ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

শিক্ষার পাশাপাশি খেলাধুলাতেও এগিয়ে চিটাগং পুলিশ ইনস্টিটিউশন

কোচ ও ইনডোর মাঠ সঙ্কটে পুলিশদের স্কুল

প্রকাশিত: ০৬:২২, ৩১ আগস্ট ২০১৬

কোচ ও ইনডোর মাঠ সঙ্কটে পুলিশদের স্কুল

রুমেল খান ॥ অর্ধশত পেরিয়ে গেছে বিদ্যাপিঠের বয়স। নির্দিষ্ট সংখ্যায় উল্লেখ করলে ৫৩। স্কুলটির বৈশিষ্ট্য- এটি হচ্ছে পুলিশদের স্কুল। তবে স্কুলের শিক্ষার্থীদের মাত্র ২৫ শতাংশ পুলিশ পরিবারের সন্তান। বাকিরা অন্য পেশাজীবী পরিবারের। দামপাড়ায় মনোরম পাহাড়ী পরিবেশে অবস্থিত স্কুলটির নাম চিটাগং পুলিশ ইনস্টিটিউশন। তবে এলাকার মানুষের কাছে এটি ‘দামপাড়া পুলিশ লাইন্স স্কুল’ নামেই বেশি পরিচিত। পড়াশোনার পাশাপাশি স্কুলটি খেলাধুলায় সাফল্যের জন্যও বিখ্যাত। স্কুলের একাডেমিক রেজাল্টও বেশ ভাল। খেলাধুলাতেও মন্দ নয়। এজন্য গর্বিত স্কুলের প্রধান শিক্ষক আখতার হোসেন। ৫৮ বছর বয়সী এই ক্রীড়ানুরাগী-শিক্ষক বলেন, ‘জেএসসি, পিএসসি ও এসএসসিতে অনেক বছর ধরেই আমাদের স্কুলের ছেলে-মেয়েরা আশাতীত ফল করছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘খেলাধুলা করলে ছেলে-মেয়েরা বাজে কোন অভ্যাস ও অপরাধের সঙ্গে জড়িত হতে পারে না।’ খেলাধুলায় এমনিতে স্কুলটির বড় কোন সমস্যা নেই। যেমন নিজস্ব মাঠ ও প্রয়োজনীয় অর্থ... এগুলোর কোন অভাব নেই। তবে অভাব দুটি জিনিসের। অনেক বছর ধরে ভাল কোচের জন্য ফুটবলে স্কুলটি সাফল্য পাচ্ছে না। আখতারের ভাষ্য, ‘এজন্য আমরা বহুবার চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার কাছে ধর্ণা দিয়েছি। কিন্তু তারা বরাবরই এ ব্যাপারে উদাসীনতা, অলসতা ও নিষ্ক্রিয়তা দেখিয়েছে।’ আরেকটি অভাবের কথাও জানান আখতার, ‘আমরা ব্যাডমিন্টনেও সফল হতে চাই। এই এলাকার কৃতীসন্তান নিখিল চন্দ্র ধর একজন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ব্যাডমিন্টন কোচ। তিনি নিজের উদ্যোগে আমাদের স্কুলের শিক্ষার্থীদের ব্যাডমিন্টন প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন। এখানেই ক্ষান্ত হননি তিনি। ইংল্যান্ড থেকে ব্রিটিশ কোচ টিম মায়েরকেও মাঝে মধ্যেই নিয়ে আসেন এখানে। ব্যাডমিন্টন মূলত শীতকালীন খেলা হলেও এখন সারাবছরই খেলা হয়। তবে এজন্য দরকার ইনডোর মাঠ। কিন্তু সেটা আমাদের নেই। থাকলে খুবই ভাল হতো।’ এই স্কুলে পড়েছেন বা পড়ছেন এমন অনেক খেলোয়াড় আছেন- যারা জাতীয় পর্যায়ে খেলে সাফল্য পেয়েছেন। যেমন শূটিংয়ে সৈয়দা সাদিয়া সুলতানা, সাদিয়া ইসলাম, মোজাম্মেল হক, সায়েমা সুলতানা, ব্যাডমিন্টনে সৈয়দ সালেহ মোঃ সাজ্জাদউল্লাহ্, ক্রিকেটে দীপু (বাংলাদেশ অ-১৫ জাতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক)। আবদুল হান্নান মিরন। বাংলাদেশের ফিফা ব্যাজধারী ও আন্তর্জাতিক ফুটবল রেফারি। তার বাড়ি এই চট্টগ্রামেই। এই স্কুলের জন্য প্রায়ই তিনি আর্থিক সাহায্য ও খেলোয়াড়দের জন্য জার্সি দিয়ে থাকেন বলে জানা গেছে। স্কুলের দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থী ও জাতীয় কৃতী শূটার সায়েমা সুলতানা। তিনি বলেন, ‘স্যারেরা পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলার ব্যাপারেও ভীষণ আন্তরিক ও যতœবান।’ স্কুলের ক্রীড়া শিক্ষক প্রণব দেব দাশ। সাবেক ভলিবল খেলোয়াড়। আরেকটা বিশেষ পরিচয় আছে তার। চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত ‘জেবি বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ’ ফুটবলে তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন চতুর্থ রেফারি হিসেবে। এই স্কুলে তিনি যোগ দেন ২০০০ সালের পর। তিনি বলেন, ‘আমার কাছে ২০০০ সালের আগের সেভাবে তথ্য নেই। তবে ২০০০ সালের পরেরগুলো আছে।’ প্রণবের দেয়া তথ্যানুসারে স্কুলটি সাফল্য পেয়েছে তিনটি খেলায়। এগুলো হলো ফুটবল, হ্যান্ডবল ও ভলিবল। আন্তঃস্কুল ফুটবলে ১৯৬৭ সালে চ্যাাম্পিয়ন এবং ২০০০ সালে সেমিফাইনাল খেলে। আন্তঃস্কুল হ্যান্ডবলে ২০০৭-০৮ সালে হয় রানার্সআপ। সবচেয়ে বেশি সাফল্য এসেছে ক্রিকেটে। বিসিবি আয়োজিত টুর্নামেন্ট, বিভাগীয় টুর্নামেন্ট এবং জেলাভিত্তিক টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে স্কুলটি। জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপ প্রতিযোগিতায় শিরোপা জেতে ২০১১ সালে। জেলা পর্যায়ে একটানা চ্যাম্পিয়ন হয় ২০০৯-১৫ সাল পর্যন্ত। ফুটবল, হ্যান্ডবল, ভলিবল, ক্রিকেট, ব্যাডমিন্টন, ক্যারম, দাবা... মূলত এসব খেলাধুলারই চর্চা হয় স্কুলটিতে। এখন দেখার বিষয়, আগামী দিনগুলো এই স্কুলটি ভাল ফুটবল কোচ এবং ব্যাডমিন্টনের জন্য ইনডোর প্লেস পেয়ে খেলাধুলায় আরও এগিয়ে যেতে পারে কি না।
×