ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

জুলাইতে বৈদেশিক সাহায্যের রেকর্ড প্রতিশ্রুতি

প্রকাশিত: ০৪:২৬, ৩০ আগস্ট ২০১৬

জুলাইতে বৈদেশিক সাহায্যের রেকর্ড প্রতিশ্রুতি

আনোয়ার রোজেন ॥ চলতি অর্থবছরের (২০১৬-১৭) জুলাই মাসে বৈদেশিক প্রতিশ্রুতিতে রেকর্ড হয়েছে। আগের সব রেকর্ড ভেঙ্গে জুলাইতে উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে প্রায় এক হাজার ১৬৮ কোটি মার্কিন ডলারের সহায়তা প্রতিশ্রুতি আদায় করেছে বাংলাদেশ। গত অর্থবছরের (২০১৫-১৬) একই সময়ে দাতারা চার কোটি ডলারের প্রতিশ্রুতি দেয়। এটি যে কোন একক মাস বিবেচনায় প্রতিশ্রুতির রেকর্ড। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপনে রাশিয়া প্রায় এক হাজার ১৩৮ কোটি মার্কিন ডলার দিতে রাজি হওয়ায় এমনটা হয়েছে। সোমবার অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। ইআরডি কর্মকর্তারা বলছেন, জঙ্গী হামলার আতঙ্কের মধ্যে অর্থবছরের শুরুতেই এত বড় প্রকল্পে প্রতিশ্রুতি আদায় সরকারের অর্থনৈতিক পরিকল্পনার ওপর বিদেশীদের আস্থার প্রতিফলন। তবে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, পুঞ্জীভূত প্রতিশ্রুতির আকার বেড়েই চলেছে। তাই শুধু প্রতিশ্রুতিতেই তুষ্ট হলে চলবে না, পাইপলাইন থেকে যথা সময়ে অর্থছাড় করে উৎপাদনশীল খাতে ব্যবহারের বিষয়টিও নিশ্চিত করতে হবে। ইআরডি সূত্র বলছে, চলতি অর্থবছরের জুলাই মাসে মোট প্রতিশ্রুতির মধ্যে ঋণের পরিমাণ এক হাজার ১৬৬ কোটি ৭০ লাখ মার্কিন ডলার। এর মধ্যে রাশিয়ার সঙ্গে পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ সংক্রান্ত চুক্তির আওতায় ঋণের পরিমাণই ১ হাজার ১৩৮ কোটি মার্কিন ডলার। তবে গত অর্থবছরের একই সময়ে প্রতিশ্রুত চার কোটি ডলারের সবটাই ছিল অনুদান। জুলাইয়ে রেকর্ড প্রতিশ্রুতির বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সাবেক মহাপরিচালক ও অর্থনীতিবিদ ড. মোস্তফা কে মুজেরি জনকণ্ঠকে বলেন, এটা বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রতি বিদেশীদের আস্থার প্রতিফলন। তবে পাইপলাইনে এর মধ্যেই প্রচুর পরিমাণ প্রতিশ্রুত অর্থ জমা হয়ে আছে। অর্থাৎ পুঞ্জীভূত প্রতিশ্রুতির আকারও বছর শেষে বেড়ে চলেছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী অর্থছাড় করতে না পারায় এমনটা হচ্ছে। রূপপুর প্রকল্পে রাশিয়ার দেয়া বিশাল অঙ্কের ঋণের সুদাসল প্রথম ১০ বছর পরিশোধ করতে হবে না (গ্রেস পিরিয়ড)। ঋণের কিস্তি পরিশোধ করা শুরু হবে ২০২৭ সালের মার্চ থেকে। এই সময়ের মধ্যে রাশিয়ার কাছ থেকে প্রতিশ্রুত অর্থের নির্দিষ্ট অংশের সবটুকু যাতে আদায় ও ব্যবহার করা যায়, সেক্ষেত্রে মনোযোগী হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন এই অর্থনীতিবিদ। এদিকে প্রতিশ্রুতিতে রেকর্ড হলেও চলতি অর্থবছরের জুলাই মাসে অর্থছাড় ও প্রতিশ্রুত অনুদানের পরিমাণ কমেছে। গত বছরের জুলাইয়ে দাতারা প্রায় সাড়ে ১৪ কোটি মার্কিন ডলার ছাড় করে, যা এ বছরের একই সময়ে কমে দাঁড়িয়েছে ১২ কোটি মার্কিন ডলার। ছাড় করা অর্থের মধ্যে চলতি বছরের জুলাইয়ে ঋণের পরিমাণ ১২ কোটি ডলার এবং অনুদানের পরিমাণ ১৫ লাখ মার্কিন ডলার। গত অর্থবছরের একই সময়ে ছাড় করা অর্থের মধ্যে ঋণ ছিল প্রায় ১৪ কোটি এবং অনুদান প্রায় ৪১ লাখ মার্কিন ডলার। কমেছে প্রতিশ্রুত অনুদানের পরিমাণ। গত অর্থবছরের জুলাই মাসে প্রতিশ্রুত অনুদানের পরিমাণ ছিল ৪ কোটি ১৫ লাখ মার্কিন ডলার, যা এ বছরের একই সময়ে কমে দাঁড়িয়েছে এক কোটি ২১ লাখ মার্কিন ডলারে। অন্যদিকে এবারের জুলাইতে সরকরকে ঋণও কম পরিশোধ করতে হয়েছে। চলতি অর্থবছরে জুলাই মাসে সরকার ঋণ পরিশোধ করেছে প্রায় সাত কোটি ডলার। এর মধ্যে আসলের পরিমাণ প্রায় সোয়া পাঁচ কোটি ডলার। আর সুদের পরিমাণ দেড় কোটি ডলার। গত অর্থবছরের একই সময়ে সরকার ঋণ পরিশোধ করেছিল প্রায় সাড়ে আট কোটি। এর মধ্যে আসলের পরিমাণ সাড়ে ছয় কোটি ডলার এবং সুদের পরিমাণ প্রায় দুই কোটি ডলার।
×