ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

এ্যাটর্নি জেনারেল রায় নিয়ে উদ্বিগ্ন

আজ মীর কাশেমের মামলার রিভিউয়ের রায়

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ৩০ আগস্ট ২০১৬

আজ মীর কাশেমের মামলার রিভিউয়ের রায়

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধকালে মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদ-প্রাপ্ত বদর বাহিনীর কমান্ডার, চট্টগ্রামের বাঙালী খান, জামায়াতে ইসলামীর নির্বাহী পরিষদের সদস্য মীর কাশেম আলীর মৃত্যুদ-ের চূড়ান্ত রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) রায় ঘোষণা করা হবে আজ। সোমবার বিকেলে সুপ্রীমকোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা মঙ্গলবারের তালিকায় এক নম্বরে রয়েছে এটি। মঙ্গলবার সকালে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের আপীল বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করবেন। বেঞ্চের অপর সদস্যরা হলেন- বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, বিচারপতি মির্জা হোসাইন হায়দার ও বিচারপতি বজলুর রহমান। এদিকে মীর কাশেম আলীর আজকের রিভিউ রায়ে এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম খুবই উদ্বেগের মধ্যে রয়েছেন। সোমবার বিকেলে সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদের আলোচনা সভায় এ্যার্টনি জেনারেল বলেন, মীর কাশেম আলীর রিভিউ আবেদনের রায় নিয়ে তিনি খুবই উদ্বিগ্ন আছেন এবং ফাঁসির রায় বহাল থাকলে খুবই আনন্দিত হবেন । মীর কাশেম আলীর মামলাটি ১ নম্বরে আছে। ফাঁসির রায় বহাল থাকলে আমরা সবাই আনন্দিত হব, খুশি হব’। আইনজীবীদের উদ্দেশে এ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘গত পরশু সবাই যেভাবে উপস্থিত হয়েছেন, আজও উপস্থিত থাকবেন। মীর কাশেম আলীর বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করবেন। আপনাদের উপস্থিতিই হচ্ছে একটি প্রতিবাদ’। মীর কাশেম আলীর মামলায় এর আগে আপীল বিভাগ থেকে ট্রাইব্যুনালের মৃত্যুদ- বহাল রেখে দেয়া রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে মীর কাশেমের করা আবেদনের ওপর ২৮ আগস্ট রবিবার রাষ্ট্র ও আসামি উভয়পক্ষের শুনানি শেষ করা হয়। শুনানি শেষে ৩০ আগস্ট রিভিউয়ের রায়ের দিন ঠিক করেন আপীল বিভাগ। আসামিপক্ষে রিভিউ শুনানিতে অংশ নেন মীর কাশেমের আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন। খন্দকার মাহবুব হোসেন শুনানিতে মীর কাশেমের ফাঁসির দ- পুনর্বিবেচনা চান। অপরদিকে রাষ্ট্রপক্ষের শুনানিতে অংশ নিয়ে এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম মৃত্যুদ- বহাল রাখার আর্জি জানান। মীর কাশেম আলীর মামলাটি গত ২৫ জুলাই রিভিউ শুনানির জন্য ছিল। ওই দিন মীর কাশেম আলীর আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন দুই মাস সময় আবেদন করেন। পরে আদালত এক মাস সময় মঞ্জুর করে ২৪ আগস্ট শুনানির দিন নির্ধারণ করেন। ২৪ আগস্ট নির্ধারিত দিনে আবারও সময় চান আসামির আইনজীবী। সময় আবেদন খারিজ করে শুনানির নির্দেশ দেন আদালত। নির্দেশ অনুযায়ী ওই দিন রিভিউ শুনানি শুরু করে ২৮ আগস্ট পর্যন্ত মুলতবি করেন। ২৮ আগস্ট উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত ৩০ আগস্ট রায় ঘোষণার দিন ধার্য করেন। উল্লেখ্য মীর কাশেম আলীর মামলার তদন্ত শুরু হয় ২০১০ সালের ২৬ জুলাই। তাকে গ্রেফতার করা হয় ২০১২ সালের ১৭ জুন। ২০১৩ সালের ৫ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণসহ ১৪টি অভিযোগ গঠন করে আনুষ্ঠানিকভাবে বিচার শুরু করে। ২০১৪ সালের ২ নবেম্বর ১৪টি অভিযোগের মধ্যে ১০টি প্রমাণিত হয়। ট্রাইব্যুনাল তাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদ- প্রদান করেন। ২০১৫ সালের ৩০ নবেম্বর ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে মীর কাশেম আলী আপীল দায়ের করেন। ২০১৬ সালের ৮ মার্চ আপীল বিভাগ ট্রাইব্যুনালের দেয়া মৃত্যুদ- বহাল রেখে রায় ঘোষণা করেন। মৃত্যুদ- বহাল রেখে আপীলের পূর্ণাঙ্গ রায় ৬ জুন প্রকাশের পর তা পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে ১৯ জুন আবেদন করেন মীর কাশেম। রিভিউ আবেদন শুনানির দিন ধার্যের জন্য আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। এ ধারাবাহিকতায় ২১ জুন চেম্বার বিচারপতি বিষয়টি ২৫ জুলাই নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠান এবং মামলাটি সোমবারের দৈনন্দিন কার্যতালিকায় ৬৩ নম্বর ক্রমিকে আসে। তবে শুনানির জন্য আরও সময়ের আবেদন করা হবে জানিয়ে মীর কাশেমের ছেলে মীর আহমেদ বিন কাশেম বলেছিলেন, ‘প্রস্তুতির জন্য দুই মাস সময়ের আবেদন করা হয়েছে। আপীল বিভাগের রায়ে এসেছে, এই মামলায় অভিযোগ গঠনের আদেশ ত্রুটিপূর্ণ।’ আদালত শুনানি পিছিয়ে দেয়ার পর আসামিপক্ষের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, প্রস্তুতির জন্য আমরা দুই মাস সময় চেয়েছিলাম। আদালত এক মাস দিয়েছে। ২৪ অগাস্ট শুনানির তারিখ দিয়েছে। রিভিউয়ের দিন ধার্য করতে ২১ জুন সকালে আপীল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা আবেদন করেন। রিভিউ আবেদনের দ্রুত শুনানির আর্জি জানানো হয়। ১৯ জুন মীর কাশেম আলীর মৃত্যুদ- থেকে খালাস চেয়ে ১৪টি যুক্তি দেখিয়ে ৮৬ পৃষ্ঠার রিভিউ আবেদন দাখিল করেন তার ছেলে আইনজীবী মীর আহমেদ বিন কাশেম। এর আগে গত ৬ জুন মীর কাশেমের ২৪৪ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় সুপ্রীমকোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ পায়। ‘রিভিউ নিষ্পত্তি এবং রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনা’ নিয়ম অনুযায়ী এই দুটি আইনী প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর তার দ- কার্যকর করার উদ্যোগ নেবে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। আইন অনুযায়ী রায় প্রকাশের ১৫ দিনের মধ্যে আপীলের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদন করার কথা মীর কাশেম আলীর। সে হিসেবে নির্ধারিত সময়ের একদিন আগেই ১৯ জুন তারা রিভিউ (পুনর্বিবেচনা) আবেদন করেছেন। ৬ জুন দুপুরে রায় প্রকাশের পর সুপ্রীমকোর্ট থেকে রায়ের অনুলিপি বিচারিক আদালতে (ট্রাইব্যুনালে) পাঠানো হয়। পরে ওই দিন সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ট্রাইব্যুনাল থেকে মীর কাশেম আলীর মৃত্যু পরোয়ানা জারি করেন বিচারকরা। লাল কাপড়ে মুড়িয়ে পরোয়ানাটি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারা কর্তৃপক্ষ, আইন মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও ডিসি অফিস তথা জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে পাঠানো হয়। এর পরের দিন ৭ জুন সকালে কাশেমপুর কারাগার পার্ট-২ এ মীর কাশেম আলীকে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ এবং মৃত্যু পরোয়ানা জারির বিষয়ে জানানো হয়। ট্রাইব্যুনালের দেয়া মৃত্যুদ- বহাল রেখে গত ৮ মার্চ মীর কাশেম আলীর আপীল খারিজ করে দেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের আপীল বিভাগের বেঞ্চ। এর আগে ২০১৪ সালের ২ নবেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ে দুই অভিযোগে মীর কাশেমের মৃত্যুদ- এবং আট অভিযোগে সব মিলিয়ে ৭২ বছরের কারাদ- হয়েছিল। মীর কাশেম আলী ষষ্ঠ ব্যক্তি যিনি মানবতাবিরোধী অপরাধে আপীলেও চূড়ান্ত ভাবে মৃত্যুদ- পেয়েছেন। এর আগে জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহম্মদ কামারুজ্জামান ও আবদুল কাদের মোল্লা এবং বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর একই ধরনের অপরাধে মৃত্যুদ- কার্যকর করা হয়েছে।
×