ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

পদ্মার পানি কমলেও রাজশাহীতে বন্যার্তদের দুর্দশা বেড়েছে

প্রকাশিত: ০৪:৩১, ৩০ আগস্ট ২০১৬

পদ্মার পানি কমলেও রাজশাহীতে বন্যার্তদের দুর্দশা বেড়েছে

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী ॥ বিপদসীমার মাত্র ৪ সেন্টিমিটার নিচে থাকতেই অবশেষে পানি কমতে শুরু করেছে রাজশাহীর পদ্মায়। রাজশাহী পয়েন্টে প্রতি ছয় ঘণ্টায় ১ সেন্টিমিটার করে পানি কমছে। সোমবার দুপুর ১২টায় পদ্মার পানি ১৮ দশমিক ৪৪ মিটার উচ্চতায় প্রবাহিত হয়েছে। যা বিপদসীমার ৬ সেন্টিমিটার নিচে রয়েছে। তবে জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। পানিবন্দী হয়ে আছে গোদাগাড়ী ও বাঘার চরাঞ্চলের মানুষ। রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মুখলেছুর রহমান বলেন, রবিবার সন্ধ্যা ৬টায় পদ্মার পানি ১৮ দশমিক ৪৬ মিটার উচ্চতায় প্রবাহিত হয়। সোমবার সকাল ৯টায় তা কমে ১৮ দশমিক ৪৫ মিটারে এবং দুপুর ১২টা তা আরও কমে ১৮ দশমিক ৪৪ মিটারে নেমে আসে। সে হিসেবে প্রতি ছয় ঘণ্টায় ১ সেন্টিমিটার পানি কমছে বলে জানান তিনি। প্রকৌশলী মুখলেছুর রহমান আরও জানান, মহানগরীর বুলনপুর এলাকায় পানির স্রোতে ক্ষতিগ্রস্ত শহর রক্ষা টি-বাঁধ দ্বিতীয় দিনের মতো মেরামতের কাজ করা হয়েছে। দু’দিনে প্রায় আড়ই শ’ জিও ব্যাগ ফেলে সেখানকার ভাঙ্গন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। এছাড়াও শহর রক্ষা বাঁধের দুর্বল ও ক্ষতিগ্রস্ত পয়েন্টগুলোতেও জিও এবং বালির বস্তা ফেলে মেরামতের কাজ অব্যাহত রয়েছে। এখন আর আশঙ্কার কিছু নেই বলে জানান পানি উন্নয়ন বোর্ডের এই কর্মকর্তা। ফারাক্কার সব কপাট খুলে দেয়ায় গত এক সপ্তাহ ধরে পদ্মায় পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় জেলার গোদাগাড়ী, পবা ও বাঘার চরাঞ্চলে দেখা দিয়েছে বন্যা। সোমবার থেকে পদ্মায় পানি কমতে শুরু করলেও এসব এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। গোদাগাড়ীর অন্তত ২০টি গ্রামে পানি ঢুকে পড়েছে। পানিবন্দী অবস্থায় এসব গ্রামের মানুষ দুর্বিষহ জীবন পার করছেন। এসব গ্রামে দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ খাবার পানির তীব্র সংকট। প্লাবিত হয়েছে উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের ২০টি গ্রাম। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে প্রায় ৩০ হাজার মানুষ। উপজেলার চরাঞ্চলের চর বয়ারমারি নিচুপাড়া, হঠাৎপাড়া, আমিনপাড়া, ঢ্যাংগাপাড়া, আমতলা খাস মহল, ডাকরিপাড়া, চর নওশেরা, হুমন্তনগর, উত্তর কানাপাড়া, ঢাবের মাঠ, বারিনগন, মানিকচক, দেওপাড়া ইউনিয়নের নিমতলা, খারিজাগাতি, চকপাড়া, বাসেবদেপুর ইউনিয়নের কাশিমপুর ও হাতনাবাদের অধিকাংশ বন্যাকবলিত মানুষ বাড়িঘড় ছেড়ে আশ্রয় নিয়েছেন বিভিন্ন স্থানে। উপজেলার চর বয়ারমারি গ্রামের এরফান আলী বলেন, বন্যাকবলিত এলাকায় বিশুদ্ধ পানি, জ্বালানি ও গো-খাদ্যের চরম সংকট দেখা দিয়েছে। চর আষাডিয়াদহ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম জানান, চর আষডিয়াদহ ইউনিয়নের একটি গ্রামের সঙ্গে আরেকটি গ্রামের যোগাযোগ বিছিন্ন হয়ে পড়ায় শিক্ষার্থীরা স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। কুষ্টিয়া এমএ রকিব/সাইদুল আনাম কুষ্টিয়া থেকে জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় পদ্মার পানি নতুন করে আর বৃদ্ধি না পেলেও ফারাক্কা বাঁধের ১০৮টি গেটের মধ্যে ১০৪টি গেটই খুলে দেয়ার কারণে সৃষ্ট আকস্মিক বন্যায় জেলার পদ্মা উপকূলীয় দৌলতপুর ও ভেড়ামারা উপজেলার বন্যা দুর্গত মানুষ গত তিনদিন ধরে চরম দুর্ভোগের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। ভেড়ামারা উপজেলার গোলাপনগর-রায়টা ও দৌলতপুর উপজেলার রায়টা-মহিষকু-ি বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ এখনও হুমকির মুখে। দুর্গত এলাকায় মানুষের মধ্যে বিতরণের জন্য ত্রাণসামগ্রীও অপ্রতুল। এদিকে সোমবার সকালে ভেড়ামারা হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পদ্মার পানি গত ১২ ঘণ্টায় ২ সেন্টিমিটার কমে তা বিপদসীমার আরও নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নৈয়মুল হক জানান, ফারাক্কার বাঁধ খুলে দেয়ায় যেভাবে পদ্মার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত ছিল তা সত্যিই আতঙ্কের। তবে বর্তমানে পানির প্রবাহ কমতে শুরু করেছে। রবিবার সন্ধ্যা ৬টায় হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পানির প্রবাহ ছিল ১৪ দশমিক ১৩ মিটার। সোমবার সকাল ৬টায় পানি কমে দাঁড়ায় ১৪ দশমিক ১১ মিটারে। অর্থাৎ ১২ ঘণ্টায় পানি কমেছে ২ সেন্টিমিটার। এদিকে আকস্মিক বন্যায় গত তিনদিন ধরে দৌলতপুর উপজেলার রামকৃষ্ণপুর ও চিলমারী ইউনিয়নের ৩৪টি গ্রামের ১১ হাজার পরিবারের অর্ধলাখ মানুষ এখন পানিবন্দী। বন্ধ রয়েছে এসব এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সব ধরনের ব্যবসা-বাণিজ্য। দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ খাবার পানি ও পশু খাদ্যের সংকট। হতদরিদ্র মানুষ পড়েছে চরম বিপাকে। তবে শনিবার থেকে পদ্মায় পানি বৃদ্ধির গতি কিছুটা হ্রাস পাওয়ায় স্বস্তি ফিরে আসতে শুরু করলেও আতঙ্ক এখনও কাটেনি নদী তীরবর্তী মানুষের। ওই দুই ইউনিয়নের তলিয়ে গেছে অন্তত ১৮শ’ হেক্টর জমির ফসল। নাটোর নিজস্ব সংবাদদাতা নাটোর থেকে জানান, ফারাক্কা বাঁধের সব গেট খুলে দেয়ায় পদ্মার পানি বেড়ে নাটোরের লালপুরের ১০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পদ্মার পানি অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধির ফলে পানিবন্দী হয়েছে চরাঞ্চলের হাজার হাজার মানুষ। ডুবে গেছে চরাঞ্চলের হাজার হাজার একর ফসলী জমি। ধান, পাট, হলুদ, কলা, পেঁপেসহ বিভিন্ন ফসল পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এদিকে হঠাৎ বন্যায় প্লাবিত এলাকায় খাবার পানি সংকট এখনও দেখা না দিলেও ক্রমাগত পদ্মার পানি বাড়ার কারণে চরের বাসিন্দাদের মাঝে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। সোমবার বন্যায় দুর্গত মানুষের মধ্যে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করেছে উপজেলা প্রশাসন। সরেজমন দেখা যায়, হঠাৎ পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় লালপুর ইউনিয়নের চরজাজিরা, দিয়াড় বাহাদুরপুর বাঙ্গালপাড়া, বন্দোবস্ত গোবিন্দপুর, রামকৃষ্ণপুর, দক্ষিণ লালপুর, বিলমাড়িয়া ইউনিয়নের নওশারা সুলতানপুর, দিয়াড় শংকরপুর, আরাজি বাকনা, চাকলা বিনোদপুর, ও মোহরকয়া গ্রাম বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দী হয়েছে চরাঞ্চলের হাজার হাজার মানুষ। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে। কোথাও কোথাও গবাদি পশুর মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। ২নং ঈশ্বরদী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম জয় বলেন, আমার ইউনিয়নের ৬টি ওয়ার্ড পদ্মার তীরে হওয়ায় ২০ হাজার মানুষ বন্যার পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কায় আতঙ্কিত জীবন যাপন করছে। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উত্তরাঞ্চলের পানি পরিমাপ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী কে.এম.জহুরুল ইসলাম বলেন, পাকশী হাডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে প্রায় বিপদসীমার পাশ দিয়ে পানি প্রবাহ হচ্ছে। পানি বৃদ্ধির হার এরকম থাকলে হয়ত মঙ্গলবার নাগাদ বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে।
×