ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

বাতাস পাল্টে গেলে এই ধরনের আচরণের পুনরাবৃত্তি হতে পারে ॥ খন্দকার মাহবুব

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ৩১ আগস্ট ২০১৬

বাতাস পাল্টে গেলে এই ধরনের আচরণের পুনরাবৃত্তি হতে পারে ॥ খন্দকার মাহবুব

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মৃত্যুদ-প্রাপ্ত আসামি মীর কাশেম আলীর প্রধান আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেছেন, ভবিষ্যতে যদি বাতাস পাল্টে যায়, এই ধরনের আচরণের পুনরাবৃত্তি হতে পারে। মীর কাশেম আলীর রিভিউ খারিজ করে দেয়ার পর মঙ্গলবার সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী ভবনের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মুক্তিযোদ্ধা এবং অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তির উচ্ছ্বাসের বিষয়ে তিনি এমন মন্তব্য করেন। খন্দকার মাহবুব বলেন, ‘আজ যদি বিএনপি ক্ষমতায় থাকত, আর আমি সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি থাকতাম তাহলে এখানে টু শব্দ হলে ওখান থেকে হুকুম আসত, এটা সুপ্রীমকোর্টের কম্পাউন্ডে করা যাবে না।’ তিনি আরও বলেন, এখানে আজকে রায় ঘোষণা হয়েছে, ফাঁসির দড়ি নিয়ে ঢোল পেটানো ও মিষ্টি বিতরণ করা হচ্ছে। এটা আদালতের প্রতি কতটা অপমানজনক, তা আপনারা যারা মিডিয়ায় আছেন, তারা দেখবেন। আমি মনে করি, এই আচরণ অত্যন্ত দুঃখজনক। ভবিষ্যতে যদি বাতাস পাল্টে যায়, এই ধরনের আচরণের পুনরাবৃত্তি হতে পারে। ‘এই আইনেই তো মুক্তিযুদ্ধের পর বিচার শুরু হয়েছিলো’-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এই (বর্তমান) আইনে না, ইউ ডোন্ট নো। যুদ্ধাপরাধীদের আইন করেছিলাম, ১৯৫ জন বর্বর পাকিস্তানী সেনা সদস্যদের বিচারের জন্য। তিনি আরও বলেন, পরবর্তী পর্যায়ে আইনটি পরিবর্তন করা হয়েছে। ওই আইনটি করা হয়েছিল কেবলমাত্র যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য, সেনাবাহিনীর অধীনে যে সংস্থা ছিল, তাদের বিচারের জন্য। এই জন্যই মৌলিক অধিকার কার্টেল করেছি। এখানে যাদের বিচার হয়েছে, তাদের মৌলিক অধিকার কেটে বিচার করা হয়েছে।’ মীর কাশেম আলী কিশোর মুক্তিযোদ্ধা জসিম উদ্দিন হত্যাকা-ের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিলেন না। মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে, মিথ্যা সাক্ষ্য-প্রমাণ দিয়ে তাকে এ সাজা দেয়া হয়েছে। আপীল বিভাগ দেশের সর্বোচ্চ আদালত। যেহেতু আপীল বিভাগ এ রায় দিয়েছেন সেহেতু আমার পক্ষে এ রায়ের বিষয়ে কোন মন্তব্য করা ঠিক হবে না। সর্বোচ্চ আদালত যে রায় দিয়েছে সেটাই ন্যায়বিচার। তবে ভবিষ্যত, ভবিষ্যত প্রজন্ম এবং সারা পৃথিবীর যেসব আইনজ্ঞ আছেন তারাই বলবেন- এ রায় সঠিক ছিল কি-না? তারা কি মন্তব্য করেন, সেটাই দেখার বিষয়। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে খন্দকার মাহবুব বলেন, ‘১১ নম্বরের যে অভিযোগে মীর কাশেম আলীকে টাইব্যুনাল থেকে সর্বোচ্চ সাজা দেয়া হয়েছিল সেখানে একজন মুক্তিযোদ্ধা, বালক জসিম উদ্দিন ছাড়াও আরও পাঁচজনকে হত্যার কথা বলা হয়েছিল। আপীল মামলার রায়ে আপীল বিভাগ জানিয়েছিলেন, জসিম ছাড়া বাকি পাঁচজনকে হত্যার বিষয়টি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়নি’। ‘বাকি একটি মাত্র হত্যার জন্য সর্বোচ্চ সাজা হয়েছে। যে সাক্ষ্য-প্রমাণ আছে তার ভিত্তিতে অন্তত এ অভিযোগে (কিশোর মুক্তিযোদ্ধা জসিম হত্যা) তাকে সাজা দেয়া যায় না বলে আমি আদালতে বলেছি। আমি বলেছি, ফাঁসির সাজা হয়ে গেলে ভবিষ্যতে যদি প্রমাণিত হয়, তিনি জড়িত ছিলেন না, তাহলে নির্দোষ ব্যক্তি সাজা পেয়ে গেলেন’। ‘আদালতকে আরও বলেছি, যেহেতু মীর কাশেম আলী সরাসরি এ হত্যাকা-ের সঙ্গে প্রিন্সিপাল অফেন্ডার হিসাবে জড়িত- এটা প্রমাণ হয়নি সেহেতু তাকে ৩০২ ধারায় মৃত্যুদ- দেয়া আইনগতভাবে উচিত হবে না’। খন্দকার মাহবুব বলেন, ‘পৃথিবীর সব দেশের মতো আমাদের এখানেও কিছু বিষয় রয়েছে যদি কোন আসামিকে মৃত্যুদ- দেয়ার আদেশ হয়, তবে আদালত অবশ্যই বিবেচনা করবেন। সেগুলো হলো- এই আসামিকে ছেড়ে দিলে সে পুনরায় একই ধরনের অপরাধ করবে কি-না এবং তার চারিত্রিক গুণাবলী কি আছে?’ আমরা বলেছিলাম, এসব বিবেচনায়ও মীর কাশেম আলীকে এই একটি মাত্র চার্জে যে সাজা দেয়া- সেটা সঠিক হয়নি। আমরা বলেছিলাম, মীর কাশেম আলী একজন সজ্জন ব্যক্তি। তিনি সরাসরি রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। খন্দকার মাহবুব আরও বলেন, ‘আমি আদালতকে বলেছিলাম, মীর কাশেম আলী বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। চিকিৎসাসেবার ক্ষেত্রে হাসপাতাল করে তিনি সেবা করেছেন। গণমাধ্যমে জড়িত ছিলেন। এটা তার সামাজিক কর্মকা-। তিনি তদন্ত চলা অবস্থায় বিদেশ গিয়ে ফিরে এসেছেন। কারণ, তিনি জড়িত ছিলেন না। তাই তার মনে কোন সন্দেহ ছিল না। তিনি প্রত্যক্ষভাবে জড়িত না থাকায় তাকে চরম দ- তথা মৃত্যুদ- দেয়া উচিত হবে না’। ‘এই ব্যক্তিটিকে যদি আপনারা সাজা দেন আর ভবিষ্যতে যদি দেখা যায় সাজাটি সঠিক হয়নি তাহলে এটি কিন্তু সংশোধন করা যাবে না। এবং আপীল বিভাগ সাজা দিয়েছেন। আপীল বিভাগ বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত। আপীল বিভাগ সাজা বহাল রেখেছেন। এখানে আমার কিছু বলার নাই’।
×