ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

বিএনপি-জামায়াত ও জঙ্গীদের সন্ত্রাস একই সূত্রে গাঁথা

প্রকাশিত: ০৬:০৫, ৩০ আগস্ট ২০১৬

বিএনপি-জামায়াত ও জঙ্গীদের সন্ত্রাস একই সূত্রে গাঁথা

মোয়াজ্জেমুল হক, চট্টগ্রাম অফিস ॥ ঢাকার গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তরাঁয় সেনা সদস্যদের ‘অপারেশন থান্ডার বোল্ড’, নারায়ণগঞ্জে সোয়াত বাহিনীর ‘অপারেশন হিট স্ট্রং-২৭’ এবং কল্যাণপুরে জঙ্গী আস্তানায় দুর্দান্ত সাহসী অভিযান জঙ্গীপনায় জড়িতদের, বিএনপি-জামায়াতী সন্ত্রাসী নায়কদের জন্য বড় ধরনের একটি মেসেজ হয়ে আবির্ভূত হয়েছে। বিশেষজ্ঞ বিভিন্ন সূত্রে এ অভিমত দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশের মানুষের মাঝে ধর্মপ্রীতি রয়েছে। কিন্তু ধর্মের নামে জঙ্গীপনা, ধর্মান্ধতা, মৌলবাদের পক্ষে সমর্থন নেই বললেই চলে। যারা এসব সন্ত্রাসী কার্যক্রমে জড়িত তাদের সংখ্যা এতই কম যে, সরকারের দূরদর্শিতা ও সফল গোয়েন্দা কার্যক্রমের জের হিসেবে এগোতে পারছে না। জামায়াতী ইসলাম ধর্মের সুরসুরি দিয়ে রাজনীতিতে নেমে যে পথে উত্থান ঘটিয়েছিল- সে পথে এর বিনাশ হতে চলেছে। অনুরূপভাবে জঙ্গীবাদে জড়িতদের অবস্থাও তথৈবচ। সূত্র জানায়, বিএনপির সঙ্গে জোট বেধে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার স্বাদ গ্রহণকারী জামায়াত অস্তিত্ব রক্ষার লড়াইয়ে শক্তিও যেন হারিয়ে ফেলেছে। সাম্প্রতিক সময়ে দেশে আকস্মিকভাবে জঙ্গীবাদে জড়িতরা বিক্ষিপ্তভাবে যে ছোবল মেরেছে তাতে সাধারণসহ মেধাবী কিছু মানুষÑযুবকের প্রাণ হরণ হয়েছে। নৃশংসতায় এদের হত্যা করা হয়েছে। জঙ্গীবাদে জড়িতরা এ প্রক্রিয়া নিয়ে আরও সফলতার স্বপ্ন দেখেছিল। জাল বুনে ছিল বিভিন্ন কর্মসূচী নিয়ে। কিন্তু সে স্বপ্ন গোড়াতেই ধূলিসাৎ হয়ে গেছে সরকারের সাহসী উদ্যোগ, কার্যকর তৎপরতা এবং গোয়েন্দা অপারেশনে। সূত্র জানায়, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা মরহুম প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আমলে জামায়াতের উত্থান ঘটে। আর তার স্ত্রী সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার আমলে জঙ্গীপনার জন্ম নেয়। সঙ্গত কারণে জঙ্গী, বিএনপি ও জামায়াতের সম্পর্ক একই সূত্রে গাঁথা। এদের ফ্রন্ট লাইনে, সুইসাইডাল স্কোয়াডে যারা জড়িত এদের অধিকাংশ জামায়াত-শিবিরের ক্যাডার হিসেবে চিহ্নিত। এদের টার্গেট কিলিংয়ের তালিকায় রাখা হয় প্রগতিমনা বুদ্ধিজীবী, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের পুরোহিত, সেবায়েত, গির্জার যাজক এবং এর পাশাপাশি এদেশে বসবাসরত বিদেশী নাগরিক। নিকট অতীতে এ ধরনের বিচ্ছিন্ন কয়েকটি ঘটনা ঘটিয়ে এরা দেশজুড়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। বিদেশীদের মাঝে উদ্বেগ উৎকণ্ঠা ছড়িয়ে দেয়। বিদেশী প্রচার মাধ্যমগুলো বাংলাদেশের এসব ঘটনাকে ফলাও করে সারা পৃথিবীকে জানিয়ে দেয়। যা দেশের ভাবমূর্তিতে কম বেশি আঘাত হানে। এতে জঙ্গীগোষ্ঠী ও মদদদাতা এবং বিএনপি-জামায়াতী সন্ত্রাসের নীল নক্সা প্রণয়নে জড়িত গডফাদাররা বেশ উৎফুল্ল হয়ে পড়ে। পরিস্থিতি অবনতিবাদ হতে থাকলে সরকার নড়েচড়ে ওঠে। সরকারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো সর্বাত্মক কর্মসূচী নিয়ে জঙ্গীপনা ও বিএনপি-জামায়াতী সন্ত্রাস রুখে দিতে তৎপরতা শুরু করে দেয়। এতে দ্রুত বেশ সফলতা চলে আসে। আগুন, সন্ত্রাস, যানবাহনে আগুন দিয়ে মানুষ মারা, টার্গেট কিলিং এবং সর্বশেষ জঙ্গীবাদে জড়িত সন্ত্রাসীদের অনেকে ইতোমধ্যে গোয়েন্দা জালে ধরা পড়েছে। সূত্র জানায়, গোয়েন্দাদের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে বর্তমান সরকারকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলতে বিএনপির সাহসে বলীয়ান হয়ে জামায়াত সন্ত্রাসী কর্মকা-ের অগ্রভাগে চলে যায়। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও এ ব্যাপারে সরকারী সবুজ সংকেত পেয়ে কঠোর অবস্থানে চলে গেলে বিএনপি-জামায়াত ও জঙ্গীগোষ্ঠীগুলোর জয়েন্ট ভেঞ্চারের সন্ত্রাস বড় ধরনের হোঁচট খায়। এরা এখন প্রাণভয়ে গা ঢাকা দিয়ে রয়েছে। বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসীদের জন্য পরিস্থিতি এমন হয়েছে যে, তারা নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার সঙ্কটে পড়েছে। এ রূপ সঙ্কটাপন্ন অবস্থায় জামায়াতসহ মৌলবাদী, ধর্মান্ধ গোষ্ঠীর সন্ত্রাসীরা এখন রীতিমতো দিশেহারা। এরাই এক সময় ইসলামী বিভিন্ন নামে অপতৎপরতায় নামে। আইএসসহ বিভিন্ন নামে নাম ব্যবহার করে এদের যে লম্ফঝম্ফ চলে তা এখন হাওয়ায় মিশে গেছে। সরকার গোয়েন্দা তৎপরতা চালিয়ে স্বল্পতম সময়ে এদের শেকড় খুঁজে বের করতে সক্ষম হওয়ায় জনমনে স্বস্তি এসেছে। মাস্টারমাইন্ডের চিহ্নিত করাসহ এদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দাতাদের তালিকাও তৈরি হচ্ছে। জঙ্গী মারজানকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের যে ডেপুটি রেজিস্ট্রার নিজ ঘরে অতীতে রেখেছিলেন তাকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সোমবার বদলি করে দিয়েছে। সূত্র জানায়, পুলিশ, র‌্যাব, পিবিআই, সোয়াত, ডিবি, এসবি সদস্যদের সন্ত্রাসীদের আস্তানা, তৎপরতা, অস্ত্র ও গোলাবারুদের মজুদ স্থান, ট্রেনিং ক্যাম্পসহ প্রতিটি অপকর্মের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে রাখা হয়েছে। ফলে এসব সন্ত্রাসী একে একে ধরা পড়ছে। কোথাও কোথাও বন্দুকযুদ্ধে প্রাণ হারাচ্ছে। সূত্র মতে, বিদেশ থেকে অস্ত্র ও অর্থ আসার রুট বন্ধ করা গেলে এদেশের জঙ্গীবাদের অপমৃত্যু ঘটতে খুব বেশি সময় নেবে না। আর যুদ্ধাপরাধী দল জামায়াতকে নিষিদ্ধ বা বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট থেকে বিচ্ছিন্ন করা গেলে স্বাধীনতাবিরোধী এ দলটির অবস্থা হবে যে পথে উত্থান সে পথে বিনাশ। দলটির শীর্ষ পর্যায়ে থেকে যারা মাস্টারমাইন্ড হিসেবে দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করেছে এদের বেশ কজন যুদ্ধাপরাধের দায়ে বিচারের রায়ে ফাঁসিতে ঝুলেছে। যা জামায়াতী ঘরনার লোকজন কখনও চিন্তাও করতে পারে নাই অথচ বাস্তবে তাই ঘটেছে। সূত্র জানায়, জঙ্গীপনায় ও জামায়াত-বিএনপির সন্ত্রাসীদের শেষ রক্ষার সুযোগ হবে না। সরকার এদের এক বিন্দু ছাড় দেবে না বলে ঘোষণা দিয়ে রেখেছে। যার বাস্তবায়ন এখন দৃশ্যমান। এর ফলে এসব ঘরনার সন্ত্রাসীদের অনেকে এখনও নিজেকে গা ঢাকা দিয়ে রেখে বাঁচিয়ে রাখতে সক্ষম হলেও শেষ রক্ষার সুযোগ পাবে না বলে বিশেষজ্ঞদের পক্ষে মত দেয়া হচ্ছে।
×