ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

আজ জরুরী সভা ডাকা হয়েছে

এফবিসিসিআইয়ের নির্বাচন পদ্ধতিতে সংস্কার আসছে

প্রকাশিত: ০৪:০৪, ৩১ আগস্ট ২০১৬

এফবিসিসিআইয়ের নির্বাচন পদ্ধতিতে সংস্কার আসছে

এম শাহজাহান ॥ ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের নির্বাচন পদ্ধতি সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। প্রকৃত এবং অভিজ্ঞ ব্যবসায়ীদের সংগঠনটির নেতৃত্বে নিয়ে আসতে গঠনতন্ত্রেও বড় ধরনের পরিবর্তন ও সংশোধন করা হতে পারে। এর লক্ষ্য হচ্ছে-খাতভিত্তিক এবং অঞ্চল ভিত্তিক অভিজ্ঞ খ্যাতিমান ব্যবসায়ীদের পরিচালনা পর্ষদে নিয়ে আসার সুযোগ তৈরি করে দেয়া। একই সঙ্গে মনোনীত পরিচালক পদ্ধতির বিষয়টি নিরৎসাহিত করে সরাসরি ভোটের মাধ্যমে নেতৃত্ব তৈরিতে সবচেয়ে বেশি জোর দেয়া হচ্ছে। মতিঝিলের ফেডারেশন ভবনে এ উপলক্ষে আজ মঙ্গলবার এক জরুরী সভার আয়োজন করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এ তথ্য। জানা গেছে, এফবিসিসিআইয়ের পরিচালনা পর্ষদের সব পদে সরাসরি ভোটের নির্বাচনের দাবি রয়েছে সংগঠনটির সাধারণ সদস্যদের। প্রতিবার নির্বাচনের আগেই সভাপতি প্রার্থীরা সরাসরি ভোট দেয়ার পদ্ধতি চালু করাসহ বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি দিয়ে থাকেন। কিন্তু এসব প্রতিশ্রুতির কোনটাই বাস্তবায়ন হয় না। তবে বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ দায়িত্ব নেয়ার পর গত ২৩ মার্চ অনুষ্ঠিত বোর্ড সভায় সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদকে আহ্বায়ক করে ১৩ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়। এছাড়া ওই সময় চেম্বার গ্রুপ ও এ্যাসোসিয়েশন গ্রুপের দুই সহ-সভাপতিকে সহ-আহ্বায়ক করা হয়। নির্বাচন পদ্ধতি সংস্কারসহ এ কমিটি এফবিসিসিআইয়ের গঠনতন্ত্র পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছে। এছাড়া নির্বাচন পদ্ধতি সংশোধনের সুপারিশ করা হবে এই কমিটির পক্ষ থেকে। খাতভিত্তিক বাণিজ্য সংগঠনগুলোর নির্বাচন প্রক্রিয়া, স্বচ্ছতা যাচাই-বাছাই মানদ- নির্ধারণ করা হবে। একই খাতে একাধিক সংগঠনগুলোকে কীভাবে একীভূত করা যায়, সে বিষয়েও সুপারিশ করতে কাজ করছে এই কমিটি। এছাড়া ব্যবসায়ীদের দীর্ঘদিনের দাবি অনুযায়ী সরাসরি ভোটের মাধ্যমে সভাপতি নির্বাচনের বিষয়ে সরকারকে একটি রূপরেখা দিতেও কাজ করা হচ্ছে। এরই ধারবাহিকতায় নির্বাচন পদ্ধতি সংস্কারের বিষয়ে আজ মঙ্গলবার জরুরী বৈঠক ডাকা হয়েছে। এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারীখাত বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সভাপতিত্বে আজকের সভায় শুধুমাত্র সংগঠনটির সাবেক সভাপতিরা উপস্থিত থাকবেন। জানা গেছে, আজকের এই বৈঠকের পরই নির্বাচন পদ্ধতি সংস্কারের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে এফবিসিসিআই। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদ কলকাতা থেকে টেলিফোনে জনকণ্ঠকে বলেন, দেশের বাইরে থাকায় আমি মিটিংয়ে অংশগ্রহণ করতে পারছি না। তবে নির্বাচন পদ্ধতি সংস্কারের বিষয়টি পুরনো। এ নিয়ে আমার সময়ও অনেক কথাবার্তা হয়েছে। তিনি বলেন, সরাসরি ভোটে নির্বাচন করার দাবি দীর্ঘদিনের। এছাড়া দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য এবং সামগ্রিক অর্থনীতির স্বার্থে প্রকৃত ব্যবসায়ীদের নেতৃত্বে আনতে হলে নির্বাচন পদ্ধতি সংস্কার করা প্রয়োজন। অপ্রয়োজনীয় ও নামসর্বস্ব সংগঠন এফবিসিসিআইয়ে থাকুক সেটা কেউ চায় না। আমরা চাই, প্রকৃত ব্যবসায়ীরাই ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতৃত্ব দেবে। জানা গেছে, ১৯৭৩ সালে এফবিসিসিআই প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর ২০০২ সাল পর্যন্ত সভাপতি ও সহসভাপতি পদে সরাসরি নির্বাচনের নিয়ম ছিল। কিন্তু ২০০২ সালে তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার এক আদেশ বলে এফবিসিসিআইয়ের নির্বাচন পদ্ধতির আমূল পরিবর্তনের নির্দেশ দেয়। এ আদেশে সভাপতি ও সহসভাপতি পদে সরাসরি নির্বাচনের পরিবর্তে পরিচালকদের ভোটে নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হয়। একই সঙ্গে মনোনীত পরিচালকের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় দিন দিন গুরুত্ব হারাচ্ছে এফবিসিসিআইয়ের নির্বাচন। তাই নির্বাচন পদ্ধতিতে বড় ধরনের সংস্কার করা প্রয়োজন বলে মনে করেন সংগঠনটির সাধারণ সদস্যরা। জানা গেছে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধিভুক্ত অঞ্চলভিত্তিক ৭৮টি চেম্বার এবং ৩৫৭টি খাতভিত্তিক এ্যাসোসিয়েশন রয়েছে। বর্তমানে এফবিসিসিআইতে ৫২টি পরিচালক পদ রয়েছে। তবে গত ফেব্রুয়ারিতে করা এক প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক পদসংখ্যা হবে আগামীতে ৬০ জন। এর মধ্যে চেম্বার ও এ্যাসোসিয়েশন গ্রুপ থেকে নির্বাচিত পরিচালক হবেন ১৮ জন করে মোট ৩৬ জন।
×