ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কেনিয়াভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান হেলিক্স ইনস্টিটিউট অব ডিজিটাল ফিন্যান্সের গবেষণায় তথ্য

৯৪ শতাংশ এজেন্ট অপ্রাতিষ্ঠানিকভাবে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা দিচ্ছে

প্রকাশিত: ০৪:০৩, ৩১ আগস্ট ২০১৬

৯৪ শতাংশ এজেন্ট অপ্রাতিষ্ঠানিকভাবে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা দিচ্ছে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ দেশে মোবাইল ফোন সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের প্রায় ছয় লাখ এজেন্ট রয়েছে। এগুলোর ৯৪ শতাংশই অপ্রাতিষ্ঠানিকভাবে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা দিচ্ছে। ফলে অর্থ লুট বা ছিনতাই ও এ্যাকাউন্ট জালিয়াতির সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। কেনিয়াভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান হেলিক্স ইনস্টিটিউট অব ডিজিটাল ফিন্যান্সের এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। এশিয়ার চারটি ও আফ্রিকার সাতটি দেশের মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্টদের ওপর পরিচালিত জরিপের ভিত্তিতে ‘এজেন্ট নেটওয়ার্ক এ্যাক্সিলারেটর (এএনএ) সার্ভে : বাংলাদেশ রিপোর্ট ২০১৬’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি প্রণয়ন করা হয়। গবেষণায় বলা হয়েছে, ২০১৪ সালে জালিয়াতির শিকার হয়েছেন ১৯ শতাংশ এজেন্ট। চলতি বছরের ছয় মাসে প্রায় ২২ শতাংশ এজেন্ট এ ধরনের জালিয়াতির শিকার হয়েছেন বলে জানা গেছে। প্রতিবেদনটি প্রণয়নে বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকার এজেন্টদের ওপর জরিপ চালানো হয়। এর অর্ধেকের বেশি ছিল গ্রামপর্যায়ে। এক্ষেত্রে সহায়তা করে ফিন্যান্সিয়াল ইনক্লুশন কনসালটিং ফার্ম, ভারতের মাইক্রোসেইভ, বিল গেটসের বিল এ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন, স্বল্পোন্নত দেশগুলোতে অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিয়ে কাজ করা আমেরিকার প্রতিষ্ঠান ইউএনসিডিএফ এবং আফ্রিকার দারিদ্র্য দূরীকরণে কাজ করা প্রতিষ্ঠান এফএসডি আফ্রিকা। সমীক্ষায় বলা হয়েছে, সন্ত্রাসী কর্মকা-ে আক্রান্ত হওয়ার পাশাপাশি জালিয়াতির সংখ্যা ধীরে ধীরে বাড়ছে। যেহেতু তাদের এ্যাকাউন্ট নম্বরগুলো সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো চেনে, এ কারণেই এ জালিয়াতির ঘটনা বাড়ছে। তবে বাংলাদেশের এজেন্টরা বর্তমানে মিথ্যা এসএমএসের বিষয়ে খুবই সতর্ক থাকে। এছাড়া ১৭ শতাংশ জাল টাকার বিষয়ে এবং সিম ও পিন চুরির বিষয়ে সতর্ক থাকে আট শতাংশ এজেন্ট। এজেন্টরা বিভিন্ন অপরাধ ও প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। তাদের সুরক্ষা দিতে সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোকে এগিয়ে আসার পরামর্শ দেয়া হয়েছে প্রতিবেদনে। প্রতারণার ধরন, পরিচিতি এবং প্রশমন ব্যবস্থা নিয়ে বিশেষ প্রশিক্ষণের আয়োজন করা উচিত সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোকে। বাংলাদেশের এজেন্টদের প্রধান কিছু প্রতিবন্ধকতাও তুলে ধরা হয়েছে এ প্রতিবেদেনে। এতে বলা হয়েছে, হঠাৎ গ্রাহকের কমবেশি আগমন, সম্পদের অভাবে বেশি অর্থ নিতে না পারা এবং সেবাদাতা প্রতিষ্ঠগুলোর ক্যাশ ডেলিভারিতে দেরি হওয়ার মতো কারণগুলো এজেন্টদের ভোগায়। এখানে সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান ও এজেন্টের মধ্যে আরও বেশি যোগাযোগ বাড়াতে হবে। মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বাংলাদেশ উদ্ভাবনী তারল্য ব্যবস্থাপনায় বিশে^ অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, একচেটিয়া নয়, তবে একটি প্রতিযোগী অবস্থা বাংলাদেশে রয়েছে। যেখানে নতুন এজেন্ট তৈরি করার সুযোগ রয়েছে। এ প্রতিযোগিতার মধ্যে উদ্ভাবনী পণ্যের অভাব এবং পণ্যের উন্নয়ন আটকে আছে। সেবাপ্রদানকারীর প্রয়োজন অনুযায়ী আরও বেশি প্রচারণামূলক পণ্যের সংকলন করা এবং ভালো গ্রাহকের চাহিদার কথা বিবেচনায় নিতে বলা হয়েছে। এদিকে বাংলাদেশের বেশিরভাগ এজেন্ট রয়েছে তারা মূলত প্রক্সি হিসেবে ব্যবসা করছে। তারা একচেটিয়া ব্যবসা করতে না পারার পরও তাদের ব্যবসা পরবর্তী বছরগুলোতে চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। তারপরও অনেক বাংলাদেশী ডিজিটাল ফাইন্যান্সিং সার্ভিসে ঢুকছে, এজেন্টের লাভজনক অবস্থা তৈরি হচ্ছে, যা একটি ভাল মার্কেট এবং ভবিষ্যতের উজ্জ্বল সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। দক্ষতার বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৩১ শতাংশের মতো একটি বড় অংশ এজেন্ট রয়েছে, যাদের দক্ষতা অনেক ভাল। যারা প্রায় এক দশমিক পাঁচ বার দেশের মাঝারি মানের লেনদেন করে থাকে। এদিকে ট্রেনিংপ্রাপ্ত ৮৮ শতাংশ এজেন্ট রয়েছে, যারা তাদের মূল্য তালিকা এবং ৪৯ শতাংশ এজেন্ট তাদের আইডি নম্বর টাঙিয়ে রাখে। আর যারা একেবারেই প্রশিক্ষিত নয়, তাদের মধ্যে ৭২ শতাংশ মূল্য তালিকা এবং ৩৬ শতাংশ তাদের আইডি ঝুলিয়ে রাখে। মূল্য তালিকা ও আইডি নম্বর টাঙিয়ে রাখার বিষয়ে সবচেয়ে বেশি সতর্ক গ্রাম্য এলাকার এজেন্টরা। তাদের ৮৯ শতাংশ মূল্য তালিকা ও ৫৫ শতাংশ আইডি প্রকাশ্যে রাখে। যেখানে বাংলাদেশের চেয়ে খারাপ অবস্থায় রয়েছে ভারত ও পাকিস্তান। বর্তমানে ৮০ শতাংশ এজেন্ট রয়েছে যারা প্রশিক্ষিত। ২০১৪ সালে যা ছিল ১১ শতাংশ। প্রশিক্ষিত এজেন্টের এ হার ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে ভাল। ভারত ও পাকিস্তানে প্রশিক্ষিত এজেন্টের হার ৬৯ ও ৬২ শতাংশ। তবে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক প্রশিক্ষিত এজেন্ট রয়েছে কেনিয়া ও জিম্বাবুয়েতে; যা ৯২ শতাংশ। তবে এজেন্টরা প্রশিক্ষিত হলেও মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল নীতি নিয়ে জ্ঞানের অভাব রয়েছে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। এজেন্টদের আয়ের বিষয়ে বলা হয়েছে ২০১৪ সাল থেকে ২০১৬ সালে এসে প্রায় ৩৮ শতাংশ আয় বেড়েছে এজেন্টদের। সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান ও এজেন্টদের মধ্যে প্রায় ৩৩ শতাংশ দৈনন্দিন লেনদেন বেড়েছে বলে রিপোর্টে বলা হয়েছে। বাংলাদেশী এজেন্টদের খুব বেশি আশাবাদী বলা হয়েছে গবেষণার অন্য দেশগুলোর তুলনায়। এখানকার এজেন্টরা তাদের একই কাজে পরবর্তী সময়ে নিয়োজিত রাখতে চায় ৮৬ শতাংশ। ১৫ শতাংশ রয়েছে যারা চার বছর ধরে, ১৮ শতাংশ তিন বছর ধরে, ২৩ শতাংশ দুই বছর ধরে, ২২ শতাংশ এক বছর ধরে এবং ২২ শতাংশ এক বছরের কম সময় ধরে এ কাজ করে যাচ্ছে এবং পরবর্তী সময়ও করতে চায়। রিপোর্ট অনুযায়ী দোকানে বিভিন্ন ধরনের ব্যবসার পাশাপাশি প্রায় ৯৪ শতাংশ এজেন্ট মোবাইল ব্যাংকিং লেনদেনে কাজ করে। যেখানে এজেন্টশিপ তাদের দোকানের একটি ব্যবসায়িক অংশ। যেখানে ভারতের মাত্র ৩৩ শতাংশ এজেন্ট এভাবে সেবাপ্রদান করে। বাংলাদেশের বাজারে ৪৯ শতাংশ বাজার দখল করে রেখেছে বিকাশ। ২৭ শতাংশ ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের, ছয় শতাংশ এম ক্যাশের, সাত শতাংশ ইউ ক্যাশের, পাঁচ শতাংশ মাই ক্যাশের এবং ছয় শতাংশ অন্যদের দখলে রয়েছে।
×