ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

যুদ্ধাপরাধী বিচার;###;সাক্ষী রফিকুলের জবানবন্দী

রাজাকাররা আমার বাবাসহ ১৪ জনকে আর্মি ক্যাম্পে নিয়ে হত্যা করে

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ৩১ আগস্ট ২০১৬

রাজাকাররা আমার বাবাসহ ১৪ জনকে আর্মি ক্যাম্পে নিয়ে হত্যা করে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ জামায়াতের সাবেক এমপি আব্দুল আজিজ ওরফে ঘোড়া মারা আজিজসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের দ্বিতীয় সাক্ষী মোঃ রফিকুল ইসলাম প্রামাণিক জবানবন্দী প্রদান করেছেন। জবানবন্দীতে তিনি বলেছেন, ‘রাজাকাররা আমার বাবা লুৎফর রহমান প্রামাণিকসহ ১৪ জনকে আর্মি ক্যাম্পে ধরে নিয়ে হত্যা করেছে।’ জবানবন্দী শেষে আসামি পক্ষের আইনজীবী সাক্ষীকে জেরা করেন। পরবর্তী সাক্ষীর জন্য ৪ সেপ্টেম্বর দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। চেয়ারম্যান বিচারপতি আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্যবিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ মঙ্গলবার এ আদেশ প্রদান করেছেন। সাক্ষীকে সাক্ষ্য দানে সহায়তা করেন প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। অন্য প্রসিকিউটরদের মধ্যে ছিলেন প্রসিকিউটর সৈয়দ হায়দার আলী, প্রসিকিউটর হৃষিকেশ সাহা, প্রসিকিউটর শেখ মোশফিক কবির। অন্যদিকে আসামি পক্ষে ছিলেন এ্যাডভোকেট গাজী তামিম। সাক্ষী তার জবানবন্দীতে বলেন, একাত্তরের ১০ অক্টোবর আসামি আবু সালেহ মোঃ আব্দুল আজিজ মিয়া , মোঃ রুহুল আমিন ওরফে মঞ্জু ও মোঃ আব্দুল লতিফ বাইসাইকেলযোগে আমাদের বাড়িতে আসে। তখন আমি বাড়িতেই ছিলাম। ঐ সময় এই তিন আসামি আমার উপস্থিতিতে আমার বাবা লূৎফর রহমান প্রামাণিককে বলে, ১১ অক্টোবর সকাল ১০টায় সুন্দরগঞ্জ আর্মি ক্যাম্পে একটি সভা হবে। উক্ত সভায় সুন্দরগঞ্জ থানার সকল ্ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের উপস্থিত থাকতে হবে। এবং আমার বাবাকেও উক্ত ক্যাম্পে ঐ সময় উপস্থিত থাকতে বলে। তারা আমার বাবাকে এই মর্মে হুমকি প্রদান করে যে, যদি আমার বাবা পরের দিনের সভায় উপস্থিত না হয় তা হলে আমাদের পরিবারের সকলকে হত্যা করা হবে। আমাদের বাড়িঘর আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হবে। সাক্ষী আরও বলেন, ১১ অক্টোবর আমার বাবা মোটরসাইকেলযোগে সুন্দরগঞ্জ আর্মি ক্যাম্পে যান। সারাদিন আমার বাবা বাড়িতে ফিরে না আসায় সন্ধ্যায় আমাদের বাড়ির সবাই কান্নাকাটি শুরু করি। ঐ দিন সন্ধ্যার পর আমি ও আমার চাচা হারুনুর রশিদ আমাদের বাড়ির সন্নিকটে মজুমদার হাটে গিয়ে লোকমুখে শুনতে পাই যে, আমার বাবাসহ ১৩ নং শ্রীপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান তয়েজ উদ্দিন আহম্মেদ, মেম্বার আকবর আলী, মেম্বার মমতাজ সরকার ও মেম্বার মুসলেম আলী, ১০ নম্বর শান্তিরাম ইউনিয়নের প্রাক্তন চেয়ারম্যান ছয়িম উদ্দিন সরকার, মেম্বার মনসুর আলী সরকার, মেম্বার পচা মামুদ বেপারী, চেয়ারম্যান আজিজ সরকার, মেম্বার বাইছ উদ্দিন সরকার, মেম্বার নবী বক্স সরকার ও আরও দুই জন মেম্বারসহ ১৪/১৫ জনকে ধরে ক্যাম্পে নিয়ে গেছে। সাক্ষী জবানবন্দীতে বলেন, পরের দিন ১২ অক্টোবর সকাল বেলা আমি ও আমার চাচা হারুনুর রশিদ আমার বাবার খোঁজে সুন্দরগঞ্জ যাই। সেখানে পাকিস্তান আর্মি ক্যাম্পের আশপাশে খোঁজখবর করে বাবার কোন সন্ধান না পেয়ে আমরা বাড়িতে ফিরে আসি। ১৩ অক্টোবর পুনরায় বাবার খোঁজে সুন্দরগঞ্জ যাই। সেখানে লোকমুখে শুনতে পাই বাবাসহ ১৪ জনকে ক্যাম্পে নির্যাতন করা হয়েছে। এর পর তাদেরকে গুলি করে হত্যা করা হয়। আমি বাবাসহ ১৪ জনকে হত্যার বিচার চাই।
×