ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

কেরির সফরে নতুন মাত্রা পেল ঢাকা ওয়াশিংটন সম্পর্ক

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ৩১ আগস্ট ২০১৬

কেরির সফরে নতুন মাত্রা পেল ঢাকা ওয়াশিংটন সম্পর্ক

তৌহিদুর রহমান ॥ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরির বাংলাদেশ সফরের মধ্য দিয়ে ঢাকা-ওয়াশিংটন সম্পর্ক নতুন মাত্রা পেল। বিশেষ করে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাধারণ জনগণ বাংলাদেশের পক্ষে ছিলেন বলে বার্তা দিয়ে গেছেন কেরি। বৈশ্বিক সন্ত্রাসবিরোধী লড়াইয়েও বাংলাদেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পাশে থাকবে বলে প্রত্যাশা করছে ওয়াশিংটন। কেরির ঢাকা সফর সংক্ষিপ্ত হলেও সেটা দুই দেশের ভবিষ্যত সম্পর্কের ওপর গভীর ও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এই সফরের পর ঢাকা-ওয়াশিংটন উভয় পক্ষ সন্তোষ প্রকাশ করেছে। সোমবার ঢাকা সফর করেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন এফ কেরি। প্রায় আট ঘণ্টা সফর শেষে ঢাকা ত্যাগ করেন তিনি। জন কেরির ঢাকা সফরের সময় মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাই, যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের দক্ষিণ এশিয়া বিভাগের সিনিয়র পরিচালক পিটার লেভয়, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী মানপ্রিত আনন্দ ঢাকা সফর করেন। ঢাকা-ওয়াশিংটনের কূটনৈতিক সূত্র জানায়, জন কেরির ঢাকা সফর সংক্ষিপ্ত হলেও এই সফর দুই দেশের ভবিষ্যত সম্পর্কের ওপর গভীর ও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। বিশেষ করে সন্ত্রাসবিরোধী লড়াইয়ে ঢাকা-ওয়াশিংটনের সহযোগিতা আরও জোরদার হবে। ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে ঢাকাকে অবহিত করা হয়েছে, জঙ্গীবাদবিরোধী লড়াইয়ে বেশ কয়েকটি ক্ষেত্র রয়েছে। সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ প্রতিরোধে আর্থিক, বিশেষজ্ঞ দল, প্রশিক্ষণ, তথ্য বিনিময়, প্রযুক্তিগত ইত্যাদি সহায়তা দেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। অভ্যন্তরীণ ছাড়াও বৈশ্বিক সন্ত্রাসবিরোধী লড়াইয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে পাশে পাবে বলেও প্রত্যাশা করেছেন কেরি। জন কেরির সফরের মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল ঢাকা-ওয়াশিংটনের মধ্যে সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ প্রতিরোধ লড়াই জোরদার করা। দুই দেশ কিভাবে একযোগে জঙ্গীবাদবিরোধী কার্যক্রম এগিয়ে নিতে পারে, সে বিষয়ে বার্তা দিয়েছেন কেরি। বিশেষ করে বাংলাদেশে ইসলামিক স্টেটের অস্তিত্ব নিয়ে ঢাকা-ওয়াশিংটনের মধ্যে মতবিরোধ চলছিল, সেটা কেটে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেছে উভয় দেশ। কেননা জন কেরি এ বিষয়ে খুবই খোলামেলা বলেছেন, ইসলামিক স্টেটের সদস্যরা ইরাক বা সিরিয়া থেকে সরাসরি বাংলাদেশে আসছে না। তবে বাংলাদেশের হোমগ্রোন জঙ্গীদের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ রয়েছে। আইএস বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের মনোভাবও প্রায় একই ধরনের। আর এসব জঙ্গীকে পরাজিত করতে মার্কিন প্রযুক্তির বিকল্প নেই বলেও মনে করছে বাংলাদেশ সরকার। ৫ জানুুয়ারির নির্বাচন ঘিরে ঢাকা-ওয়াশিংটনের মধ্যে যে টানাপোড়েন শুরু হয়েছিল জন কেরির সফরের মধ্য দিয়ে তার পুরোপুরি অবসান হয়েছে বলে আভাস মিলেছে। কেননা জন কেরি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে বাংলাদেশের বিভিন্ন উদ্যোগের প্রশংসা করেছে। এছাড়া যে কোন বিষয়ে ওয়াশিংটন ঢাকার পাশে থাকবে বলেও বার্তা দিয়েছেন জন কেরি। এদিকে জন কেরিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে কোটা ও শুল্কমুক্ত পণ্য প্রবেশের সুবিধা নিশ্চিত করার জন্য বাংলাদেশের পক্ষ থেকে অনুরোধ জানালে তিনি ইতিবাচক সাড়া দিয়েছেন। একই সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুনী রাশেদ চৌধুরীকে ফেরত দেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। বিশেষ করে জন কেরি ধানম-ির বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকের পর বঙ্গবন্ধুর খুনীকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠাতে বিশেষ উদ্যোগ নেবেন বলে আশা প্রকাশ করছে সরকার। এছাড়া বাংলাদেশ সফরে এসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম কোন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ধানম-ির বঙ্গবন্ধু জাদুঘর পরিদর্শন করেছেন বলে এটাও বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি মাইল ফলক হয়ে থাকবে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ঢাকা সফরের বিষয়ে মঙ্গলবার ঢাকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, জন কেরির বাংলাদেশ সফরের মধ্য দিয়ে ঢাকা-ওয়াশিংটনের মধ্যে গভীর সম্পর্ক ও সহযোগিতা আরও বিস্তৃত হবে। জঙ্গী ও সন্ত্রাস প্রতিরোধে সহযোগিতা জোরদার করতে সম্মত হয়েছে দুই দেশ। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এই সফরে দুই দেশের মধ্যে অংশীদারিত্ব জোরদার হবে বলে আশা করা হচ্ছে। একইভাবে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের বিজ্ঞপ্তিতেও জন কেরির ঢাকা সফরের বিষয়ে সন্তোষ প্রকাশ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, জন কেরির বাংলাদেশ সফরের মধ্য দিয়ে ঢাকা-ওয়াশিংটনের মধ্যে বন্ধুত্ব আরও জোরালো হবে। দুই দেশের অংশীদারিত্ব ও সহযোগিতা আরও বাড়বে বলে আশাপ্রকাশ করেছে ওয়াশিংটন। বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরির ঢাকা সফরের মধ্য দিয়ে দুই দেশের বাণিজ্য সহযোগিতা আরও বাড়বে বলে প্রত্যাশা করেছে ঢাকা। দুই দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শুল্ক ও কোটামুক্ত বাংলাদেশী পণ্য প্রবেশ নিশ্চিতে অনুরোধ করেছে বাংলাদেশ সরকার। বাংলাদেশের এই অনুরোধে জন কেরি সাড়া দিয়েছেন। এদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি ঢাকা সফরের সময় প্রথমে তিনি জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদের সঙ্গে আলোচনা করেন। যদিও রওশন এরশাদের সঙ্গে আলাপটি ছিল সংক্ষিপ্ত। রওশন এরশাদের সঙ্গে আলাপের পরে তিনি বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠক করেন। বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া নিজে গিয়ে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের বাসায় কেরির সঙ্গে বৈঠক করেন। ওই বৈঠকের ফলে বিএনপি রাজনৈতিকভাবে লাভবান না হলেও দলটির নেতাকর্মীরা কিছুটা উজ্জীবিত হয়েছে বলে জানা গেছে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে জন কেরির ছিল এটি প্রথম ঢাকা সফর। এছাড়া বিগত পাঁচ বছরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের এটি দ্বিতীয় ঢাকা সফর। এর আগে ২০১২ সালের মে মাসে যুক্তরাষ্ট্রের তখনকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন দুই দিনের সফরে ঢাকায় এসেছিলেন। সে সময় হিলারি বাংলাদেশ সফর শেষে ভারতেও গিয়েছিলেন। জন কেরি এখন দিল্লীতে অবস্থান করছেন। দিল্লী থেকে আজ বুধবার তিনি যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে রওনা হবেন বলে জানা গেছে।
×