ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

‘আপন সৃষ্টির মাঝেই বেঁচে থাকবেন হুমায়ুন আজাদ’

প্রকাশিত: ০৬:০৬, ৩০ আগস্ট ২০১৬

‘আপন সৃষ্টির মাঝেই বেঁচে থাকবেন হুমায়ুন আজাদ’

স্টাফ রিপোর্টার ॥ হুমায়ুন আজাদের মতো লেখককে শুধু স্মরণ নয়, অনুসরণ করতে হবে। সংক্ষিপ্ত জীবনে যে কথা তিনি লিখে গেছেন আজও তা প্রাসঙ্গিক হয়ে আছে। এভাবে আপন সৃষ্টির মাঝেই বেঁচে থাকবেন তিনি। বেঁচে আছেন তাঁর প্রবন্ধ, কবিতা ও উপন্যাসে। অত্যন্ত স্পষ্টভাষী এই লেখক সত্য কথা বলতে কখনও পিছপা হতেন না; সেটা যতই অপ্রিয় হোক। আজকের উগ্রপন্থার এই সঙ্কটের কথা তিনি বলে গেছেন অনেক আগেই। দূরদৃষ্টিসম্পন্ন ছিলেন বলেই সময়ের আগেই অনুধাবন করেছিলেন এই সঙ্কটকে। সংবেদনশীল এই মানুষটি ছিলেন অন্তর্দৃষ্টিসম্পন্ন। বহুমাত্রিক ও প্রথাবিরোধী লেখক হুমায়ুন আজাদের ১২তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তার বক্তৃতায় এসব কথা বলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। সোমবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি মিলনায়তনে যৌথভাবে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে হুমায়ুন আজাদ ফাউন্ডেশন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। আলোচনাসভা ও হুমায়ুন আজাদের কবিতার আবৃত্তি দিয়ে সাজানো হয় অনুষ্ঠান। অনুঠানে প্রধান বক্তা ছিলেন অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন সংস্কৃতি সচিব আক্্তারী মমতাজ। আলোচনায় অংশ নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এম এম আকাশ। জঙ্গীবাদের উত্থান প্রসঙ্গে হুমায়ুন আজাদের সঙ্গে কথোপকথনের স্মৃতিচারণ করে আরেফিন সিদ্দিক বলেন, সুদূর জার্মানি যাওয়ার আগে একদিন কথা হয় তাঁর সঙ্গে। সেদিন তিনি বর্তমানের সঙ্কটের কথা তিনি আমাকে সরাসরি বললেন। একদিন জামাত-শিবির চক্র দেশকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাবেÑআলাপের একপর্যায়ে একথাও বললেন। তাঁর মৃত্যুর সংবাদ যখন জার্মান দূতাবাসের মাধ্যমে জানলাম তখন সত্যি বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। হুমাযুন আজাদের স্মৃতি রক্ষার্থে হুমায়ুন আজাদ ফাউন্ডেশন সভাপতি মোঃ সাজ্জাদ কবির অনুরোধ জানালে ঢাবি উপাচার্য বলেন, তাঁর স্মৃতিরক্ষার্থে এখনও সুনির্দিষ্ট কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। আণবিক শক্তি কমিশনের সামনে যেখানে হুমায়ুন আজাদের ওপর আক্রমণ করা হয়েছিল, সেখানে একটি আবক্ষ মূর্তি স্থাপন এবং ওই সড়কটি তাঁর নামে নামকরণ, হুমায়ুন আজাদের কর্মক্ষেত্র বাংলা বিভাগে কোন একটি কক্ষকে তাঁর নামে নামাঙ্কিত করার উদ্যোগ গ্রহণের জন্য সুনির্দিষ্ট সুপারিশ লাগবে। এজন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ ও হুমায়ুন আজাদ ফাউন্ডেশন থেকে প্রস্তাব পেশ করা হলে তা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হবে। সংস্কৃতিসচিব আক্্তারী মমতাজ বলেন, হুমায়ুন আজাদ অসীম সাহসিকতার সঙ্গে কালোকে কালো আর সাদাকে সাদা বলতে পারতেন। কবিতা-প্রবন্ধে ইতি-নেতিকে উল্লেখ করেছেন তিনি। তিনি জীবনভর ধর্মান্ধতা ও প্রতিক্রিয়শীলতার বিরুদ্ধে লিখেছেন। হুমায়ুন আজাদের ছাত্র কবি মোহন রায়হান বলেন, বাংলা সাহিত্যের খ্যাতিমান কবিদের অনেক চরণের চেয়ে শক্তিশারী তাঁর কবিতার শব্দচয়ন, অসাধারণ শব্দজ্ঞান; তেমনি অদ্ভুত তার উপমা-প্রতীক নির্মাণ। অধ্যাপক এম এম আকাশ বলেন, হুমায়ুন আজাদ জীবনে ঝুঁকি নিয়েছেন বারবার। কিন্তু কখনও চাটুকারিতা করেননি। তিনি যতদিন বেঁচে ছিলেন, ততদিন পূর্ণাঙ্গ জীবন যাপন করেছেন। এছাড়াও স্মরণ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ শাহ কামাল, প্রাবন্ধিক ও প্রকাশক খান মাহবুব, সাংবাদিক মোজাম্মেল বাবু, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক আহমেদ কবীর, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক শামীম রেজা। ফরাসি গবেষকের সোনার বাংলা শীর্ষক বক্তৃতা ॥ সোমবার বিকেল বাংলা একাডেমির মুনীর চৌধুরী সভাকক্ষে ‘সোনার বাংলা এ্যান্ড দি এস্টাবলিশড ফ্রন্টিয়ার : কলোনিয়াল হিস্টোরি এ্যান্ড লিগেসি অব দি পার্টিশন’ শীর্ষক বক্তৃতা করেন দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক ফরাসি গবেষক জেরেমি কড্রন। বক্তৃতার পাশাপাশি অনুষ্ঠানটিতে স্মরণ করা হয় সদ্য প্রয়াত কবি শহীদ কাদরীকে। অনুষ্ঠানের শুরুতেই প্রখ্যাত কবি শহীদ কাদরীকে স্মরণ করা হয় শহীদ কাদরীর জন্য শোকগাথা শিরোনামে। এছাড়া অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিয়োগান্তক হত্যাকা- বিষয়ে রচিত শহীদ কাদরীর কবিতা হন্তারকদের প্রতি পাঠ করেন রামেন্দু মজুমদার। একই কবিতার ইংরেজী ভাষ্য পাঠ করেন ড. সোনিয়া নিশাত আমিন। জেরেমিক কড্রন তাঁর বক্তৃতায় বলেন, সোনার বাংলা ধারণাটি উন্মূল কিংবা হঠাৎ আবেগপ্রসূত ধারণামাত্র নয়। বাংলার বিস্তৃত ইতিহাসে এর গভীর প্রেক্ষাপট নিহিত আছে। উপমহাদেশের রাজনৈতিক পরিক্রমায় সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প, জাতীয়তাবাদী অভিঘাত এবং মানুষের মুক্তির আন্দোলনে যে ভাবগত পাটাতন নির্মিতি পেয়েছে তার ভেতর স্বতন্ত্র স্বাধীন ভূখ- প্রাপ্তির প্রত্যাশায় বাঙালীরা নানা মাধ্যমে তাদের আকুতি ব্যক্ত করেছে। তিনি আরও বলেন, সোনার বাংলার আকাক্সক্ষাটি কেবল রাজনৈতিক কোন প্রকল্প ছিল না বরং একই সঙ্গে বাঙালী লেখক-বুদ্ধিজীবীরা তাদের চিন্তায় ও তৎপরতায় এই অভীপ্সা ব্যক্ত করে গেছেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর ৭ই মার্চের কালজয়ী ভাষণে সোনার বাংলা ও বাঙালী জাতীয়তাবাদী ধারণাকে বাংলার ভৌগোলিক সীমানা-পেরুনো বৃহৎ অবয়ব প্রদান করেছে। ঠিক তেমনি শামসুর রাহমানের স্বাধীনতা কবিতায় এমন এক রাজনৈতিক স্বপ্নভূমির কথা উচ্চারিত হয়েছে যা শত শহীদের রক্তে রঞ্জিত এক অনন্য সোনার বাংলারই প্রতিচ্ছবি। সভাপতির বক্তব্যে ইমেরিটাস অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম বলেন, শহীদ কাদরী তাঁর সমকালীন কবিদের চেয়ে কাব্যবিশ্বে এবং ব্যক্তিগত জীবনেও ছিলেন স্বতন্ত্র। দীর্ঘ প্রবাস-জীবনের শেষদিকের কবিতায় বারবার উচ্চারিত হয়েছে প্রিয় স্বদেশের জন্য তাঁর আকুল হাহাকার। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ইতিহাসবিদ সৈয়দ আনোয়ার হোসেন, কবি আসাদ চৌধুরী, কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা, কবি মুহাম্মদ সামাদ, কবি কাজী রোজী এমপি, রামেন্দু মজুমদার, আবুল হাসনাত, মফিদুল হক, কথাসাহিত্যিক আনিসুল হক, অধ্যাপক শরীফউদ্দিন আহমেদ, অধ্যাপক গিয়াসউদ্দিন মোল্যা, অধ্যাপক সোনিয়া নিশাত আমিন, কবি আজিজুর রহমান আজিজ, হাশেম সুফী, ড. ফিরোজ মাহমুদ, বাবু রহমান, সাইম রানা প্রমুখ। নিঃসঙ্গ নিরাময় নাটকের উদ্বোধনী মঞ্চায়ন ॥ আধুনিকতা বদলে দিয়েছে জীবনের অনেক কিছু। সহজেই মিলে যাচ্ছে কাক্সিক্ষত বস্তুটি। একইভাবেই আধুনিকতা আবার গ্রাস করেছে সহমর্মিতা ও সৌহার্দ্যরে সমাজ জীবনকে। পারিবারিক ও সামাজিক বন্ধনগুলো যেন ভেঙ্গে যাচ্ছে। আত্মকেন্দ্রিকতার কাছে হারিয়ে যাচ্ছে সামষ্টিকতা। তৈরি হচ্ছে স্বামীর সঙ্গে স্ত্রীর দূরত্ব, ছেলের কাছ থেকে সরে যাচ্ছে বাবা কিংবা মায়ের সঙ্গে মেয়ের পারস্পরিক ভাব বিনিময় ঘটছে। পাশাপাশি ফ্ল্যাটে থেকেও একে অন্যের পরিচয়টি পর্যন্ত জানার প্রয়োজন অনুভব করছে না। আত্মকেন্দ্রিক এই আচারের ফলে মানুষ যেন ক্রমশ নিঃসঙ্গ হয়ে পড়ছে। আর সামাজিক বন্ধনের এই দূরত্ব নিয়ে মঞ্চে নতুন নাটক নিয়ে এলো মতিঝিল থিয়েটার (মতিঝিল)। নিঃসঙ্গ নিরাময় শীর্ষক প্রযোজনাটি রচনা করেছেন রবিউল আলম। নির্দেশনা দিয়েছেন নাজমুল হাসান শুভ। সোমবার সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার স্টুডিও থিয়েটার হলে নাটকটির উদ্বোধনী মঞ্চায়ন হয়। নাটকটি প্রসঙ্গে নির্দেশক নাজমুল হাসান শুভ জনকণ্ঠকে বলেন, আধুনিক সমাজ মানুষকে দিয়েছে অনেকরকম সুযোগ-সুবিধা। উল্টোপিঠে আবার সৃষ্টি মানুষের মাঝে সৃষ্টি করেছে নিঃসঙ্গতা। পরিবারের পারস্পরিক সম্পর্কগুলো ক্রমশই নড়বড়ে হচ্ছে। ধাবমান আধুনিকতার পেছনে ছুটতে গিয়ে মানুষ হয়ে পড়ছে আত্মকেন্দ্রিক। সেই সূত্রে আধুনিক সমাজের নতুন ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে নিঃসঙ্গতা। মানুষের একা হয়ে পড়ার এই প্রবণতাকে উপজীব্য করে নির্মিত হয়েছে নিঃসঙ্গ নিরাময়। প্রযোজনাটিতে মাহবুব হাসানের চরিত্রে অভিনয় করেছেন নাজমুল হাসান শুভ, নাসরিন গীতি, কানন, শায়লা পারভীন পিয়া ও শারমিন সারা।
×