ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

জঙ্গী তামিম অধ্যায়ের সমাপ্তি

প্রকাশিত: ০৪:১৯, ৩০ আগস্ট ২০১৬

জঙ্গী তামিম অধ্যায়ের সমাপ্তি

নারায়ণগঞ্জের পাইকপাড়ায় জঙ্গী আস্তানায় পুলিশের অভিযানে তিন জঙ্গী নিহত হয়েছে। তাদের একজন তামিম চৌধুরী। সে আন্তর্জাতিক আইএস জঙ্গীদের কাছে বাংলাদেশ শাখার প্রধান শায়খ আবু ইব্রাহিম আল-হানিফ নামে পরিচিত। গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারি ও শোলাকিয়ায় হামলা ছাড়াও গত দু’বছর একের পর এক চোরাগোপ্তা খুনের ‘নাটের গুরু’ হিসেবে বার বার তার নামই উঠে এসেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তরফ থেকে। ধরিয়ে দেয়ার জন্য ২০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছিল। শনিবার নারায়ণগঞ্জের একটি বাড়িতে পুলিশী অভিযানে মারা যান সেই জঙ্গী তামিম আহমেদ চৌধুরী। গুলিতে তার দুই সহযোগীও মারা গেছে। তামিম ছিল জঙ্গী সংগঠন ‘নিউ জেএমবির সামরিক শাখার প্রধান। নারায়ণগঞ্জের ওই বাড়িটি জুলাই মাসে ওষুধ ব্যবসায়ী পরিচয়ে ভাড়া নেয় তামিম। তামিমের পরিবার সিলেটের বাসিন্দা। তার পুরো পরিবার পাকিস্তানপন্থী। তার নানা একাত্তর সালে স্থানীয় শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে পাকবাহিনীর পক্ষে কাজ করে। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরে তামিমের বাবা কানাডায় চলে যায়। সেখানে বড় হওয়া তামিম ২০১৩ সালের ৫ অক্টোবর ঢাকায় আসে জঙ্গীদের বিশেষ মিশন নিয়ে। এজন্য মুর্শিদাবাদ সীমান্ত দিয়ে সে একাধিকবার ভারতেও গিয়েছে বলেও জানা যায়। জেএমবির বসে যাওয়া ক্যাডারদের উজ্জীবিত করে সে নতুন সংগঠন গড়ে তোলে। ধনী পরিবারের তরুণদের সংগঠনে যুক্ত করে। নিহত অন্য দুই জঙ্গীর একজন ঢাকার অভিজাত এলাকা ধানম-ির এবং অন্যজন যশোরের। অভিযোগ রয়েছে তারা বিদেশের একটি দূতাবাস থেকে নিয়মিত অর্থ পেত। দেশের কিছু মহলও তাদের অর্থ জুগিয়েছে। কয়েকজন বিদেশী নাগরিক, পুরোহিত ও ধর্মগুরু খুনের পরে গুলশান ও শোলাকিয়ায় বড় ধরনের হামলার চক্রান্ত করে তামিম। গুলশানে বিদেশী হত্যার টার্গেট সফল হলেও শোলাকিয়ার হামলা রুখে দেয় পুলিশ। কল্যাণপুরে জঙ্গী আস্তানায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অপারেশন স্টর্ম-২৬-এর পর থেকে গা ঢাকা দেয় তামিম। শনিবার অপারেশন ‘হিট স্ট্রং টোয়েন্টি সেভেন’ পরিচালনার মাধ্যমে সমাপ্তি ঘটে তামিম অধ্যায়ের। সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ বর্তমান সময়ে সারাবিশ্বে একটি আলোচিত বিষয়। সমাজবিজ্ঞানের ভাষায় সন্ত্রাস হলো একটি পন্থা যার মাধ্যমে কোন সংগঠিত দল ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম চালানোর মাধ্যমে তাদের কাক্সিক্ষত লক্ষ্য অর্জনের চেষ্টা করে। সন্ত্রাস বা জঙ্গীবাদের কোন বর্ডার বা সীমানা নেই। উন্নত বা উন্নয়নশীল কোন দেশই এর ভয়ানক ক্ষতিকর প্রভাব থেকে মুক্ত নয়। একথা সত্য যে, জঙ্গীবাদের জঘন্য ধারা বাংলাদেশে উস্কে দিচ্ছে একাত্তরের পরাজিত শক্তি ও তাদের দোসররা। হীন রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করতে তাদের ব্যবহার করা হচ্ছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর জঙ্গীবাদ দমনে বিশেষ ভূমিকা নিয়েছে। সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ দমন সরকারের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দক্ষতা ও সাহসিকতার সঙ্গে জঙ্গীবাদ মোকাবেলা করছে। তারা জঙ্গীবাদ দমনে যেভাবে কাজ করছে তাতে অচিরেই জঙ্গীবাদ নির্মূল হয়ে যাবে বলে আশা করা যায়। তবে তার আগে জঙ্গীবাদকে ঘৃণা করা এবং জনসচেতনতা বাড়াতে হবে। জনগণ যদি সচেতন থাকে তাহলে জনগণই সন্ত্রাসী ও জঙ্গীদের ধরিয়ে দিতে সরকারকে সহায়তা করবে। কল্যাণপুর বা নারায়ণগঞ্জের মতো আগামী দিনেও জঙ্গী-সন্ত্রাস দমনে তারা কাজ করে যাবেÑ এই প্রত্যাশা সবার।
×