ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

একাত্তরে তার নিষ্ঠুরতা তাকে ‘বাঙালী খানে’ পরিণত করে;###;সকল ভাইরাস অতিক্রম করে বিচারে কাক্সিক্ষত রায় পাওয়ায় খুশি দেশবাসী

এখন শুধু ফাঁসির দড়ি ॥ জামায়াতের খাজাঞ্চী মীর কাশেমের বিচারের সকল ধাপ শেষ

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ৩১ আগস্ট ২০১৬

এখন শুধু ফাঁসির দড়ি ॥ জামায়াতের খাজাঞ্চী মীর কাশেমের বিচারের সকল ধাপ শেষ

বিকাশ দত্ত ॥ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক মৃত্যুদ-প্রাপ্ত বদর বাহিনীর কমান্ডার, চট্টগ্রামের বাঙালী খান, জামায়াতে ইসলামীর নির্বাহী পরিষদের সদস্য মীর কাশেম আলীর ফাঁসির রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগ খারিজ করে দিয়েছে। আইনী লড়াইয়ে সর্বশেষ ধাপ পার হবার ফলে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াতে ইসলামীর এই নেতার মৃত্যুদ- কার্যকরে আর কোন আইনী বাধা থাকল না। সামনে এখন ফাঁসির দড়ি। শুধু একটি ধাপ বাকি। সেটা হলো নিজের কৃতকর্মের জন্য অনুশোচনার কথা জানিয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাইতে পারেন। এ বিষয়টির নিষ্পত্তি হলেই সরকার যে কোন সময় দ- কার্যকর করবে। প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের আপীল বেঞ্চ মঙ্গলবার এক শব্দের এই রায় ঘোষণা করে। সকাল ৯টা ১ মিনিটে এজলাসে এসে প্রধান বিচারপতি শুধু বলেন, রিভিউ পিটিশন ইজ ডিসমিস। বেঞ্চের অপর সদস্যরা হলেন- বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, বিচারপতি মির্জা হোসাইন হায়দার ও বিচারপতি বজলুর রহমান। এই ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই এজলাস কক্ষে উপস্থিত আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থী জনগণের সকল উদ্বেগের অবসান ঘটে। কারণ, বহাল রইল জামায়াত নেতা মীর কাশেম আলীর মৃত্যুদ-ের চূড়ান্ত রায়। তবে আদালত ইতোপূর্বে আপীল বিভাগের দেয়া রায় সংশোধন করেছে। সেখানে বলেছেন, ১৪ নম্বর অভিযোগে (নাসিরুদ্দিন চৌধুরীকে নির্যাতন) মীর কাশেম দোষী সাব্যস্ত করা হলেও তাকে কোন দ- দেয়া হয়নি। তাই ট্রাইব্যুনাল যে দ- দিয়েছিল সেটি বহাল রাখা হলো। এই কারণেই আপীল বিভাগ তাদের ঐ রায়ের অংশবিশেষ সংশোধন করে এ রায় ঘোষণা করে বলে জানান এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। ২০১৪ সালের ২ নবেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দেয়া প্রাণদ-ের সাজাই তাতে বহাল রাখে আপীল বিভাগ। অবশেষে রিভিউয়ের রায়েও তা বহাল রাখা হয়েছে। রায়ের পর এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছেন উদ্বেগের অবসান ঘটল। তিনি বলেন, এ রায় নিয়ে আমিও উদ্বিগ্ন ছিলাম, দেশবাসীও উদ্বিগ্ন ছিল। আইনমন্ত্রী এ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেছেন, মীর কাশেমের দ- বহাল থাকায় বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে আমিও আজ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছি। ১৯৭১ সালের ঘাতকদের শেষ পর্যন্ত বিচার করতে পেরেছি। রাষ্ট্রপতির নিকট ক্ষমা না চাইলে যে কোন সময় মৃতুদ- কার্যকর করা যেতে পারে। মীর কাশেম আলী প্রাণভিক্ষা চাইলে বিদেশে বসেই রাষ্ট্রপতি তার নিষ্পত্তি করতে পারবেন। মীর কাশেমের প্রধান আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেছেন, মিথ্যা সাক্ষ্যে রায়। সেক্ষেত্রে ভবিষ্যত বিবেচনা করবে। ভবিষ্যতে যদি বাতাস পাল্টে যায়, এই ধরনের আচরণের পুনরাবৃত্তি হতে পারে। রায় উপলক্ষে আদালতের মূল প্রবেশ পথসহ অন্যান্য প্রবেশপথে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়। আদালতের আঙ্গিনায় বাড়তি পুলিশ মোতায়েন করা হয়। এজলাস কক্ষে সাংবাদিক, আইনজীবী ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের পীনপতন নীরবতার মধ্যে প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা রিভিউ আবেদন খারিজ করে দেন। রায় ঘোষণার পর আদালতে মুক্তিযোদ্ধা ও আইনজীবীগণ উল্লাস করে সেøাগান দিতে থাকে। ফাঁসি হলো, ফাঁসি হলো মীর কাশেমের ফাঁসি হলো। মীর কাশেমের মামলাটি চূড়ান্ত রায় হলো আপীল বিভাগের ৭ম মামলা। ছয়টি রায়ের মধ্যে পাঁচটিতে জামায়াতের দুই সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কাদের মোল্লা ও মুহাম্মদ কামারুজ্জামান, জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর, জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। আপীল বিভাগের আরেক রায়ে জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর সাজা কমিয়ে আমৃত্যু কারাদ- দেয়া হয়েছে। সেই রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশিত হওয়ার পর দুই পক্ষেই রিভিউ আবেদন করেছে। শুনানি চলার মধ্যেই মুক্তিযুদ্ধকালীন জামায়াত আমির গোলাম আযম ও বিএনপির সাবেক মন্ত্রী আবদুল আলীমের মৃত্যু হওয়ায় তাদের আপীলের নিষ্পত্তি হয়ে গেছে। আপীলের রায়ে যে তিনটিতে ট্রাইব্যুনালে দ- পেয়েছিলেন, তার মধ্যে ৪,৬,১২ অভিযোগ থেকে খালাস দিয়েছে আপীল বিভাগ। আর ২,৩,৭,৯,১০,১১,১৪ নং অভিযোগে ট্রাইব্যুনালের দ- বহাল রেখেছে আপীল বিভাগ। আপীল আদালত ১২ নম্বর অভিযোগ থেকে মীর কাশেমকে খালাস দিয়েছে, যেখানে তাকে মৃত্যুদ- দিয়েছিল ট্রাইব্যুনাল। ৪ ও ৬ নম্বর অভিযোগে সাত বছর করে সাজার রায় থেকেও এই জামায়াত নেতা খালাস পেয়েছেন। আপীল নাকচ করে ১১ নম্বর অভিযোগে কিশোর মুক্তিযোদ্ধা জসিম উদ্দিন আহমেদসহ কয়েকজনকে হত্যার দায়ে মীর কাশেমের সর্বোচ্চ সাজার রায়ই বহাল রাখা হয়েছে। একই সিদ্ধান্ত হয়েছে ২, ৩, ৭, ৯, ১০ ও ১৪ নম্বর অভিযোগে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদ-ের সাজার ক্ষেত্রেও। উদ্বেগের অবসান হলো ॥ এ্যার্টনি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছেন,সর্বোচ্চ আদালতের রিভিউ রায়েও যুদ্ধাপরাধী জামায়াত নেতা মীর কাশেম আলীর মৃত্যুদ- বহাল থাকায় ‘উদ্বেগের অবসান হয়েছে’ । যিনি রায়ের আগের দিন উদ্বেগে থাকার কথা বলেছিলেন। মঙ্গলবার রায়ের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মাহবুবে আলম বলেন, আমাদের সব উদ্বেগের অবসান ঘটেছে। মাহবুবে আলম বলেন, আমি প্রথমেই বলেছি, একজন আইনজীবী হিসেবে আমি এই মামলা পরিচালনা করেছি। মামলাটি পরিচালনার পরিপ্রেক্ষিতে এটা রায়ের জন্য ছিল। আমার তো উদ্বিগ্ন হওয়া স্বাভাবিক। কী রায় হয় অন্য যুদ্ধাপরাধীদের ব্যাপারে মৃত্যুদ- যেভাবে বহাল ছিল, এটা বহাল না থাকলে সমগ্র জাতি এবং আমি হতাশ হতাম। সে কারণেই উদ্বেগ। তিনি বলেন এখন রাষ্ট্রপতির কাছে মীর কাশেম প্রাণভিক্ষা চাইতে পারেন। না চাইলে যে কোন সময় দ- কার্যকর করা যেতে পারে। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছি ॥ আইনমন্ত্রী এ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেছেন, মীর কাশেমের দ- বহাল থাকায় বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে আমিও আজ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছি। ১৯৭১ সালের ঘাতকদের শেষ পর্যন্ত বিচার করতে পেরেছি। সচিবালয়ে নিজ দফতরে আইনমন্ত্রী বলেন, ১৯৭১ সালের ঘাতকদের রায়ের যে প্রক্রিয়া ছিল, তার অনেকগুলোই কার্যকর করতে পেরেছি। ইনশাল্লাহ এ রায়ও আমরা কার্যকর করতে পারব। সন্তুষ্ট প্রসিকিউশন পক্ষ ॥ একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদ-াদেশ পাওয়া জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামীর রিভিউ খারিজ হওয়াতে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন প্রসিকিউশন পক্ষ। প্রসিকিউশনের পক্ষে ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ বলেন, অসাধারণ ভাল লাগছে। মামলার ধরন আলাদা ছিল। আন্তর্জাতিকভাবে বিচার প্রক্রিয়ায় তদন্ত ও আইনী লড়াইয়ের চ্যালেঞ্জ ছিল। সব কিছু মোকাবেলা করে আজ কাক্সিক্ষত রায়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করছি। তবে শেষ অবধি রিভিউ রায় বহাল থাকায় আমরা সন্তুষ্ট। আমাদের চূড়ান্ত বিজয় হয়েছে। ভাইরাস ধরেছিল ॥ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার প্রধান সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান খান বলেছেন, মীর কাশেমের রায়কে কেন্দ্র করে অনেক জল ঘোলা করা হয়েছে। আমি বলব ভাইরাসে ধরেছিল। তবে শেষ ভাল যার, সব ভাল তার। তিনি আরও বলেন, ইচ্ছাকৃতভাবে জাতিকে ভুল ‘মেসেজ’ দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল। যারা এই চেষ্টা করেছিল তারা মোটেই ঠিক করেনি। মীর কাশেম আলী নিজেও বিত্তবান মানুষ। তিনি লবিস্ট নিয়োগ করে রায় ভিন্ন খাতে নেয়ার চেষ্টা করেছিলেন। যে অভিযোগে প্রাণদ- ॥ অভিযোগ ১১: ১৯৭১ সালে ঈদ-উল-ফিতরের পরের যে কোন একদিন মীর কাশেমের পরিকল্পনা ও নেতৃত্বে আলবদর বাহিনীর সদস্যরা চট্টগ্রাম শহরের কোা এক অজ্ঞাত স্থান থেকে মুক্তিযোদ্ধা জসিমকে অপহরণ করে আন্দরকিল্লার ডালিম হোটেলে নিয়ে যায়। তাকে ২৮ নবেম্বর পর্যন্ত সেখানে আটকে রেখে নির্যাতন করা হয়। নির্যাতনের ফলে জসিমের মৃত্যু হলে আরও পাঁচ অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তির লাশসহ তার মৃতদেহ কর্ণফুলী নদীতে ফেলে দেয়া হয়। মিথ্যা অভিযোগ, মিথ্যা সাক্ষ্য ॥ মীর কাশেম আলীর প্রধান আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেছেন, মীর কাশেম আলী কিশোর মুক্তিযোদ্ধা জসিম উদ্দিন হত্যাকা-ের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিলেন না। মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে, মিথ্যা সাক্ষ্য-প্রমাণ দিয়ে তাকে এ সাজা দেয়া হয়েছে। রায়ের প্রতিক্রিয়ায় এসব কথা বলেন তিনি। বিচার কার্যক্রম ॥ একাত্তরে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে ২০১২ সালের ১৭ জুন গ্রেফতার করার পর ট্রাইব্যুনালের নির্দেশে মীর কাশেমকে কারাগারে পাঠানো হয়। ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন ২০১৩ সালের ১৬ মে মীর কাশেমের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে। একই বছরের ৫ সেপ্টেম্বর অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় মীর কাশেমের যুদ্ধাপরাধের বিচার। এরপর মামলাটি ট্রাইব্যুনাল-১ থেকে ট্রাইব্যুনাল-২ এ স্থানান্তর করা হয় এবং সেখানেই ১৮ নবেম্বর প্রসিকিউটর সুলতান মাহমুদ সীমন ও রেজিয়া সুলতানা চমনের সূচনা বক্তব্যের (ওপেনিং স্টেটমেন্ট) মধ্য দিয়ে শুরু হয়। ২০১৩ সালের ১১ ডিসেম্বর থেকে ২০১৪ সালের ১৭ এপ্রিল পযন্ত মীর কাশেম আলীর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেন তদন্ত কর্মকর্তা মোঃ নুরুল ইসলামসহ মোট ২৪ জন। এরপর ২১ ও ২২ এপ্রিল মীর কাশেম আলীর পক্ষে সাফাই সাক্ষ্য দেন তার ছোট বোন মমতাজ নুরুদ্দিনসহ তিনজন। সাক্ষ্য-জেরা এবং দুই পক্ষের যুক্তিতর্ক শেষে ২০১৪ সালের ৪ মে মাসে মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখা হয়। মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ২০১৪ সালের ২ নবেম্বর মীর কাশেম আলীকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদ-াদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। এ রায়ের বিরুদ্ধে ওই বছরের ৩০ নবেম্বর মীর কাশেম আলী আপীল করেন। ২০১৬ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি শুরু হয় আপীল মামলাটির শুনানি। ওইদিন এবং পরদিন ১০ ফেব্রুয়ারি ট্রাইব্যুনালের রায় এবং সাক্ষীদের অভিযোগভিত্তিক সাক্ষ্য-প্রমাণ উপস্থাপন শেষে আসামিপক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু করেন মীর কাশেমের আইনজীবী এস এম শাহজাহান। গত ১৭ ফেব্রুয়ারি যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ করেন তিনি। আর রাষ্ট্রপক্ষে এ্যাটর্নি জেনারেল শুরু করেন সোমবার (২৩ ফেব্রুয়ারি)। ২৪ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রপক্ষ যুক্তিতর্ক শেষ করার পর পুনরায় আসামিপক্ষের প্রধান আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন আইনী পয়েন্টে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন। এর মধ্য দিয়ে মীর কশেমের মামলার আপীল শুনানি শেষ হলো। এর আগে ২৪ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্র ও আসামি উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে রায় ঘোষণার জন্য ৮ মার্চ দিন ধার্য করে আদেশ দেন আপীল বিভাগ। রিভিউ আবেদন ॥ মৃত্যুদ- বহাল রেখে আপীলের পূর্ণাঙ্গ রায় ৬ জুন প্রকাশের পর তা পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে ১৯ জুন আবেদন করেন মীর কাশেম। রিভিউ আবেদন শুনানির দিন ধার্যের জন্য আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। এ ধারাবাহিকতায় ২১ জুন চেম্বার বিচারপতি বিষয়টি ২৫ জুলাই নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠান এবং মামলাটি সোমবারের দৈনন্দিন কার্যতালিকায় ৬৩ নম্বর ক্রমিকে আসে। পরে আদালত এক মাস সময় দেয়। ২৪ ও ২৮ আগস্ট রিভিউ আবেদনের শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। বদর কমান্ডার থেকে শীর্ষ নেতা ॥ আসামি মীর কাশেম আলী আলবদর বাহিনীর তৃতীয় প্রধান ছিলেন। ইসলামী ছাত্রশিবিরের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মীর কাশেম ১৯৮৫ সাল থেকে জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ অর্থাৎ মজলিসে শূরার সদস্য হিসেবে দলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছিলেন। এ মামলার শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষ মীর কাশেমকে আখ্যায়িত করেছে পাকিস্তানের খান সেনাদের সঙ্গে মানবতাবিরোধী অপরাধে লিপ্ত হওয়া ‘বাঙালী খান’ হিসাবে, যিনি সে সময় জামায়াতের তখনকার ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘের পূর্ব পাকিস্তান শাখার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানী সেনাদের সহযোগিতায় ছাত্রসংঘের বাছাই করা সদস্যদের নিয়ে গঠিত সশস্ত্র আলবদর বাহিনীর চট্টগ্রাম অঞ্চলের কমান্ডার হিসেবে মীর কাশেম যেসব মানবতাবিরোধী অপরাধ ঘটান, তা উঠে এসেছে ট্রাইব্যুনাল ও আপীল বিভাগের রায়ে।
×