ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষাই বাকি রইল

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ৩১ আগস্ট ২০১৬

রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষাই বাকি রইল

আরাফাত মুন্না ॥ জামায়াতের অর্থ যোগানদাতা হিসাবে পরিচিত যুদ্ধাপরাধী মীর কাশেম আলীর মৃত্যুদ-ের রায় সুপ্রীমকোর্টে বহাল থাকার পর, এ রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপিও প্রকাশ হয়েছে। ফলে কুখ্যাত এই যুদ্ধাপরাধীর সামনে দোষ স্বীকার করে প্রাণভিক্ষার আবেদন করা ছাড়া আর কোন পথই রইল না। মীর কাশেম প্রাণভিক্ষার আবেদন দাখিল করলে তা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত এ দ- কার্যকর করা যাবে না। তবে আবেদন না করলে যে কোন মুহূর্তে সরকার এই যুদ্ধাপরাধীর মৃত্যুদ- কার্যকর করতে পারবে। প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের আপীল বেঞ্চ মঙ্গলবার মীর কাশেম আলীর মৃত্যুদ-ের রায় ঘোষণা করে। এর আট ঘণ্টার মাথায় সেই রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপিও প্রকাশ করে সুপ্রীমকোর্ট। এর মধ্যদিয়ে ষষ্ঠ যুদ্ধাপরাধী হিসেবে মীর কাশেমের মৃত্যুদ- কার্যকরের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এর আগে জামায়াতের কাদের মোল্লা, মোহাম্মদ কামারুজ্জামান ও আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ ও মতিউর রহমান নিজামী এবং বিএনপির সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর রিভিউ আবেদন আপীল বিভাগে খারিজ হয়ে যায়। সব আনুষ্ঠানিকতা শেষে তাদের দ- কার্যকর করে সরকার। তাদের রায় বাস্তবায়নের আগে অনুসৃত প্রক্রিয়াগুলো মীর কাশেমের ক্ষেত্রেও দৃষ্টান্ত হিসেবে থাকছে। সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদ অনুসারে দ-াদেশ পাওয়া সব আসামিই শেষ সুযোগ হিসেবে প্রাণভিক্ষা চাইতে পারে। একাত্তরের হত্যাকারী মীর কাশেমকেও সে সুযোগ দেয়া হবে। নিয়ম অনুযায়ী, রিভিউ খারিজের রায়ের তিনটি প্রত্যায়িত অনুলিপি পাঠাতে হয় বিচারিক আদালত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে। সেগুলো ট্রাইব্যুনাল, কারা কর্তৃপক্ষ ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের জন্য। পাশাপাশি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও দুই পক্ষের আইনজীবীকেও অনুলিপি দিতে হয়। ট্রাইব্যুনাল ওই রায় পাওয়ার পর সেই আলোকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে কারা কর্তৃপক্ষকে আদেশ দেয়। আদেশে ট্রাইব্যুনালের বিচারকদের সই নিয়ে রায়ের কপিসহ পাঠানো হয় কারা কর্তৃপক্ষ, জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও আইন মন্ত্রণালয়ে। এরপর কারা কর্তৃপক্ষ আসামি কাশেমকে রিভিউ খারিজের রায় ও আদেশ পড়ে শুনিয়ে জানতে চাইবে- তিনি প্রাণভিক্ষা চান কিনা। দ- কার্যকরের প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানতে চাইলে এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, তিনি (কাশেম) যদি মনে করেন প্রাণভিক্ষা চাইবেন, তার দরখাস্ত রাষ্ট্রপতির কাছে প্রেরণ করা হবে। রাষ্ট্রপতির সিদ্ধান্তের পরই দ- কার্যকরের প্রক্রিয়া শুরু হবে। তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতি যদি প্রাণভিক্ষা দেন সেটা আলাদা কথা। আর যদি না দেন তাহলে দ- কার্যকরের প্রক্রিয়া শুরু হবে। আর প্রাণভিক্ষা না চাইলে যে কোন সময় দ- কার্যকর করা যাবে। এই দ- কার্যকরের এখতিয়ার সম্পূর্ণ সরকারের। তবে তার আগে স্বজনরা কারাগারে গিয়ে কাশেমের সঙ্গে সাক্ষাত করতে পারবেন। প্রাণভিক্ষার আবেদনের নিষ্পত্তি না হলে ফাঁসি কার্যকর করা যাবে না। রিভিউ খারিজের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের মধ্য দিয়েই দ- কর্যকরের প্রক্রিয়া শুরু হয় বলে মাহবুবে আলম জানান। চিকিৎসার জন্য বর্তমানে যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ দেশে ফিরবেন আগামী ৪ সেপ্টেম্বর। এর মধ্যে মীর কাশেম ক্ষমার আবেদন করলে ৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে কিনা জানতে চাইলে এ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, রাষ্ট্রপতি যেখানেই থাকুন না কেন, তাকে এটা অবহিত করা যায়। সেটাতে কোন অসুবিধা নেই। একাত্তরের যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত প্রথম ব্যক্তি হিসেবে ২০১৩ সালের ১২ ডিসেম্বর ফাঁসিতে ঝোলানো হয় জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কাদের মোল্লাকে। আর ২০১৫ সালের ১১ এপ্রিল জামায়াতের আরেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের মৃত্যুদ- কার্যকর করে কারা কর্তৃপক্ষ। তাদের দুজনের রিভিউ আবেদন একদিনের মধ্যে শুনানি শেষে খারিজ হয়ে গিয়েছিল। তারা রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাননি বলে সরকারের পক্ষ থেকে সে সময় জানানো হয়, পরে তাদের ফাঁসিতে ঝোলানো হয়। এরপর জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও বিএনপির সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মৃত্যুদ- কার্যকর করা হয় একই দিনে, গতবছর ২১ নবেম্বর। তারা প্রাণভিক্ষার আবেদন করলেও রাষ্ট্রপতি তা নাকচ করে দেন বলে সে সময় সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়। সর্বশেষ জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামীর রিভিউ আবেদন খারিজের ছয় দিনের মাথায় গত ১১ মে তাকে ফাঁসিতে ঝোলানো হয়। তিনি প্রাণভিক্ষার আবেদন করেননি বলে সে সময় সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। কাদের মোল্লার রিভিউ খারিজের রায়ে আপীল বিভাগ বলেছিল, প্রাণভিক্ষার জন্য কারাবিধিতে বেঁধে দেয়া ৭ থেকে ২১ দিনের সময়সীমা যুদ্ধাপরাধ মামলার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না। আসামি প্রাণভিক্ষা চাইলে তার নিষ্পত্তির আগে দ- কার্যকর করা যাবে না। কিন্তু আসামি প্রাণভিক্ষার জন্য কত সময় পাবেন এবং কতদিনের মধ্যে তার নিষ্পত্তি হবে সে বিষয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইনে সুনির্দিষ্ট কোন সময় বেঁধে দেয়া না থাকায় অস্পষ্টতা কাটেনি। কামারুজ্জামান এবং তারপর সাকা চৌধুরী ও মুজাহিদের ক্ষেত্রে এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছিলেন, প্রাণভিক্ষার সুযোগ নেবেন কিনা তা জানাতে আসামি ‘যৌক্তিক সময়’ পাবেন। এর ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, একটি ‘মার্সি পিটিশন’ লিখতে যে সময় লাগে এক্ষেত্রে সেটাই ‘যৌক্তিক সময়’ বলে তিনি মনে করেন। আর আইনমন্ত্রী আনিসুল হক মঙ্গলবার কাশেমের রায়ের পর সাংবাদিকদের বলেন, প্রাণভিক্ষার আবেদনের জন্য সাত দিনের অপেক্ষা আমরা করে থাকি। আমাদের কাছে মনে হয় সাত দিন অত্যন্ত যুক্তিসঙ্গত সময়।
×