ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

শহীদ কাদরীর মরদেহ আসছে কাল

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ৩০ আগস্ট ২০১৬

শহীদ কাদরীর মরদেহ আসছে কাল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ অবশেষে দীর্ঘ পরবাসী জীবন শেষে স্বদেশে ফিরছেন কবি শহীদ কাদরী। তবে জীবিত নয় আসছে তার প্রাণহীন নিথর দেহটি। বুধবার ঢাকায় এসে পৌঁছাবে একুশে পদকপ্রাপ্ত আধুনিক বাংলা কবিতার অন্যতম এই কবির মরদেহ। কবির শবদেহ ঢাকায় পৌঁছার পর বেলা ১১টা নেয়া হবে বাংলা একাডেমিতে। পরে সর্ব সাধারণের শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদনের জন্য বেলা সাড়ে ১১টা থেকে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত রাখা হবে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে দ্বিতীয় দফা জানাজা শেষে তাকে সমাহিত করা হবে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে। এদিকে কবি শহীদ কাদরীর প্রথম জানাজা নিউইয়র্কে জামাইকা মুসলিম সেন্টারে অনুষ্ঠিত হয়েছে। স্থানীয় সময় রবিবার মাগরিবের নামাজের পর এ জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। কবির জানাজায় অংশ নেন প্রবাসের সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক কর্মী ছাড়াও সর্বস্তরের মানুষ। প্রিয় কবিকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে জামাইকা মুসলিম সেন্টারে ছুটে আসেন শত শত অনুরাগী। জানাজার পূর্বে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশ মিশনের স্থায়ী প্রতিনিধি মাসুদ বিন মোমেন, কনসাল জেনারেল শামীম আহসান, এনডিসি, প্রবাসী সাংবাদিক ও লেখক হাসান ফেরদৌস এবং কবির একমাত্র ছেলে আদনান কাদরী। জাতীয় কবিতা পরিষদের সভাপতি কবি মুহাম্মদ সামাদ জনকণ্ঠকে জানান, শহীদ কাদরীর মরদেহ যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় রাত ১১টায় এমিরেটস এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে ঢাকার দেশের উদ্দেশে রওনা হবে। কবির মরদেহের সঙ্গে দেশে আসবেন কবিপতœী নীরা কাদরী ও একমাত্র ছেলে আদনান কাদরী। মুহাম্মদ সামাদ বলেন, বুধবার সকাল ৮টা ৪০ মিনিটে কবির শবদেহবাহী এমিরাটসের ফ্লাইট ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামবে। পরিবারের প্রত্যাশা অনুযায়ী শহীদ কাদরীকে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে সমাহিত করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এছাড়া শহীদ কাদরীর শবদেহ এবং তার পরিবারের নিউইয়র্ক থেকে ঢাকা আসা-যাওয়ার যাবতীয় খরচ বহন করবেন প্রধানমন্ত্রী। সর্ব সাধারণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য শহীদ কাদরীর মরদেহ রাখা হবে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। এ প্রসঙ্গে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ বলেন, বুধবার বেলা সাড়ে ১১টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা এই শ্রদ্ধা নিবেদন করা হবে। শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদে অনুষ্ঠিত হবে দ্বিতীয় দফা জানাজা। এরপর কবিকে সমাহিত করা হবে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে। এদিকে বাংলাভাষার অন্যতম কবি শহীদ কাদরীর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ। চিকিৎসার জন্য যুক্তরাজ্য অবস্থান করা আবদুল হামিদ এক শোকবাণীতে একুশে পদকপ্রাপ্ত কবির রুহের মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানান। এছাড়া বাংলাভাষার অন্যতম কবি শহীদ কাদরী এবং বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার বাদী আ ফ ম মুহিতুল ইসলামের মৃত্যুতে শোক প্রস্তাব গ্রহণ করেছে মন্ত্রিসভা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সোমবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে সর্বসম্মতিক্রমে এ শোক প্রস্তাব গৃহীত হয় বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম। সমকালীন বাংলা ভাষার অন্যতম প্রধান কবি এবং বাংলা একাডেমির সম্মানিত ফেলো শহীদ কাদরীর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছে বাংলা একাডেমি। ওই শোকবার্তায় বলা হয়, আধুনিক বাংলা কবিতায় কাদরী যে স্বতন্ত্র ও সম্ভ্রান্ত রুচির পরিচয় দিয়েছেন তা বিস্ময়কর। অতি অল্প বয়সেই বুদ্ধদেব বসুর কবিতা পত্রিকায় আত্মপ্রকাশের পর মাত্র চার কবিতাগ্রন্থের মধ্য দিয়ে বাংলা কবিতার ইতিহাসে তিনি তার আসন স্থায়ী করে নেন। আধুনিক মানুষের জীবনের নিঃসঙ্গ চেতনা, অনিকেতবোধ ইত্যাদি তিনি সর্ব সাম্প্রতিক শিল্পরীতিতে কবিতাকলার বিষয় করে নিয়েছেন। দীর্ঘ প্রবাস জীবনের শেষদিকের কবিতায় বার বার উচ্চারিত হয়েছে প্রিয় স্বদেশের জন্য তার আকুল হাহাকার। ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিয়োগান্ত হত্যাকা-ের অভিঘাতে রচিত তার হন্তারকদের প্রতি কবিতাটি যুগ যুগ ধরে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। উচ্চ রক্তচাপ, কিডনির সমস্যা ও জ্বরসহ বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগে রবিবার নিউইয়র্ক স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে সাতটার দিকে নিউইয়র্কের নর্থ শোর হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় কবি শহীদ কাদরী মারা যান। কবির ইচ্ছা অনুযায়ী তাকে বাংলাদেশেই দাফন করা হবে। মৃত্যুর সময় তার বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর। সাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য তিনি বাংলা একাডেমি ও একুশে পদকে ভূষিত হন।
×