই বছর খেলতাম, যা পরবর্তী বিশ্বকাপ থেকে ১৮ মাস আগে। এ কাজটি জাতীয় দলের সঙ্গে করাটা ঠিক হবে না।’ তিনি আরও যোগ করেন, ‘বিশ্বকাপের আগে তরুণ খেলোয়াড়দের জায়গা করে দিতে হবে। ছয় বছর আগে ওপেনিংয়ে খেলেছি। এ সময়ের মধ্যে স্থায়ী কোন সঙ্গী পাইনি। এই পজিশনে প্রায় ১০ জনের সঙ্গে নেমেছি। এটা আমাদের দলের জন্য সমস্যার জায়গা!’ ৯ সেপ্টেম্বর কলম্বোয় টি২০ দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে চিরতরে বিদায় জানাবেন দিলশান। ২৮ সেপ্টেম্বর শেষ ওয়ানডে ম্যাচে করেছেন ৪২ রান। দিলশান কেবল আধুনিক শ্রীলঙ্কারই নয়, দেশটির ইতিহাসেরই একজন সেরা ব্যাটসম্যান। লঙ্কার হয়ে টেস্ট, ওয়ানডে, টি২০ তিন ধরনের ক্রিকেটে সেরা ছয় রান সংগ্রাহকের মধ্যে তার নাম। ৭৮ টি২০তে রেকর্ড সর্বোচ্চ ১৮৮৪, ৩৩০ ওয়ানডেতে চতুর্থ সর্বোচ্চ ১০২৯০ ও ৮৭ টেস্টে ষষ্ঠ সর্বোচ্চ ৫৪৯২ রান। ক্রিকেট ইতিহাসে সকল ভার্সনে সেঞ্চুরি আছে বিশ্বের এমন পাঁচ ব্যাটসম্যানের একজন দিলশান। সাদা পোশাকে ১৬ সেঞ্চুরি ও ২৩ হাফ সেঞ্চুরির মালিক টেস্ট ছেড়েছেন ২০১৩ সালের মার্চে। চলতি বছরের শুরুতে ইংল্যান্ড সফরে যাননি। ঘরের মাটিতে অস্ট্রেলিয়া সিরিজ সামনে রেখে প্রধান নির্বাচক জয়সুরিয়ার সঙ্গে কথা হয়েছে বলে স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমের খবর। হয়ত তখনই তাঁকে বিষয়টি অবগত করা হয়, জানানো হয়, ২০১৯ বিশ্বকাপ নিয়ে শ্রীলঙ্কার দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনায় নেই তিনি। এই সিরিজের প্রথম দুই ওয়ানডেতে ২২ ও ১০ রান করার পরই সিদ্ধান্তটা পাকা হয়ে যায়। দিলশানের প্রশংসা করে বর্তমান অধিনায়ক এ্যাঞ্জেলো ম্যাথুজ বলেন, ‘দিলশান গত ১৭ বছরে আমাদের অসাধারণ একজন ক্রিকেটার। আমি তাঁকে মাহেলা আর সাঙ্গার মতোই সেরাদের আসনে স্থান দিতে চাই। তার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানই। মাঠে ওকে অনেক মিস করব।’ সাবেক তারকাদের অনেকেই দিলশানকে বিদায়ী শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। নিজের টুইটার এ্যাকাউন্টে সাঙ্গাকারা লিখেছেন, ‘আমি তো বলব, সনাথ জয়সুরিয়ার পর দিলশানই ছিল আমাদের সেরা ম্যাচ-উইনার। লঙ্কান ক্রিকেটে ওর অবদান অনেক। আশা করি অবসরপরবর্তী সময়টা ভাল কাটবে।’ শ্রীলঙ্কাকে এখন পর্যন্ত একমাত্র ওয়ানডে বিশ্বকাপ উপহার দেয়া অধিনায়ক অর্জুনা রানাতুঙ্গা বলেন,‘দিলশান মিডল-অর্ডার ব্যাটসম্যান হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করেছিল। সেখান থেকে সুযোগ পেয়ে নিজেকে একজন সেরা ওপেনার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। তিন ধরনের ক্রিকেটেই সে অসাধারণ খেলেছে। সুন্দর ক্যারিয়ারে উপহার দিয়ে দেশের জন্য অবদান রেখেছে।’ এছাড়া বর্তমান প্রধান নির্বাচক ও বিশ্বজয়ী দলের সদস্য জয়সুরিয়া, রোশান মহানামা, অশোকা গুরুসিনহে, গ্রেট স্পিনার মুত্তিয়া মুরলিধরণ, পেস তারকা লাসিথ মালিঙ্গা দিলশানকে বিদায়ী শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে দিলশানকে মাঠ ও মাঠের বাইরে বিতর্ক-কখনোই তাঁকে ছুঁয়ে যায়নি। কাউকে কখনও দোষারোপ করেননি। ব্যাটিংয়ের মতো চরিত্রটাও চমৎকার। ডাম্বুলায় জীবনের শেষ ওয়ানডে খেলার পর স্মৃতি রোমন্থন করতে গিয়ে সেই তার কণ্ঠ থেকে ছোট্ট একটা হতাশা বেরিয়ে আসে। বলেন, ক্যারিয়ারে নেতৃত্বের সময়টা তার জন্য ছিল সবচেয়ে কষ্টের। সতীর্থ অনেকের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা পাননি বলেও রয়েছে অভিমান, ‘সত্যি বলতে অধিনায়ক হওয়ার কোন পরিকল্পনাই আমার ছিল না। সে সময় শ্রীলঙ্কা ক্রিকেটের (এসএলসি) সভাপতি আমাকে ছয় মাসের জন্য দায়িত্ব নিতে বলেছিলেন। বলেছিলেন, এ সময়ে অন্য কাউকে পাওয়া যাবে। কোনভাবেই আমার জন্য সেটি অনুকূলে ছিল না।’ এ বিষয়ে দিলশান আরও যোগ করেন, ‘ম্যাথুজের (বর্তমান অধিনায়ক) তখন মাংসপেশিতে চোট ছিল, যে কারণে সে বছর খানেক বল করতে পারেনি। হয়ত আমারই দুর্ভাগ্য! কারণ আমি নেতৃত্ব ছাড়ার পরপরই যখন অস্ট্রেলিয়া সফরে গেলাম, ও ফিট হয়ে বোলিং শুরু করল! হয়ত ওটা ছিল মাহেলার (পরবর্তী অধিনায়ক) সৌভাগ্য।’ লঙ্কান ক্রিকেটে তখন ক্রান্তিকাল। বিশেষ করে বোলিংয়ে। মুত্তিয়া মুরলিধরন অবসরে চলে গেছেন, চোটের কারণে বাইরে নুয়ান কুলাসেকারা-অজন্তা মেন্ডিস। দিলশান অধীনে তখন ২০ ওয়ানডেতে ম্যাথুজ বল করেছিলেন মাত্র ৯টিতে। তাও আবার কোনোটিতেই ৫ ওভারের বেশি নয়! সেই তিনিই মাহেলার অধীনে দলের অন্যতম প্রধান বোলার হয়ে উঠেছিলেন। ২০১১ সালের এপ্রিল থেকে পরের বছর জানুয়ারি পর্যন্ত মাত্র ১০ মাস অধিনায়কের দায়িত্বে ছিলেন দিলশান। তারপরই ব্যর্থ বলে তাঁকে নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছিল। তবে দিলশানের ক্রিকেটে ব্যক্তিজীবনের প্রভাব পড়েনি। নেতৃত্ব হারানোর পরও দেশের জন্যই খেলেছেন, ‘সে বছরই দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজের পর (অধিনায়ক হিসেবে শেষ) আমি সব কিছু পেছনে ফেলে এসেছি। এরপর অস্ট্রেলিয়া সফরে গেলাম, পাঁচ শ’ মতো রান করলাম, ম্যান অব দ্য সিরিজ হলাম। চিন্তা করিনি, কে অধিনায়কত্ব করছে। আমি আমার দেশের জন্য খেলেছি। ব্যক্তিগত ইস্যু নিয়ে কখনোই উদ্বিগ্ন ছিলাম না। কিন্তু ঐ সময়টা কষ্টকর ছিল।’ তবে শেষ পর্যন্ত নিজের অর্জনে সন্তুষ্ট থেকেই বিদায় বলছেন, ‘শ্রীলঙ্কার হয়ে তিন সংস্করণে যেভাবে খেলেছি, তাতে আমি সন্তুষ্ট। এ সময়ে মুরলিধরন, সাঙ্গাকারা, মাহেলার মতো গ্রেটদের সঙ্গে পেয়েছি। ছিলাম টি২০র বিশ্বচ্যাম্পিয়ন দলে সঙ্গে। অবসরের সিদ্ধান্তটি কয়েকদিন আগেই নিয়েছি। আমার স্ত্রীও সায় দিয়েছে। তাছাড়া ভালোভাবে শেষ করতে পেরে আমি খুশি।’ বলেন দিলশান।
×