ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

এদের ক্ষমা নেই!

প্রকাশিত: ০৩:৫৮, ৩১ আগস্ট ২০১৬

এদের ক্ষমা নেই!

আমাদের সমাজে ইভটিজিংয়ের কারণে অল্পবয়সী মেয়েদের করুণ অবস্থার কথা, এমনকি মৃত্যুর ঘটনা আগে বেশ ক’বার ঘটেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রতিটি ঘটনার পর যথাযথ পদক্ষেপও নিয়েছে। মেয়েদের স্কুলের সামনে পুলিশ টহল এবং অন্যান্য কার্যক্রম নিতে দেখেছি আমরা। এর সুফলও মিলেছে। অবস্থার কিছুটা উন্নতি হচ্ছে বলে সমাজে এমন ধারণাও তৈরি হচ্ছিল। এরকম একটি পরিস্থিতিতে রাজধানীর ব্যস্ত একটি এলাকায় প্রকাশ্য দিবালোকে নামী স্কুলের সামনে বখাটের হাতে ওই স্কুলে অধ্যয়নরত ছাত্রী রিশার ছুরিকাহত হওয়ার ঘটনায় একই সঙ্গে বিমূঢ় ও ক্ষুব্ধ হয়ে পড়তে হয়। বখাটে যুবকের হাতে উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী সুরাইয়া আক্তার রিশার মর্মান্তিক মৃত্যু আবারও চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিল আমাদের সমাজে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা কেমন। ঢাকা মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, অভিযুক্তকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। অথচ ঘটনার কয়েকদিন পেরিয়ে গেলেও এ ধরনের ভয়ঙ্কর ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিকে এখনও গ্রেফতার করতে না পারার ব্যর্থতা মেনে নেয়া কঠিন। সহপাঠীর মৃত্যুর খবর স্কুলে ছড়িয়ে পড়লে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা হত্যাকারীর গ্রেফতার ও বিচারের দাবিতে সড়ক অবরোধ করে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিযুক্তকে গ্রেফতারের আশ্বাস দিলে তারা ক্যাম্পাসে ফিরে যায়। আমরা এই আশ্বাসের প্রতিফলন দেখতে চাই। বখাটেদের নির্যাতিত হওয়ার সব পথ বন্ধ করার জন্য প্রশাসনকে সর্বোচ্চ তৎপর হতে হবে। সমাজেরও জেগে ওঠা চাই। পথে-ঘাটে মেয়েদের উত্ত্যক্ত করার বিষয়টি কমেছে বলে অনেকে মনে করেন। আসলে কি কমেছে? এ ধরনের ঘটনা প্রায়শ গোপন করে যাওয়া হয়। এটা একই সঙ্গে বিস্ময় ও ক্ষোভের কারণ যে, প্রকাশ্য দিবালোকে ব্যস্ত জনপদে স্কুলের সামনে বখাটে যখন হামলা করল তখন আশপাশের মানুষরা কেন বাধা দিতে এলো না! কোথায় চলেছে আমাদের সমাজ! মানুষের ভেতর মানবিকতা ও দায়িত্ববোধ কি লুপ্ত হতে বসেছে? কারও সন্তান রাস্তায় বিপদে পড়লে সে সন্তানটির পাশে কি কেউ এসে দাঁড়াবেন না? রিশার ছুরিকাঘাতে আহত হওয়ার স্থানটির কাছাকাছি পুলিশেরও থাকার কথা। সবার চোখের সামনে দিয়ে ঘাতক পালিয়ে গেল কিভাবে! মঙ্গলবার জনকণ্ঠের প্রতিবেদনে বিভিন্ন ব্যক্তির বরাত দিয়ে ছুরিকাঘাতে রক্তাক্ত রিশাকে হাসপাতালে নেয়ার ব্যাপারে স্কুল কর্তৃপক্ষের অবহেলার বিষয়টি উঠে এসেছে। এটা সত্য হলে দুঃখজনক। অভিভাবকরা ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠানোর পর সঙ্গত কারণেই সন্তানদের নিরাপত্তা ও অন্যান্য বিষয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষের ওপর নির্ভর করেন। সেখানে ছোটখাটো গাফিলতি ও উপেক্ষা বড় ক্ষতির কারণ হয়ে উঠতে পারে। রিশা নিশ্চয়ই একা নয়, বখাটের উৎপাতে তার মতো আরও অনেক কোমলমতি শিশু-কিশোরী শিক্ষার্থীর স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। অভিভাবকদের সময় কাটছে আতঙ্কের ভেতর দিয়ে। এমন সমাজ আমাদের কাম্য নয়। বখাটেদের কারণে আর কোন মেয়ের করুণ মৃত্যু আমরা দেখতে চাই না। আর কোন বাবার হাহাকার, মায়ের আহাজারি আমরা শুনতে চাই না। রিশার পরিবারের প্রতি আমাদের শোক ও সমবেদনা। বখাটে ঘাতকের ক্ষমা নেই। স্বল্পতম সময়ের ভেতর তাকে গ্রেফতার করে দ্রুত বিচার আইনে বিচার করে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা হবে, এটাই প্রত্যাশা।
×