ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

প্রভাব ফেলবে চীন ও পাকিস্তান উভয়ের ওপর

ভারত-যুক্তরাষ্ট্র সামরিক চুক্তি

প্রকাশিত: ০৬:১৮, ৩১ আগস্ট ২০১৬

ভারত-যুক্তরাষ্ট্র সামরিক চুক্তি

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত সোমবার ওয়াশিংটনে সামরিক যন্ত্রপাতি মেরামত ও রসদ সরবরাহের জন্য একে অপরের স্থল, বিমান, নৌঘাঁটি ও সম্পদ ব্যবহারের সুযোগ রেখে এক চুক্তি সই করেছে। চীনের ক্রমবর্ধমান নৌশক্তি মোকাবেলার পথে এটি হবে দু’দেশের প্রতিরক্ষা সম্পর্ক গড়ে তোলার লক্ষ্যে এক অগ্রবর্তী পদক্ষেপ। চুক্তিটি পাকিস্তান ও চীন উভয় দেশের ওপর প্রভাব ফেলবে। খবর টাইমস অব ইন্ডিয়া ও ডনের। দ্বিপাক্ষিক লজিস্টিকস একচেঞ্জ মেমোরেন্ডাম অব এ্যাগ্রিমেন্ট (লেমোয়া) সইয়ের পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়ে সফররত ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী মনোহর পারিকার ও মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী এ্যাস্টন কার্টার বলেন, চুক্তিটি বাস্তব তৎপরতা ও বিনিময়ের সুযোগ সৃষ্টি করবে। লজিস্টিকস চুক্তিটি প্রত্যেক দেশকে রসদ সরবরাহ, খুচরা যন্ত্রাংশ, সার্ভিস ও পুনরায় জ্বালানি ভর্তির জন্য অপরের সাহায্য পাওয়ার সুযোগ করে দেবে। বাস্তব ক্ষেত্রে মার্কিন সশস্ত্র বাহিনী ভারতীয় ঘাঁটি থেকে তৎপরতা চালাতে পারবে এবং ভারত বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে মার্কিন ঘাঁটিগুলো ব্যবহার করতে পারবে। চুক্তিটি সইয়ের পর এক যুক্ত বিবৃতিতে বলা হয়, তারা একমত যে, এ কাঠামো চুক্তি প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি ও বাণিজ্য সহযোগিতার ক্ষেত্রে নতুন ও উন্নত সুযোগ সুবিধার পথ সৃষ্টি করবে। এ লক্ষে যুক্তরাষ্ট্র এর মিত্র ও অংশীদারদের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ভারতের সঙ্গে প্রতিরক্ষা বাণিজ্য ও প্রযুক্তি বিনিময়ের পর্যায়কে উন্নত করবে। বিবৃতি অনুযায়ী দুটি দেশের প্রতিরক্ষা সম্পর্ক তাদের অভিন্ন মূল্যবোধ ও স্বার্থের ওপর এবং বিশ্বের শান্তি ও নিরাপত্তার প্রতি তাদের দৃঢ় প্রতিশ্রুতির ওপর প্রতিষ্ঠিত। ফোর্বস ম্যাগাজিন এক নিবন্ধে সতর্ক করে দেয়, “চীন ও ভারত সাবধান এ সপ্তাহে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র বড় যুদ্ধচুক্তি সই করছে।” মার্কিন মিডিয়ায় উল্লেখ করা হয় যে, চুক্তিই চীনকে রোধ করতে ওবামা প্রশাসনের কৌশলের বড় অংশ। চীন এশিয়াজুড়ে এর প্রভাব বিস্তার করছে। মিডিয়ায় বলা হয় যে, মার্কিন নৌবাহিনী অদূর ভবিষ্যত এর জাহাজগুলোর শতকরা ৬০ ভাগ ভারত মহাসাগর ও প্রশান্ত মহাসগরে মোতায়েন করবে। মিডিয়ায় উল্লেখ করা হয়, আফগানিস্তান ও ইরাকে যুক্তরাষ্ট্রকে সব কিছুই নতুন করে তৈরি করতে হয়, কিন্তু ভারতে এরই মধ্যে এমন সব সামরিক স্থাপনা রয়েছে, যা যুক্তরাষ্ট্র প্রয়োজন মতো ব্যবহার করতে পারবে। মার্কিন মিডিয়ায় বলা হয়, চীনের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক বৈরিতাপূর্ণ এবং এ বৈরিতা সীমান্ত বিরোধ থেকে প্রভাব অর্জনের জন্য অর্থনৈতিক ও সামরিক ক্ষেত্রেও ছড়িয়ে পড়েছে। এতে উল্লেখ করা হয় যে, যুক্তরাষ্ট্র দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের ক্রমবর্ধমান সামরিক শক্তি-বিশেষত বিমান ঘাঁটিগুলোর মোকাবেলা করতে ফেমোয়াকে ব্যবহার করতে চাইবে। কিন্তু চুক্তিটি ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রকে তাদের অভিন্ন শত্রু ধর্মীয় সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধেও পরস্পরের স্থাপনাগুলো ব্যবহার করতে দেবে। ভারতে প্রতিরক্ষামন্ত্রী পারিকার ওয়াশিংটনে তার দেশের জন্য জেট ইঞ্জিন প্রযুক্তি ও চালকবিহীন উড়োযান (ইউএভি) সংগ্রহের বিষয়ে আলোচনা চালিয়ে যাবেন। ভারত ও পাকিস্তান দুটি চুক্তিকে চূড়ান্ত রূপ দিচ্ছে। এগুলো হলো কমিউনিকেশনস ইন্টারপোলারেবিলিটি এ্যান্ড সিকিউরিটি মেমোরেন্ডাম অব এ্যাগ্রিমেন্ট (সিসমোয়া) ও বেসিক এক্সচেঞ্জ এ্যান্ড কো-অপারেশন এগ্রিমেন্ট ফর জিও স্পেশাল কো-অপারেশন (বেকা)। ঐ দুটির মতো আরও চুক্তি সই হলে তা চীনের উদীয়মান পরাশক্তির মুখোমুখি হতে ভারতের পক্ষে সহায়ক হবে। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে দেন যে, জেট ইঞ্জিন তৈরি করবে এবং যুক্তরাষ্ট্র থেকে ইউএভি প্রযুক্তি অর্জনে ভারতের সাফল্য পাকিস্তানের প্রচলিত প্রতিরক্ষা সামর্থ্যকেও আরও দুর্বল করে দেবে।
×