ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

অনুমোদনের জন্য একনেকে উঠছে আজ

১২৮ কোটি টাকা ব্যয়ে স্বয়ংসম্পূর্ণ পিবিআই গঠনের উদ্যোগ

প্রকাশিত: ০৬:০৬, ৩০ আগস্ট ২০১৬

১২৮ কোটি টাকা ব্যয়ে স্বয়ংসম্পূর্ণ পিবিআই গঠনের উদ্যোগ

আনোয়ার রোজেন ॥ চাঞ্চল্যকর মামলা তদন্তে চার বছর আগে পুলিশের বিশেষ ইউনিট পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) গঠন করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের এফবিআইয়ের (ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন) আদলে পুলিশের এই বিশেষ ইউনিটের কার্যক্রম চলার কথা। তবে যথাযথ প্রশিক্ষণ, অত্যাধুনিক ল্যাব ও সাইবার সুবিধার ঘাটতি এবং ইউনিটের নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থার অপ্রতুলতায় কাক্সিক্ষত সুফল পাওয়া যাচ্ছিল না। তাই নবগঠিত এই তদন্ত সংস্থার সক্ষমতা বাড়ানোর উদ্যোগ নেয় সরকার। এ লক্ষ্যে প্রায় ১২৮ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প প্রস্তাব তৈরি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। আজ মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন দেয়া হতে পারে প্রকল্পটি। অনুমোদন পেলে ২০১৯ সালের জুনের মধ্যে এটি বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ পুলিশ। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে পিবিআইয়ের তদন্ত কার্যক্রম ত্বরান্বিত হবে। তাছাড়া অপরাধ নিয়ন্ত্রণ ও অপরাধীদের শাস্তি বিধানে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ প্রসঙ্গে পিবিআইয়ের এসএসপি (প্রশাসন ও অর্থ) মিয়া মাসুদ করিম জনকণ্ঠকে বলেন, নতুন ইউনিট হিসেবে পিবিআইয়ের প্রশিক্ষণ, ল্যাব ও সাইবার সুবিধা, নতুন নতুন প্রযুক্তি এবং নিজস্ব যানবাহনের প্রয়োজন রয়েছে, যা এই ইউনিটের সক্ষমতা বাড়াবে। মূলত এসব লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সামনে রেখেই প্রকল্পটি নেয়া হয়েছে। জানা গেছে, পুলিশের নতুন এই বিভাগে যোগ দেয়া কর্মকর্তাদের অনেকে ইতোমধ্যে এফবিআই ও মার্কিন পুলিশের বিশেষ শাখা থেকে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। বর্তমানে রাজধানীসহ ৩০টি জেলায় পিবিআইয়ের কার্যক্রম চালু রয়েছে। এ বিষয়ে প্রকল্পটির দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সদস্য আবদুল মান্নান পরিকল্পনা কমিশনের মতামত দিতে গিয়ে বলেন, দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থা হিসেবে বাংলাদেশ পুলিশকে প্রয়োজনীয় জনবল, যানবাহন ও লজিস্টিকস সরবরাহ নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এ প্রকল্পের আওতায় পুলিশের নবগঠিত পিবিআই কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্ম দক্ষতা বৃদ্ধি এবং পিবিআইয়ের দফতরগুলোতে প্রয়োজনীয় লজিস্টিকস সহায়তা প্রদানের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ২০১২ সালের ১৮ অক্টোবর পুলিশের বিশেষ তদন্ত সংস্থা হিসেবে পিবিআই গঠন করা হয়। এটি বর্তমানে বিকাশমান পর্যায়ে রয়েছে। পুলিশের যেসব কর্মকর্তা এখানে যোগদান করেছেন তাদের তদন্ত সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে এসব কর্মকর্তাকে ২০ গুরুত্বপূর্ণ জেলায় তদন্ত প্রধান হিসেবে (জেলা ইউনিট) পাঠানো হয়েছে। প্রকল্পের প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, অপরাধের তদন্ত করা পুলিশের প্রাথমিক দায়িত্ব। বাংলাদেশের বিভিন্ন স্টেশনে কর্মরত পুলিশ কর্মকর্তারা গতানুগতিক কার্যক্রম যেমন আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ, ভিআইপি, কেপিআই স্থাপনা সংশ্লিষ্ট প্রহরা কার্যক্রম এবং অপরাধ তদন্তের কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকেন। ফলে পুলিশের সম্পাদিত তদন্ত কার্যক্রমে জনসাধারণের আশানুরূপ সন্তুষ্টি অর্জন সম্ভব হয় না। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা এবং পরিবর্তিত বিশ্ব পরিস্থিতির কারণে দেশের অপরাধের ধরনের উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন সূচিত হয়েছে। বর্তমানে অপরাধীদের কৌশল পরিবর্তন এবং অত্যাধুনিক প্রযুক্তি, যন্ত্রপাতি আধুনিক অস্ত্র ও বিস্ফোরক দিয়ে অপরাধ ঘটছে। অন্যদিকে সাইবার অপরাধ, আধুুনিক বিস্ফোরক সংক্রান্ত অপরাধ ও মানবপাচার ইত্যাদি অপরাধ ক্রমশ জটিলতর হচ্ছে। এ প্রেক্ষাপটে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের কর্মকর্তাদের সার্বিক দক্ষতা বৃদ্ধি এবং সংস্থাটির জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী ক্রয়ের জন্য এ প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় দশটি ক্রাইম সিন ভ্যান, ৬৪ ডাবল কেবিন পিকআপ, ১১০ মোটরসাইকেল, সাতটি মাইক্রোবাস, নয়টি এসইউভি (জীপ) এবং তদন্ত সহায়ক বিভিন্ন যন্ত্রপাতি, প্রশিক্ষণ সহায়ক যন্ত্রপাতি ও ফার্নিচার কেনা হবে। দেশব্যাপী সংস্থাটির ৭১ অফিস এ প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। প্রকল্প প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে চলমান সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় সুশাসনের ওপর বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে। সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা অপরিহার্য। এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে অপরাধের সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা হবে। তাই এটি সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। প্রসঙ্গত, অপরাধ তদন্তে গঠিত পুলিশের এ ধরনের শাখা প্রতিবেশী দেশ ভারতে সেন্ট্রাল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (সিবিআই) নামে পরিচিত।
×