ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ঈদ সামনে রেখে দাম বেশি

কামারশালা ব্যস্ত

প্রকাশিত: ০৪:২৯, ৩০ আগস্ট ২০১৬

কামারশালা ব্যস্ত

আবু জাফর সাবু, গাইবান্ধা ॥ ক্ষুদ্র লৌহজাত শিল্পের ওপর নির্ভরশীল গাইবান্ধার গ্রামগঞ্জের পেশাদার কামারদের কামারশালাগুলো এখন লোহার নানা জিনিস তৈরির টুংটাং শব্দে মুখর হয়ে উঠেছে। কামাররাও তাদের ব্যবসার ব্যস্ত সময় পার করছে। কেননা সামনেই ঈদ-উল-আযহা। কোরবানির জন্য দা, বিভিন্ন সাইজের চাকু, ছোরা ও বটির এখন ভীষণ চাহিদা। ফলে রাত-দিন কাজ চলছে এখন কামারশালাগুলোতে। গাইবান্ধার হাট-বাজারগুলোতেও কোরবানির সরঞ্জাম বিক্রির নতুন নতুন দোকান বসেছে। এমনকি শহরের রাস্তার ধারেও বসেছে দোকান। ক্রেতারাও প্রয়োজনমতো দেখে-শুনে কিনছে তাদের কোরবানির সরঞ্জাম। এদিকে ঈদে দা, বটি, ছোরা, চাকুর চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় তৈরির সরঞ্জাম কাঁচা লোহার দামও বাড়িয়ে দিয়েছে ব্যবসায়ীরা। ফলে বগুড়া, রংপুর থেকে স্থানীয় কামারদের বেশি দামে কিনতে হচ্ছে কাঁচা লোহা। এতে এসব সরঞ্জাম তৈরির উৎপাদন ব্যয়ও অনেক বেড়ে গেছে। এজন্য সঙ্গতকারণেই ক্রেতারা বেশি দামে কিনতে বাধ্য হচ্ছে কোরবানি ঈদের অতি প্রয়োজনীয় এসব সরঞ্জাম। জেলা শহরের কাছারিবাজার রাস্তার ধারে দোকান দিয়ে কোরবানির এসব সরঞ্জাম বিক্রি করছেন মমিনুল ইসলাম। তিনি জানান, এখন অল্প স্বল্প বেচাকেনা শুরু হলেও ঈদের তিন দিন আগে থেকেই বিক্রি আরও কয়েক গুণ বেড়ে যাবে। সাধারণত বিভিন্ন এলাকার কামাররা তার দোকানে এসেই এসব সরঞ্জাম বিক্রি করে যায়। প্রয়োজনে তিনি নিজেও কামারশালায় গিয়ে সংগ্রহ করে নিয়ে আসেন। এদিকে ঈদ উপলক্ষে মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় কোরবানির একটি ছোরা ৩৫০ থেকে ৪শ’, বিভিন্ন সাইজের চাকু ৩০ থেকে ১শ’ টাকা, বটি ১শ’ থেকে ৩৫০ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে। তবে দাম আরও বাড়বে বলে তিনি জানান। আজিজুর রহমান ডল, জামালপুর থেকে জানান, কোরবানি উপলক্ষে কামারপট্টি গরমলোহা পেটানোর শব্দে মুখরিত। হাটে-বাজারে বা বাড়ির পার্শ্বে, রাস্তার ধারে বসবাসকারী লোকজনের ঘুম ভাঙ্গছে কামারদের লোহা পেটানোর শব্দে। কামারদের তৈরি ধারালো ছুরি, চাকু ইত্যাদি কিনতে লোকজন ছুটছেন কামারদের দোকানে। তবে কামারদের তৈরি এসব পণ্যের দাম এখন আগের চেয়ে বেশি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলার নান্দিনা, লাহিড়ীকান্দা, গোপালপুর, নরুন্দি, পিয়ারপুর, দেবেরবাজার, ভারুয়াখালী, শরিফপুর, তুলসীপুর, ছোনটিয়া, দিগপাইত বাজারসহ জেলার সাত উপজেলায় রয়েছে কামারপট্টি। প্রসঙ্গক্রমে কথা হয় নান্দিনা পশ্চিম বাজারের কামারপট্টির কামারশিল্পী সুশীল কর্মকারের সঙ্গে। তিনি জানান, সরকারীভাবে সহজ শর্তে আর্থিক সহযোগিতা না থাকায় লোহা, ইস্পাত ও কয়লার মূল্য বৃদ্ধিসহ প্রয়োজনীয় উপকরণের অভাবে এ শিল্প দিন দিন পঙ্গু হয়ে পড়ছে। হাট-বাজারে সরঞ্জামের চাহিদা থাকলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই উৎপাদন খরচ উঠছে না। তাছাড়া এসব দ্রব্য তৈরির জন্য প্রচুর পুঁজির দরকার, যা তাদের নেই। বাড়তি পুঁজির যোগান দিতে গিয়ে গ্রাম্য মহাজন ও ফঁড়িয়াদের কাছ থেকে চড়া সুদে টাকা নিয়ে কোন কোন সময় ব্যবসায় তাদের লোকসান দিতে হচ্ছে। কামররা বলেন, বছরে একবার অর্থাৎ কোরবানি ঈদে আমাদের দা, ছুরি, চাকু বিক্রি হলে তো আমাদের সারাবছরের সংসার চলে না। আমরা চাই কোরবানির ঈদের মতো সারাবছর আমাদের তৈরি পণ্য তৈরি ও বিক্রি করতে।
×