ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

৭ দিনে গৃহহীন সহস্রাধিক পরিবার

শরীয়তপুরে পদ্মার তীব্র ভাঙ্গন

প্রকাশিত: ০৪:০৬, ৩১ আগস্ট ২০১৬

শরীয়তপুরে পদ্মার তীব্র ভাঙ্গন

নিজস্ব সংবাদদাতা, শরীয়তপুর, ৩০ আগস্ট ॥ মঙ্গলবার পদ্মাপাড়ে জাজিরা উপজেলার কু-েরচর, বিলাশপুর ও নড়িয়া উপজেলার সুরেশ্বর এলাকায় পদ্মার ভাঙ্গন আরও তীব্র হয়েছে। পাকা ভবন, মসজিদ, মাদ্রাসা, রাস্তাঘাট, শত শত একর ফসলি জমি, গাছপালা নদীতে বিলীন হচ্ছে। জাজিরা উপজেলার কু-েরচর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মোতালেব মোল্লা, নড়িয়া বাজার বণিক সমিতির ক্যাশিয়ার নজরুল ইসলাম খলিফাসহ স্থানীয়রা জানান, মঙ্গলবার ভোরে জাজিরা উপজেলার কু-েরচর ও খেজুরতলা বাজার এলাকায় পদ্মার তীব্র ভাঙ্গনে মসজিদ, পাকা ভবন, ২৫ দোকান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ খেজুরতলা বাজার বিলীন হয়ে গেছে। এছাড়াও এর পাশের কু-েরচর গ্রামের দুই শতাধিক এবং সখীপুরের কাঁচিকাটা, তারাবুনিয়া ইউনিয়নের তিন শতাধিক পরিবার তাদের ঘরবাড়ি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে। কান্নায় ভেঙ্গে পড়েছে অসহায় মানুষগুলো। হুমকির মুখে রয়েছে আলহাজ ইসমাইল মেমোরিয়াল, কু-েরচর উচ্চ বিদ্যালয়, মসজিদ-মাদ্রাসাসহ অর্ধশত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। প্রতিদিন শত শত ঘরবাড়ি, মসজিদ-মাদ্রাসা, স্কুল, রাস্তাঘাট, গাছপালাসহ বিশাল এলাকাজুড়ে ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে। কিন্তু প্রশাসনের পক্ষ থেকে ভাঙ্গন রোধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে না বলে এলাকাবাসী অভিযোগ করেছেন। এসব এলাকায় গত এক সপ্তাহে পাকা ঘরসহ সহায়-সম্বল হারিয়ে সহস্রাধিক পরিবার নিঃস্ব হয়ে পড়েছে। এলাকাবাসী জানান, প্রশাসনের লোকজন আসে আর দেখে যায় এবং সহমর্মিতা দেখায়। কিন্তু প্রতিদিন শত শত ঘরবাড়ি, মসজিদ-মাদ্রাসা, স্কুল, রাস্তাঘাট, গাছপালাসহ বিশাল এলাকাজুড়ে ফসলি জমি বিলীন হলেও ভাঙ্গন রোধে কোন ব্যবস্থা তারা গ্রহণ করছে না। এদিকে ভাঙ্গনকবলিত এলাকা থেকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করার পর থেকে লোকজন নিজেরাই তাদের পাকা ভবনসহ ঘরদরজা ভেঙ্গে এবং আসবাবপত্রসহ মালামাল যে যতটুকু পারছে সরিয়ে নিচ্ছে। কেউবা খোলা আকাশের নিচে দিনরাত কাটাচ্ছে। টাঙ্গাইলে হুমকির মুখে সেতু ও স্কুল নিজস্ব সংবাদদাতা টাঙ্গাইল থেকে জানান, বন্যার পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে ঝিনাই নদীর ভাঙ্গনে সদর উপজেলার গালা ইউনিয়নের পাছবেথইর গ্রামের ১৫টি বাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এছাড়া বাসাইল উপজেলার নথখোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এলজিইডির ১২ লাখ ৮৭ হাজার ৩১৭ টাকা ব্যয়ে নির্মিত সম্প্রসারিত একটি ভবনের কিছু অংশ ও প্রায় আড়াই লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত শহীদ মিনারটি ইতোমধ্যে বিলীন হয়ে গেছে। মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে টাঙ্গাইল-সখীপুর ভায়া বাসাইল সড়কে ঝিনাই নদীর ওপর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নথখোলা সেতুটি। এ সেতুটি ধসে পড়লে জেলা শহরের সঙ্গে টাঙ্গাইলের পূর্বাঞ্চলের কয়েকটি উপজেলার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে। বাসাইল উপুেজলার অন্যতম ঐতিহ্যবাহী নথখোলা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়টি প্রতি বছরই বর্ষা শুরু হলেই ভাঙ্গন দেখা দেয়। আর এ সময়ই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের টনক নড়ে। বিদ্যালয়টি স্থায়ীভাবে প্রতিরক্ষার ব্যাপারে বছরের অন্য কোন সময় ব্যবস্থা গ্রহণের কোন উদ্যোগ নেয়া হয় না। বরং সারাবছর নদী ড্রেজিংয়ের নামে বিদ্যালয় ও সেতুর নিকটবর্তী এলাকায় প্রভাবশালী বালুখেকোরা অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করার কারণে এ ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। নথখোলা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের নিচের মাটি সরে গিয়ে শহীদ মিনারটি সম্পূর্ণভাবে এবং বিদ্যালয়ের কিছু অংশ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এর পাশেই রয়েছে টাঙ্গাইল-সখীপুর ভায়া বাসাইল সড়কের নথখোলা সেতু। এ মুহূর্তে ভাঙ্গন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে বিদ্যালয়টিও দু’এক দিনের মধ্যেই বিলীন হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী। এতে ধসে যেতে পারে টাঙ্গাইল-সখীপুর ভায়া বাসাইল সড়কে ঝিনাই নদীর ওপর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্মিত নথখোলা সেতুটিটিও। এ সেতুটি ভেঙ্গে পড়লে টাঙ্গাইলের পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে বাসাইল ও সখীপুর উপজেলাসহ মির্জাপুর, কালিহাতী, ঘাটাইল, ময়মনসিংহের ভালুকা, ফুলবাড়ী উপজেলার কিছু অংশের লাখ লাখ মানুষের টাঙ্গাইল জেলা সদরের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে। রাজশাহীতে টি-গ্রোয়েনে ধস স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী থেকে জানান, পদ্মার পানি কমতে শুরু করলেও রাজশাহী শহর রক্ষা বাঁধের শ্রীরামপুর এলাকার ফাটল ধরা টি-গ্রোয়েনে এবার ধস নেমেছে। মঙ্গলবার ভোরে সুরক্ষিত টি-গ্রোয়েনের ৭ মিটার অংশ নদীতে ধসে যায়। ব্যাপক ধস ঠেকাতে সকাল থেকেই সেখানে জিওব্যাগ ফেলছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। এর আগে উজান থেকে নেমে আসা স্রোতের তোড়ে গত রবিবার ওই টি-গ্রোয়েনে ফাটল ধরেছিল। সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত সেখানে ৫০০টি জিওব্যাগ ফেলে পানি উন্নয়ন বোর্ড। শহর রক্ষা বাঁধের ওই অংশের দায়িত্বরত রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী মাহবুব রাসেল বলেন, সোমবার রাত ১০টা পর্যন্ত তিনিসহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা সেখানে ছিলেন। সর্বশেষ রাত ১টা পর্যন্ত তারা টি-গ্রোয়েনে নজরদারি রেখেছিলেন। তখনও সেটি সুরক্ষিতই ছিল। তবে মঙ্গলবার ভোরে সেটিতে ধসের খবর পান তারা। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে দ্রুত তারা জিওব্যাগ ফেলতে শুরু করেন। বেলা ২টা পর্যন্ত ধসে যাওয়া টি-গ্রোয়েন রক্ষায় অন্তত ৫০০ জিওব্যাগ ফেলা হয়েছে। ধস ঠেকানো পর্যন্ত তারা জিওব্যাগ ফেলবেন। দৌলতদিয়ায় পানি বাড়ছে নিজস্ব সংবাদদাতা রাজবাড়ী থেকে জানান, গোয়ালন্দের কাছে দৌলতদিয়া পয়েন্টে পদ্মা নদীর পানি ২ সে.মিটার বেড়েছে। তবে এখনও বিপদসীমার ৭৫ সে.মিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নদীতে তীব্র স্রোত থাকায় বেড়েছে ভাঙন। এ তথ্য দৌলতদিয়া পানি উন্নয়ন বিভাগ সূত্রের। এদিকে দৌলতদিয়ায় চলমান ৩টি ফেরি ঘাটের মধ্যে এখন মাত্র ২ এবং ৪ নং ফেরি ঘাট দুটি চালু রয়েছে। পদ্মা নদীতে প্রবল স্রোত এবং ভাঙনের কারণে রাত থেকে ৩ নং ফেরি ঘাটটি সাময়িক বন্ধ রয়েছে। বিআইডব্লিউটিএর দৌলতদিয়া ঘাট সূত্র জানায়, ৩ নং ঘাটটি ভাঙনের জন্য পন্টুনের র‌্যাম স্থানান্তরের কাজ শুরু হয়েছে।
×