ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

কৃষি খাতে প্রণোদনা

প্রকাশিত: ০৩:৫৮, ৩১ আগস্ট ২০১৬

কৃষি খাতে প্রণোদনা

বাংলাদেশ প্রাকৃতিক দুর্যোগের দেশ। বন্যা, ঝড়, খরা এসব বহুবিধ প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করেই এদেশের মানুষকে চলতে হয়। ভৌগোলিক ও জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে আমাদের দেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকি নিত্যনতুন বাঁক নিচ্ছে। সাম্প্রতিক বন্যায় দেশের বিভিন্ন জনপদে নানামুখী দুর্ভোগের চিত্র ফুটে উঠেছে। মাঠের ফসল তো গেছেই, সঙ্গে ভিটেমাটিও গেছে অনেকের, গবাদিপশুরও ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে কোন কোন অঞ্চলে নদীভাঙন চিত্র উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মাত্রায় নতুন করে দুশ্চিন্তার সৃষ্টি করেছে। তবে আশার কথা কৃষিবান্ধব সরকার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের পাশে দাঁড়াতে এক কর্মসূচী হাতে নিয়েছে। এবার কৃষি পুনর্বাসন ও প্রণোদনার আওতায় দেশের ৬৪ জেলার প্রায় ৪ লাখ ১৮ হাজার কৃষককে বিনামূল্যে কৃষি উপকরণ দিচ্ছে সরকার। এর মধ্যে সার, বীজ ও ধানের চারা রয়েছে। এ জন্য সরকারের বাজেট ৪২ কোটি ৯ লাখ টাকা। এছাড়া কৃষি উৎপাদন বহুমুখীকরণের লক্ষ্যে সরকারের চলমান প্রণোদনা কর্মসূচীও পাশাপাশি থাকবে। সরকারের এই সিদ্ধান্ত সময়োপযোগী এবং এটি কৃষি ক্ষেত্রে গুরুত্ব বহন করবে। কৃষিতে বন্যার ক্ষতির প্রভাব পড়ে দীর্ঘমেয়াদী। চলতি বন্যায় সারাদেশে ২৩ জেলার ৮ লাখ ৮৩ হাজার ৯ শত ২২ হেক্টর জমি পানিতে তলিয়ে যায়। ফলে নষ্ট হয়েছে ১ লাখ ৪৫ হাজার হেক্টর জমির আউশ-আমন ফসল ও শাক-সবজি। ৩৩ হাজার ৭৮১ হেক্টর আবাদি জমির আংশিক ফসলের ক্ষতি হয়েছে। সবমিলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৭ লাখ কৃষক। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে ১৪টি জেলার কৃষক ও কৃষি জমি। জেলাগুলো হলো- কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, নীলফামারী, গাইবান্ধা, সিরাজগঞ্জ, জামালপুর, দিনাজপুর ও বগুড়া, কুষ্টিয়া, শেরপুর, সুনামগঞ্জ, সিলেট, শরীয়তপুর ও মাদারীপুর। দেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি কৃষিতে এ পরিমাণ ক্ষতিতে সরাসরি সরকারের পদক্ষেপ নেয়া ছাড়া উপায় নেই। বন্যায় সর্বস^ হারানো অগণিত অসহায় কৃষকের অনেকেই কর্মহীন এবং বেকার অবস্থায় মানবেতর জীবনযাপন করছে। দেশের ৮০ শতাংশ মানুষ এখনও প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কৃষির সঙ্গে সম্পৃক্ত। জাতীয় উৎপাদনের বড় অংশ এখনও কৃষি খাত থেকে আসে। কিন্তু কৃষিপ্রধান এদেশে এখনও অবহেলিত কৃষকরা। এমনিতেই দেশে আবাদি জমি কমে যাচ্ছে। অনেক এলাকায় শিল্পনগরী গড়ে উঠছে। এর ওপর কৃষকদের যদি উপযুক্ত পৃষ্ঠপোষকতা না করা যায়, তাহলে ধীরে ধীরে তারা কৃষি পেশা থেকে সরে গিয়ে অন্য পেশায় আত্মনিয়োগ করবে। এতে দেশ মারাত্মক খাদ্য ঝুঁকিতে পড়তে পারে। তাই কৃষি ও কৃষক বাঁচাতে জরুরী ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। মনে রাখতে হবে কৃষিনির্ভর দেশে কৃষি খাত ও কৃষক যদি উপেক্ষিত থাকে, তাহলে এর বিরূপ ফল সরাসরি তৃণমূল জনগণের ওপর পড়ে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের পাশে দাঁড়ানো সরকারের দায়িত্ব। তাদের পুনর্বাসনসহ কৃষি ক্ষেত্রে যথাযথ মনোযোগ দিয়ে, বাস্তবানুগ কর্মপরিকল্পনা করতে হবে। কৃষকদের প্রণোদনা দেয়ার যে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে তা সঠিকভাবে বণ্টন এবং প্রয়োজনে আরও বরাদ্দ বাড়াতে হবে। কৃষক ও কৃষি খাতের প্রতি বিশেষ দৃষ্টি দিতে হবে দেশ-জাতির বৃহৎ স্বার্থেই।
×