ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

একাত্তরে কেঁদেছিল স্বাধীনতাকামীরা, এখন কাঁদছে ঘাতক কাশেম আলীরা

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ৩১ আগস্ট ২০১৬

একাত্তরে কেঁদেছিল স্বাধীনতাকামীরা, এখন কাঁদছে ঘাতক কাশেম আলীরা

মোয়াজ্জেমুল হক ॥ একাত্তরে টর্চার সেল স্থাপন করে বাঙালী নিধনযজ্ঞ চালিয়ে বদর বাহিনী প্রধান মীর কাশেম আলীর নেতৃত্বে স্বাধীনতাবিরোধী চক্র ও পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর দোসররা হেসেছিল। নিজেদের বিজয়ী ভেবে বর্বরতার তা-ব চালিয়েছে একের পর এক। মুক্তিকামী বাঙালীদের অশ্রুজলও শুকিয়ে গিয়েছিল। এরপরও ক্ষান্ত হয়নি নরপিশাচ মীর কাশেম আলীর মতো স্বাধীনতাবিরোধী ও তাদের দোসররা। চট্টগ্রামের ওল্ড টেলিগ্রাফ রোডের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মালিকানার মহামায়া ভবনটি দখল করে মীর কাশেম আলীর বাহিনী এটিকে একটি টর্চার সেল কেন্দ্রে পরিণত করে। কিশোর মুক্তিযোদ্ধা জসিমসহ নির্যাতনে হত্যা করে ৮ জনকে। এছাড়া নারকীয় নির্যাতনে পঙ্গু হয়ে যায় অনেকে। ওরা তখন কেবলই হেসেছে আর স্বাধীনতাকামীরা কেঁদেছে। আর এখন কাঁদছে কাশেম আলীদের মতো ঘাতক চক্রের সদস্যরা। স্বাধীনতার পঁয়তাল্লিশ বছর পর সেসব চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীর বিচার শুরু হয়েছে। মঙ্গলবার নরঘাতক মীর কাশেম আলীর ফাঁসির রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগ খারিজ করে দিয়েছে। প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা রিভিউর রায়ে বলেছেন, ‘পিটিশন ইজ ডিসমিসড।’ পাঁচ সদস্যের আপীল বেঞ্চের রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘উই ফাউন্ড হিম গিল্টি, কনভিকশন ইজ মেইনটেইনেবল।’ গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, কাশিমপুর কারাগারে বন্দী থাকা নরঘাতক মীর কাশেম আলী কনডেম সেলে বসে রেডিওতে তার রিভিউ আবেদন খারিজ হয়ে যাওয়ার খবর শোনেন। সর্বোচ্চ আদালতের চূড়ান্ত এ খবর শোনার পর মীর কাশেম আলী প্রথমে নির্বাক ছিলেন এবং পরে অনেকটা ভেঙ্গে পড়েন। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মীর কাশেম আলীর ফাঁসির রায় শুনে সেদিন যারা কেঁদেছিলেন তা ছিল আনন্দাশ্রু, যার মধ্যে অন্যতম ছিলেন চট্টগ্রামের মুক্তিযোদ্ধা জাহাঙ্গীর চৌধুরী সিএনসি। তার অঝোর কান্নার দৃশ্য দেখে উপস্থিত অনেকেই অশ্রু ধরে রাখতে পারেননি। মঙ্গলবার সুপ্রীমকোর্টের চূড়ান্ত রায় ঘোষিত হওয়ার পরও অনুরূপ কান্না অনেকেই কেঁদেছেন। মীর কাশেম আলীর মতো দানবরাও এখন কাঁদছেন। তাদের কান্না প্রাণ হরণের ভীতির কান্না। তাদের কান্না অপরাধ করে যে রায় চূড়ান্তভাবে এসেছে এবং তাতে যে পরিণতি ঘটতে যাচ্ছে তা নিয়ে কান্না। পক্ষান্তরে মুক্তিযোদ্ধা জাহাঙ্গীর চৌধুরীর মতো যারা কাঁদছেন তাদের কান্না মূলত মুক্তিযুদ্ধে নিগৃহীত, বর্বর কায়দায় নির্যাতিত এবং নিহতদের রুহের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনে আনন্দের কান্না।
×