ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

দাম দ্বিগুণ বেড়ে গেছে

বিলম্বিত সিদ্ধান্তে চামড়া শিল্পে লবণ সঙ্কট

প্রকাশিত: ০৪:২৬, ৩০ আগস্ট ২০১৬

বিলম্বিত সিদ্ধান্তে চামড়া শিল্পে লবণ সঙ্কট

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ কোরবানির ঈদে পশুর চামড়া প্রক্রিয়াকরণের জন্য ব্যবহৃত লবণের বাড়তি চাহিদা থাকে। তাই বাড়তি চাহিদার জন্য এই লবণ আমদানি করে সরকার। কিন্তু গত বছরের মতো এবারও পশুর চামড়া সংরক্ষণের অপরিহার্য উপাদান লবণ আমদানির সিদ্ধান্ত সময়মতো নেয়া হয়নি। দেরি করে সিদ্ধান্ত নেয়া এবং অর্ডার করায় চাহিদার তুলনায় বর্তমানে বাজারে লবণের সরবরাহ কম। তাই প্রায় প্রতিদিনই বাড়ছে চামড়া প্রক্রিয়াকরণে ব্যবহৃত লবণের দাম। এতে কোরবানির সময় ও পরে লবণের দাম স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েকগুণ বাড়তে পারে বলেও আশঙ্কা ব্যবসায়ীদের। কারণ দেশের চামড়াশিল্পের প্রায় অর্ধেক কাঁচা চামড়া সংগ্রহ করা হয় কোরবানির মৌসুমে। আর কোরবানির ঈদের কয়েক দিনে বেড়ে যায় চামড়া সংরক্ষণে ব্যবহৃত লবণের চাহিদাও। কোরবানির পর পশুর চামড়া সংরক্ষণে প্রাথমিক ধাপ লবণ মাখানো। চামড়া ব্যবসায়ীরা বলছেন, এ খাতে সারাবছর প্রায় ৬০ হাজার টন লবণ দরকার হয়। এর মধ্যে প্রায় ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টন ব্যবহার হয় কোরবানির মৌসুমে। এ সুযোগে লবণের দাম বাড়িয়ে দেয় একশ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী। সূত্র জানায়, চামড়া প্রক্রিয়াকরণে ব্যবহৃত লবণের দাম বেড়ে দ্বিগুণ হওয়ায় সরকার চলতি বছর দেড় লাখ টন লবণ আমদানির অনুমতি দিয়েছে। কিন্তু এখনও এর প্রক্রিয়া শুরু হয়নি। এজন্য সিন্ডিকেটকেই দায়ী করেছেন ব্যবসায়ীরা। কোরবানির আগ মুহূর্তে এমন সঙ্কটের কারণে বিপদে পড়েছেন ট্যানারি মালিকরা। তাদের আশঙ্কা, সংরক্ষণের অভাবে এ বছর নষ্ট হতে পারে ৪০ শতাংশ চামড়া। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ট্যানার্স এ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক শাখাওয়াত উল্লাহ জানান, লবণের এই চড়া দাম অব্যাহত থাকলে কোরবানির প্রায় ৪০ শতাংশ চামড়া নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। যার বাজার মূল্য দাঁড়াবে প্রায় ৬০০ থেকে ৬৫০ কোটি টাকা। তিনি বলেন, ‘এই চামড়া যদি নষ্ট হয়ে যায়, তাহলে পুরো বছরের চাহিদা মেটাতে আমাদের কষ্ট হয়ে যাবে।’ কয়েকজন চামড়া ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলেও জানা গেছে, বিশ্ববাজারে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের অব্যাহত দরপতনের অজুহাতে এবারও কোরবানির চামড়ার দাম কমানোর চিন্তা করছেন ব্যবসায়ীরা। সে রকম হলে এই ক্ষতির পরিমাণ আরও বেশি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। গত বছর প্রতিটি ৭৪ কেজি লবণের বস্তার দাম ছিল ৬৫০ টাকা। কিন্তু এ বছর সেই লবণ বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৪০০ টাকায়। আড়ত মালিকরা জানান, তারা অপেক্ষায় রয়েছেন লবণের দাম কমে কি না এবং সরকারের পক্ষ থেকে কোন সহযোগিতা আসে কি না। লবণের সবচেয়ে বড় জোগান আসে কক্সবাজার থেকে। কিন্তু উৎপাদন কমে যাওয়ায় ঘাটতির কথা জানানো হয়েছিল সরকারকে। এরপর দেড় লাখ টন লবণ আমদানির অনুমতিও মিলেছে। কিন্তু এখনও সে প্রক্রিয়া শুরু হয়নি। কোরবানির মাসখানেক আগে লবণ কিনে মজুত রাখেন কিছু ব্যবসায়ী। কিন্তু এবার কোন আড়তেই প্রস্তুতি চোখে পড়েনি। এ বছর কোরবানিতে ৬০ লাখ পিস চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রার কথা জানিয়েছেন চামড়া ব্যবসায়ীরা। একটি গরুর চামড়ায় লবণের প্রয়োজন হয় গড়ে ১০ কেজি। আর ছাগলের ক্ষেত্রে লাগে আড়াই কেজির মতো।
×