ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

ভাইরাস আতঙ্কে যশোরের মাছ চাষীরা

প্রকাশিত: ০৪:৩০, ৩০ আগস্ট ২০১৬

ভাইরাস আতঙ্কে যশোরের মাছ চাষীরা

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস ॥ অবিরাম বর্ষণে চাষের পুকুরে বাইরের ময়লা পানি ঢুকে পড়ায় সংক্রামণ আতঙ্কে রয়েছেন জেলার মাছচাষীরা। এমনিতেই ভেসে গেছে মা মাছসহ চাষের শত শত পুকুর। তার ওপর এই আতঙ্ক নতুন করে তৈরি করেছে হতাশা। প্রাথমিকভাবে দেয়া ওষুধে তেমন ফল পাচ্ছেন না। ভাইরাস ও ব্যাক্টেরিয়ার মড়ক ঠেকাতে ব্যস্ত সময় কাটছে তাদের। এদিকে ঋণের বোঝা সামলাতে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন অধিকাংশ হ্যাচারি মালিকগণ। যশোর মৎস্য হ্যাচারি মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক ওয়াহিদ সিকেন্দার লুলু জানিয়েছেন, চাঁচড়া অঞ্চল ও তার আশপাশের এলাকা কেন্দ্রিক সরকারী তালিকাভুক্ত ১০টি বড় মৎস্য নার্সারি ও হ্যাচারির পুকুরগুলোর অবস্থা প্রায় একই। যে কোন সময়ে মড়ক লেগে অবশিষ্ট পুকুরের মাছগুলো মারা যেতে পারে। মূল ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনও জানা যায়নি। তবে ভেসে যাওয়া মাছ, পুকরের পাড় সংস্কার ও পানি বদল করে পুকুরকে পুনরায় মাছ চাষের উপযোগী করা, বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবেলায় এন্টিবায়োটিক ও অন্যান্য ওষুধ প্রয়োগ মিলিয়ে যশোর শহরে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আনুমানিক দেড়-দুই কোটিতে ঠেকতে পারে। পূর্বাভাস ছাড়াই হঠাৎ ভারি বর্ষণে শহরের শত শত পুকুর ভেসে গেছে। মা ও চারা মাছ ভেসে যাওয়ায় দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতির মধ্যে পড়েছেন মাছচাষীরা। যে পুকুরে নেট দিয়ে প্রতিরোধ করা ছিল, তাতে ঢুকে পড়েছে বাইরের পানি। ফলে চাষের সাদা মাছ, বিশেষ করে কৈ ও পাঙ্গাসে সংক্রামণের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে কিছু কিছু পুকুরের পানিতে গন্ধযুক্ত গ্যাস ছড়িয়ে পড়েছে, যা মাছের জন্য চরম ক্ষতি বয়ে আনতে পারে বলে জানান মাছচাষীরা। ‘দুই দফা বৃষ্টির প্রথম অবস্থায় ক্ষতি কম ছিল। কোন মতে সামলে নিয়েছিলেন হ্যাচারি মালিকেরা। দ্বিতীয় দফায় শেষ করে দিয়েছে সব। ফলে হুমকির মুখে পড়েছে অবশিষ্ট চাষের পুকুর। যে পরিমাণে সংক্রামণ ছড়িয়েছে তা থেকে মাছকে রক্ষা করা মুশকিল হয়ে পড়েছে। ওষুধের জন্য হাজার হাজার টাকা খরচ হলেও কাজ হচ্ছে না জানালেন মৎস্যপল্লী চাঁচড়া এলাকার ‘সমুদ্র মৎস্য খামার’র স্বত্বাধিকারী আব্দুস সামাদ টগর। এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চাঁচড়া, নাজিরশংকরপুর মৎস্য খামারের শতকরা ৮০ ভাগই ব্যাংকের কাছে ঋণে দায়বদ্ধ। যার পুরোটাই এই মৌসুমে কাজে লাগানো হয়েছে। কিন্তু মৌসুমের শেষ সময়ে এমন ঘটনা পথে বসাতে চলেছে প্রায়। মাছচাষীরা জানান, তাদের অর্থনীতিতে বড় একটা ধাক্কা অপেক্ষা করছে। মমতা মৎস্য খামারের স্বত্বাধিকারী ওবায়দুল হক বলেন, যশোরের উৎপাদিত পোনার ৬০ ভাগ চলে যায় দেশের আনাচে কানাচে। বিশেষ মৌখিক চুক্তিতে বাৎসরিক দুই কিস্তি হিসাবে সারাদেশে মাছ সরবরাহ করা হয়। সাধারণত ঈদের আগে ভাগে তারা বকেয়া টাকা ফেরত দিয়ে থাকেন। কিন্তু দেশের সব অঞ্চলে মাছ চাষের পুকুর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এমন দুর্যোগপূর্ণ পরিবেশে বকেয়া টাকা মাঠে পড়ে থাকবে। ফলে আগামীতে অবস্থা কী দাঁড়াবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন এলাকার অধিকাংশ মাছচাষীরা। দুঃখ ও কষ্ট তো আছেই, সঙ্গে উদ্বিগ্ন সংশ্লিষ্ট সবাই।
×