ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

বরিশাল-পায়রা রেলরুট নির্মাণে ব্রিটিশ প্রতিষ্ঠানকে যুক্ত করার পরামর্শ প্রধানমন্ত্রীর

বিআরটিসির জন্য ৬শ’ বাস ও ৫শ’ ট্রাক ক্রয় একনেকে অনুমোদন

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ৩১ আগস্ট ২০১৬

বিআরটিসির জন্য ৬শ’ বাস ও ৫শ’ ট্রাক ক্রয় একনেকে অনুমোদন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানীতে উন্নত গণপরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্পোরেশনের (বিআরটিসি) জন্য ৬০০ বাস ও ৫০০ ট্রাক কেনা হচ্ছে। এজন্য ভারতীয় ঋণ কর্মসূচীর আওতায় দু’টি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এই দু’টি প্রকল্পসহ পাঁচ প্রকল্পের চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। মঙ্গলবার রাজধানীর শেরেবাংলানগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপার্সন শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় এসব প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়। সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সাংবাদিকদের এ বিষয়ে অবহিত করেন। তিনি জানান, একনেকে মোট দুই হাজার ৮০৫ কোটি টাকার পাঁচ প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে সরকারী তহবিল থেকে পাওয়া যাবে এক হাজার ৯৩২ কোটি ২৮ লাখ টাকা। অবশিষ্ট ৮৭২ কোটি ৭২ লাখ টাকা প্রকল্প সাহায্য যার পুরোটা ভারতীয় ঋণ কর্মসূচীর (এলওসি) আওতায় পাওয়া যাবে। মন্ত্রী জানান, সভায় বন্যাকবলিত এলাকার পানি সরে যাওয়ার পর ভাঙন রোধে ও জরুরী ভিত্তিতে বাঁধ মেরামতের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এজন্য অর্থমন্ত্রণালয়কে প্রয়োজনে অতিরিক্ত অর্থবরাদ্দ দেয়ারও নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি। এছাড়া প্রস্তাবিত বরিশাল-পায়রা রেলরুট নির্মাণে অভিজ্ঞতা ও দক্ষতাসম্পন্ন ব্রিটিশ প্রতিষ্ঠানকে যুক্ত করার পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। রেলপথ নির্মাণে ব্রিটিশরা সারাবিশ্বেই অগ্রগণ্য। ভারতীয় উপমহাদেশেও রেলপথ চালু করে করে ব্রিটিশরা। তাদের তৈরি রেলস্থাপনা দীর্ঘমেয়াদে টেকসই হয়। এসব বিবেচনায় গুরুত্বপূর্ণ এ রেলরুট নির্মাণে প্রধানমন্ত্রী ব্রিটিশ প্রতিষ্ঠানকে যুক্ত করার পরামর্শ দিয়েছেন বলে জানান মন্ত্রী। সভায় বিআরটিসির জন্য বাস ও ট্রাক কেনার জন্য অনুমোদন পাওয়া দুই প্রকল্প প্রসঙ্গে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, বিআরটিসির জন্য দ্বিতল, একতলা এসি ও ননএসি বাস কেনা বাবদ ৫৮০ কোটি ৮৭ লাখ টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এই প্রকল্পের ৪৩৪ কোটি ৩২ লাখ টাকা ভারতীয় ঋণ (ইন্ডিয়ান লাইন অব ক্রেডিট) থেকে পাওয়া যাবে। বাকি ১৪৬ কোটি ৫৫ লাখ টাকা সরকারী তহবিল থেকে যোগান আসবে। তনি জানান, প্রকল্পের আওতায় ৩০০টি ডাবল ডেকার বাস, ১০০ সিঙ্গেল ডেকার এসি সিটি বাস, ১০০ সিঙ্গেল ডেকার এসি ইন্টারসিটি এবং ১০০টি সিঙ্গেল ডেকার ননএসি বাস কেনা হবে। ২১৭ কোটি ৩৫ লাখ টাকা ব্যয়ে বিআরটিসির ৫০০ ট্রাক কেনা প্রকল্প সম্পর্কে মুস্তফাকামাল বলেন, এই প্রকল্পের আওতায় ১৫ টন মালামাল ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন ৩৫০ এবং ১০ টন মালামাল ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন ১৫০টি ট্রাক কেনা হবে। প্রকল্প ব্যয়ের মধ্যে ভারতীয় ঋণ ১৫৮ কোটি ৪০ লাখ এবং সরকারী তহবিল থেকে পাওয়া যাবে ৫৮ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। তিনি জানান, বিআরটিসির যেসব বাস ও ট্রাক নষ্ট হয়ে গেছে, সেগুলো দ্রুত নিলামের মাধ্যমে বিক্রি করে প্রাপ্ত অর্থ রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এ জন্য একটি কমিটি গঠন করার কথাও বলেন তিনি। এছাড়া বাংলাদেশ ডাক বিভাগের জন্য কাভার্ড ভ্যান হিসেবে কয়েকটি ট্রাক আমদানি করারও নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, বিআরটিসির জন্য যে বাসগুলো কেনা হবে- এগুলো রাজধানীবাসীর যাতায়াতের জন্য রাস্তায় চলাচল করবে। আর ট্রাকগুলো সরকারের বিভিন্ন দফতর বা সংস্থার কাজে ব্যবহৃত হবে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরির সফর নিয়ে একনেক বৈঠকে কোন আলোচনা হয়েছে কি না- এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সফরকালে বাংলাদেশ ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু বিষয়ে জন কেরির আন্তরিক আগ্রহ সবার মন ছুঁয়ে গেছে। তার সফরের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক নতুন এক উচ্চতায় পোঁছাবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। বৈঠকে বিআরটিসির বাস-ট্রাক কেনা ছাড়াও ভারতীয় ঋণের আরও একটি প্রকল্প অনুমোদন পেয়েছে। এটি হলো-‘জামালপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল এবং জামালপুর নার্সিং কলেজ স্থাপন’ প্রকল্প। এর ব্যয় ধরা হয়েছে ৭১৬ কোটি ৬১ লাখ টাকা। এর মধ্যে প্রকল্প সাহায্য হিসেবে ভারতীয় ঋণ রয়েছে ২৮০ কোটি টাকা। বাকি ৪৩৬ কোটি ৬১ লাখ টাকা সরকারী তহবিল থেকে যোগান দেয়া হবে। পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, প্রকল্প অনুমোদনের সময় মেডিক্যাল ও নার্সিং কলেজে এখন থেকে স্থানীয় শিক্ষার্থীদের ভর্তির সুযোগ রাখার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, স্থানীয় শিক্ষার্থীরা চিকিৎসক ও নার্স হতে পারলে, স্থানীয় মানুষজনের চিকিৎসা সেবায় আরও বেশি ভূমিকা রাখতে পারবে। অনুমোদিত অন্য দু’টি প্রকল্প হলো- চট্টগ্রাম জেলার মিরসরাই বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল (বেজা) বন্যা নিয়ন্ত্রণ, সড়ক কাম বেড়িবাঁধ প্রতিরক্ষা এবং নিষ্কাশন প্রকল্প। এটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় এক হাজার ১ হাজার ১৬৩ কোটি টাকা। আর পিবিআই কর্মকর্তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং তদন্ত সহায়ক যন্ত্রপাতি ক্রয় প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১২৭ কোটি ৪০ লাখ টাকা। সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে এই দুই প্রকল্পের সম্পূর্ণ ব্যয় মেটানো হবে।
×