ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মস্তিষ্ক রোগের কিছু উত্তর

প্রকাশিত: ০৬:৫৯, ৩০ আগস্ট ২০১৬

মস্তিষ্ক রোগের কিছু উত্তর

১. আমার সন্তানের বয়স ৮ বছর। হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে ডাক্তারের কাছে যাই। ডাক্তার বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর জানতে পারি, আমার সন্তানের মস্তিষ্কে পানি জমে আছে। ডাক্তার জানান যে, অপারেশন লাগবে না ওষুধের মাধ্যমেই পানি কমে যাবে। কিন্তু আমি সম্পূর্ণভাবে চিন্তামুক্ত হতে পারছি না কারণ ওষুধ দ্বারা পানি কমানো হলে এর কি কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হবে না তো? এটা কি সম্ভব বিনা অপারেশনে পানি মস্তিষ্কেই শুকিয়ে যাবে? উত্তর- মস্তিষ্কে পানি জমা রোগের নাম-হাইড্রো-ক্যাফালাস। মস্তিষ্কে পানি জমা হওয়ার অনেকগুলো কারণ আছে। এর মধ্যে জন্মগত ত্রুটি, জন্মের পর মস্তিষ্কের ইনফেকশন, রক্তক্ষরণ এবং মস্তিষ্কে কোন টিউমারের জন্যও পানি জমতে পারে। আপনি আপনার প্রশ্নে রোগীর কি অসুবিধা হয়েছিল সে সম্পর্কে কিছু বলেননি। রোগীর ইতিহাস এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষা দেখে পানি জমার কারণ বের করা যায়। সাধারণভাবে মস্তিষ্কে পানি জমলে ওষুধের মাধ্যমে পানি কমে না। অপারেশন করে পানি সরানোর ব্যবস্থা করা হয়। খুব কম সংখ্যক (২%-৩%) ক্ষেত্রে মস্তিষ্কের পানি আপনা আপনি কমে যেতে পারে। তাই আপনি অবিলম্বে একজন নিউরো সার্জনের শরণাপন্ন হবেন অন্যথায় রোগীর মস্তিষ্কের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত হবে। ২. আমার বাবার বয়স ৫৫ বছর। স্ট্রোক করার পর আমরা হাসপাতালে ভর্তি করি। বিভিন্ন পরীক্ষার পর জানতে পারি এটা ব্রেন স্ট্রোক হয়েছে। ১৫ দিন পর বাসায় নিয়ে আসি। এরপর থেকে আস্তে আস্তে হাত-পা কেমন যেন অবশ হয়ে আসে, নিজের হাতে খেতে পারে না, পায়ে ভর দিয়ে হাঁটতে পারে না এবং বাথরুমেও একা যেতে পারে না। ডাক্তারের নিয়ম মতো ওষুধ খাওয়াচ্ছি ২ মাস পর একবার দেখায়ে নিতে বলছে। কিন্তু এই অবস্থায় কি করণীয়? উত্তর- আপনার বাবার ব্রেন স্ট্রোক করার পরপরই উনার অবস্থা কেমন ছিল তার কোন বিবরণ আপনি লিখেননি। আবার স্ট্রোক করার পর কি অজ্ঞান ছিলেন না একপাশ অবশ ছিল, তখন কি উনি আদৌ হাঁটতে পারতেন কিনা তা বলেননি। হাসপাতাল থেকে ১৫ দিন পর ছুটি দেয়ার মানে উনার প্রাথমিক অবস্থার উন্নতি হয়েছিল যাতে উনাকে বাসায় নিয়ে পরবর্তী চিকিৎসা চালানো যায়। যেহেতু উনার ব্রেন স্ট্রোক করেছে এর চিকিৎসা দীর্ঘমেয়াদী এমন কি আজীবন চলবে। চিকিৎসায় উনার উন্নতি ধীরে ধীরে হবে। আপনি নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শমতো ওষুধ খাওয়াবেন এবং চিকিৎসকের পরামর্শ মতো চলবেন।এই ধরনের রোগীদের ফিজিওথেরাপির প্রয়োজন হয়। ডাক্তারের পরামর্শমতো উনাকে ফিজিওথেরাপি দিতে হবে। ৩. আমার বয়স ৪৫ বছর। ৫ বছর হলো আমার ডায়াবেটিস ধরা পরে। আমি নিয়মিত হাঁটাহাঁটি করি এবং ওষুধও খাই। বর্তমানে আমার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণেই আছে। কিন্তু মাঝে মাঝেই আমার হাত-পা ঝিন-ঝিন করে, একপাশ হয়ে শুয়ে থাকলে অবশ অবশের মতো হওয়া এবং হাত-পা প্রচ- ব্যথা করে। ৬ মাস ধরে আমি এই কষ্টগুলো ভোগ করছি। আমি কি এই কষ্টগুলো থেকে মুক্ত হব না নাকি সবসময় এই যন্ত্রণায় ভুগতে হবে? উত্তর- হাত-পা ঝিন ঝিন করার একটি কারণ ডায়াবেটিস। সাধারণত ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকলে এগুলো কম হয়। কিন্তু ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকা সত্ত্বেও অনেক সময় ডায়াবেটিসজনিত নিউরোপ্যাথি হতে পারে। এজন্য কঠোরভাবে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে এবং কিছু ওষুধ সেবন করে নিরাময় পাওয়া সম্ভব। এছাড়া আরও কিছু স্নায়ুবিক কারণে এই ধরনের সমস্যা হতে পারে। তাই আপনি একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। ৪. আমার আম্মার বয়স ৬০ বছর। ব্রেন স্ট্রোক করার পর হাসপাতালে নেই। ডাক্তার বিভিন্ন পরীক্ষার পর বলেন যে, আমার আম্মার মস্তিষ্কের রগ ছিঁড়ে রক্তক্ষরণ হয়েছে। এক মাস পর হাসপাতাল থেকে বাসায় নিয়ে আসার পর আম্মা মুখ দিয়ে কোন খাবার খেতে পারছে না। নাক দিয়ে লিকুইড খাবার দিচ্ছি, কথা বলতে চায় কিন্তু বলতে পারছে না। আবার প্রস্রাব-পায়খানা করছে বিছানায়, হাত-পা বাম পাশের অংশ অবশ নাড়াতে পারে না। রক্তক্ষরণ ওষুধের মাধ্যমে বন্ধ করা হয়েছে। কিন্তু আমি জানতে চাচ্ছি যে, আমার মায়ের কি আর উন্নতি হবে না? প্রায় দুমাস হলো এই অবস্থা। আমার কি করার আছে বা দেশের বাইরে কি কোন উন্নত চিকিৎসা আছে? উত্তর- মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণের জন্য স্ট্রোক হলে রক্তক্ষরণের কারণটা বের করা দরকার। অনেক সময় উচ্চরক্তচাপ, ডায়াবেটিস এসব কারণে মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণ হতে পারে। আর এসব কারণে যদি রক্তক্ষরণ হয়ে থাকে তবে তার ওষুধ দিয়েই চিকিৎসা করাতে হবে এবং উন্নতি ধীরে ধীরে পরিলক্ষিত হবে। ডাক্তারের পরামর্শমতো চিকিৎসা চালিয়ে যাবেন। কথা বলা বা হাত-পায়ের শক্তি ফিরে পাওয়ার ব্যাপারে নিশ্চয়তা নেই। কখনও কখনও মস্তিষ্কের রক্তনালীর জটিলতার জন্য (অহবঁৎুংস, ধাস) মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হতে পারে। এসব ক্ষেত্রে অপারেশনের প্রয়োজন হতে পারে। ডাঃ মোঃ জাহেদ হোসেন নিউরো সার্জন ও স্পাইনসার্জন সহযোগী অধ্যাপক, ক্লিনিক্যাল নিউরোর্সাজারি বিভাগ ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসাইন্সেস ও হাসপাতাল।
×